ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ আশঙ্কা করছেন, এই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে কাশ্মীর ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ হতে পারে।
ভারতীয় পুলিশের মতে, মঙ্গলবার পহেলগামে বন্দুকধারীদের গুলিতে অন্তত ২৬ জন পর্যটক নিহত এবং আরও ১৩ জন আহত হয়েছেন।
হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, একজন পর্যটক তার প্রিয়জনের লাশের পাশে বসে আছেন। নিহত ও আহতদের ফুটেজ ছাড়াও স্থানীয় কাশ্মীরিদের পর্যটকদের রক্ষা করার চেষ্টার ভিডিওও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
আরেক ভিডিওতে দেখা যায়, এক কাশ্মীরি ব্যক্তি হামলার সময় একটি শিশুকে পিঠে বহন করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন।
এই হামলা আন্তর্জাতিকভাবে প্রচুর গণমাধ্যম কভারেজ এবং নেতাদের মনোযোগ পাচ্ছে। একই সঙ্গে অনেকেই অনলাইনে ভারত কর্তৃক কাশ্মীর দখলের দীর্ঘ ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন, যা এই পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে বলে মনে করছেন।
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের পর থেকেই এই পার্বত্য অঞ্চলটি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। ভারত এটিকে তার সার্বভৌমত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে দাবি করে, আর পাকিস্তান গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার চায়। উভয় দেশই একে অপরকে দখলদার হিসেবে অভিযুক্ত করে।
এই হামলার পর ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক হ্রাস করেছে এবং পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে। তবে, হামলাকারীদের সঙ্গে পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
হামলার প্রতিক্রিয়ায় কিছু পোস্টে কাশ্মীরে ইসরাইলের মতো সমাধানের আহ্বান জানানো হচ্ছে। অনেককে ইসরায়েল-ভারতের মধ্যে তুলনা টানতে বাধ্য করেছে। গাজায় ৭ অক্টোবর হামলার পর যেভাবে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, তেমনই কিছু প্রতিক্রিয়া পহেলগামের হামলাতেও দেখা যাচ্ছে।
একজন প্রভাবশালী ভারতীয় টেলিভিশন উপস্থাপকের পক্ষ থেকে সহিংস ‘সমাধানের’ আহ্বানের কারণে অনেককেই ইসরাইল ও ভারতের কৌশলের মধ্যে মিল খুঁজে পাচ্ছেন। অর্ণব গোস্বামী বলেন, একটি চূড়ান্ত সমাধান দরকার। যখন গণহত্যামূলক ভাষা প্রাইমটাইমের কথোপকথনের অংশ হয়, তখন তা শুধু উসকানি নয়—তা হয়ে দাঁড়ায় গণহিংসার অবকাঠামো।
এক কাশ্মীরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেছেন, ইসরাইলের কৌশল এখন বিশ্বের প্রতিটি ফ্যাসিস্ট দখলদারের আদর্শ হয়ে উঠেছে। আমি খুবই ভীত, সামনে কী হতে চলেছে।
আরেকজন লেখক সুচিত্রা বিজয়ন লিখেছেন, কাশ্মীরে ‘ইসরাইলি সমাধান’-এর ডাক জোরালো হচ্ছে। টক শো হোস্টরা প্রতিশোধ দাবি করছেন।
সাংবাদিক আজাদ এসা অভিযোগ করেন, হামলার খবরের কাভারেজে ইতিহাসের প্রেক্ষাপট উপেক্ষা করা হচ্ছে। তিনি লেখেন, মিডিয়া ও রাজনৈতিক মহলের কাছে এখন কাশ্মীরের ইতিহাস শুরু হবে ২২ এপ্রিল থেকে।
এক্স-এ একজন পোস্ট করেছেন, এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালের একটি ক্লিপ, যেখানে দেখা যায়, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে উদ্দেশ করে নিহতদের পরিবারের জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নগুলো সম্প্রচারে নিঃশব্দ করে দেওয়া হয়েছে।
অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন এই হামলার ‘প্রতিশোধ’ হিসেবে কাশ্মীরিদের ওপর হামলা হতে পারে।
সাংবাদিক আহমের খান এক্সে লেখেন, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে অধ্যয়নরত কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উদ্বেগজনক ফোন এসেছে। তাদের বাড়িওয়ালারা ‘নিরাপত্তার জন্য’ বাসা ছাড়তে বলেছে। কেউ কেউ এরই মধ্যে চাপের মুখে স্থানত্যাগ করেছে।”
অন্য একজন লেখেছেন, কাশ্মীরি শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের কথা ভাবতে হবে, তাদের এই সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে কোনো যোগ নেই, তবুও এখন তাদেরই টার্গেট করা হচ্ছে।