বিধ্বস্ত গাজায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামীদের নির্মূল করতে হামলা আরো জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। শনিবার রাতে এক টেলিভিশন ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি।
ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরাইলের অস্তিত্বের জন্য বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। ইসরাইলের দেওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব বৃহস্পতিবার স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করার পর নেতানিয়াহুর পক্ষ থেকে এ ঘোষণা আসে। নেতানিয়াহু বলেন, ইতোমধ্যে তিনি এ বিষয়ে সামরিক বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি হামাসের দাবির কাছে আত্মসমর্পণ করি, তাহলে যুদ্ধের সব অর্জন যা আমরা আমাদের সেনাদের দক্ষতায় এবং নিহত-আহতদের বিনিময়ে পেয়েছি, তা নস্যাৎ হয়ে যাবে।’
এদিকে রোববার গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে। ভোর থেকে স্থানীয় সময় বেলা ১১টা পর্যন্ত অন্তত ১৯ জন নিহতের খবর জানিয়েছে আলজাজিরা। দক্ষিণ গাজার রাফাহর আল-মাওয়াসিতে ইসরাইল ঘোষিত ‘নিরাপদ অঞ্চলে’ হামলায় একজন নিহত হয়েছেন।
রোববার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের নিয়মিত বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় ৪৪ জন নিহত ও ১৪৫ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে ১৮ মাসের আগ্রাসনে মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ২০১ ও আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ৮৬৯।
গাজায় আগ্রাসনের মধ্যেই অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনা ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা। রোববার স্থানীয়দের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, পশ্চিম তীরের হেবরনের কাছে খারবাত আররাকিজ গ্রামে ফিলিস্তিনিদের ভূমি লক্ষ্য করে তাণ্ডব চালিয়েছে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা।
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানায়, জেরুসালেমের শেখ জাররাহ মহল্লায় ফিলিস্তিনিদের বহনকারী একটি বাসে পাথর ছুড়ে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা।
এ ছাড়া জেরুসালেমের মসজিদুল আকসায় রোববার প্রবেশ করে তাণ্ডব চালিয়েছে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীরা। তারা মসজিদের অভ্যন্তরে দাঁড়িয়ে ধর্মীয় উপাসনাও করে।
ইসরাইলি আগ্রাসনের মধ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কাতার, মিসর ও আমেরিকা। তবে যুদ্ধবিরতি আলোচনার ধীর অগ্রগতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন কাতারের মধ্যস্থতাকারী দলের প্রধান মুহাম্মদ আল-খুলাইফি।
শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপির কাছে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়ার ধীরগতিতে আমরা নিশ্চিতভাবেই হতাশ। এটি জরুরি এক বিষয়। সামরিক অভিযানে প্রতিদিনের জীবনের হিসাব এর সঙ্গে যুক্ত।’
এদিকে হামাস-গাজায় আটক থাকা এক ইসরাইলি জিম্মির ভিডিও প্রকাশ করেছে। শনিবার প্রকাশিত ওই ভিডিওতে দেখা যায়, এলকানা বহবত নামের ওই জিম্মি নকল ফোনে স্ত্রীকে বলেন, তার মুক্তির জন্য যেন সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে এক খোলা চিঠিতে ইতোমধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার ইসরাইলি স্বাক্ষর করেছে জানায় আলজাজিরা। সাবেক ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক ও সামরিক বাহিনীর সাবেক প্রধান ড্যান হালুৎজও এতে স্বাক্ষর করেন।