নতুন ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে ভারতজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় চলছে বিক্ষোভ। এবার উত্তেজনা বীরভূমের মুরারইতে। বুধবার সেখানে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ সমাবেশ করে তৃণমূল।
বিক্ষোভে দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে স্লোগান, ‘স্যালাইন এমপি-কে মানি না, মানব না।’ তৃণমূল কর্মীরা সাংসদের নাম নেননি। তবে অনুমান করা হচ্ছে, বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়ের উদ্দেশেই এই স্লোগান। ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশের দিন (৩ এপ্রিল) সংসদে উপস্থিত ছিলেন না সাংসদ। পরে নিজের অনুপস্থিতির কারণ জানিয়ে শতাব্দী দাবি করেছিলেন, তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। স্যালাইন চলছিল। তাই তিনি সংসদে যেতে পারেননি।
শতাব্দীর ব্যাখ্যায় খুশি হতে পারেননি তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। সেই সময় এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ ঝাড়ছেন অনেকে। এবার সেই ক্ষোভ নেমে এসেছে রাস্তায়। মুরারই এলাকা থেকেই সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হন শতাব্দী। ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে রাজ্য জুড়েই পথে নেমেছে সংখ্যালঘু সমাজের একাংশ।
মঙ্গলবার জঙ্গিপুরে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। অবরোধ সময় রাস্তা তাদের সরাতে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে।পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। জারি হয়েছে ১৬৩ ধারা (পুরোনো ১৪৪ ধারা)। বন্ধ করা হয়েছে ইন্টারনেট। যদিও বুধবার মহাবীর জয়ন্তী উপলক্ষে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম থেকে সংখ্যালঘুদের উদ্দেশ্যে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আপনারা কষ্ট পেয়েছেন। তবে চিন্তা করবেন না, দিদি রয়েছে। দিদি আপনাদের সম্পত্তি রক্ষা করবে। বাংলায় এমন কিছু হবে না যার জন্য বিভাজন সৃষ্টি হতে পারে।’
মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের ওমরপুর সংলগ্ন ১২ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে নয়া ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। পুলিশ এসে অবরোধ তোলার চেষ্টা করতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জের অভিযোগ করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে পুলিশ। পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় রঘুনাথগঞ্জ ও সুতিতে ৪৮ ঘণ্টার জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এ ঘটনার খবর পাওয়ার পর স্থানীয় বিধায়ক জাকির হোসেনকে ফোন করে পরিস্থিতির খবর নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
ওয়াকফ আইন বিরোধী প্রতিবাদে পুলিশের লাঠি চার্জে ২৫ জন সমর্থক গুরুতর আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের দুটো গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ হয় বলে প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আইন-শৃঙ্খলার স্বার্থে ওমরপুর থেকে জঙ্গিপুর শহর এলাকা সর্বত্র নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। রঘুনাথগঞ্জ, সুতিতে ১৪৪ জারি করা হয়েছে। এদিকে পুলিশ-বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে পরিস্থিতি তপ্ত হয়ে উঠলে ফুলতলা, দরবেশপাড়া প্রভৃতি এলাকায় ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে দেন।
উল্লেখ্য, সংসদে ওয়াকফ বিল পাস হওয়ার পর থেকেই মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ, ফরাক্কা, সুতি, রঘুনাথগঞ্জে সর্বত্র লাগাতার প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলছে। বুধবার বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে ওমরপুরের কাছে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। এদিন বিকেলে ফরাক্কা ও রঘুনাথগঞ্জ থানা এলাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ জড়ো হয় ওমরপুরে। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। ফলে বহরমপুর থেকে ফরাক্কামুখী রাস্তায় যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। তারা বিক্ষোভকারীদের রাস্তা অবরোধ তুলতে বললে দুপক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। পালটা বিক্ষোভকারীরাও ইট-পাটকেল ছুড়ে। পুলিশের লাঠিচার্জে বিক্ষোভকারীদের কয়েকজন আহত হওয়ার পাশাপাশি কয়েকজন পুলিশকর্মীও ইটের আঘাতে আহত হন। খণ্ডযুদ্ধের মধ্যেই একদল জনতা পুলিশের দুটো গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফুলতলা মোড়ের কাছেও একটা সাইনবোর্ডে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। দমকল বাহিনী এসে আগুন নেভায়।