প্রশাসক নিয়োগের মধ্য দিয়ে মুদ্রণশিল্প সমিতি থেকে বিতাড়িত হলেও সরকারের বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে সেই আওয়ামী সিন্ডিকেট। এরই মধ্যে টেন্ডার হওয়া এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার কাজের মধ্যে মাত্র চারটি প্রতিষ্ঠান ৩৫ শতাংশ কাজ পেয়েছে বলে জানা গেছে।
বাকি কাজেরও নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চক্রান্ত করছে ওই সিন্ডিকেট। এতে যেমন দীর্ঘদিনের বঞ্চিত প্রেস মালিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি সক্ষমতার চেয়ে বেশি কাজ নেওয়ায় যথাসময়ে বই ছাপা শেষ করা নিয়েও রয়েছে শঙ্কা।
এ বিষয়ে সরকার ও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বই ছাপার কাজে আওয়ামী সিন্ডিকেট মুক্ত করার বিষয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃপক্ষ।
এদিকে প্রশাসক নিয়োগের সরকারি সিদ্ধান্তের পরদিন গতকাল সোমবার মুদ্রণশিল্প সমিতির কার্যালয়ে তালা দিয়ে সরে পড়েছেন ফ্যাসিবাদের দোসর নেতারা। সেখানে অফিস সহকারীসহ কাউকেই পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া নতুন নিয়োগ পাওয়া প্রশাসক এখনো যোগ দেননি। অফিসিয়াল নির্দেশনার পর সময়মতো যোগদান করার কথা জানিয়েছেন মুদ্রণশিল্প সমিতির প্রশাসক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সন্দ্বীপ কুমার সরকার। রোববার তাকে প্রশাসক নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, মুদ্রণশিল্প ও বিনা মূল্যের বই ছাপার কাজে আওয়ামী সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক ডাক ও টেলিযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের ছোট ভাই আনন্দ প্রিন্টার্সের স্বত্বাধিকারী রাব্বানি জব্বার ও অগ্রণী প্রিন্টার্সের স্বত্বাধিকারী কাউসার-উজ-জামান (রুবেল)। তারা দুজন বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের সময়ে ক্ষমতার দাপটে তারা সমিতির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন বলে সদস্যদের অভিযোগ।
চলতি বছর বিনা মূল্যের পাঠ্যবই ছাপায় বিলম্ব করে সরকারে বিপাকে ফেলাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে অনিয়মে অভিযুক্ত এই সিন্ডিকেটে থাকা ৩৬টি প্রেস মালিকের বিষয়ে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাই আওয়ামী এ সিন্ডিকেট যাতে আগামী বছর বই ছাপার কাজের নিয়ন্ত্রণ না নিতে পারে, সেই দাবি সাধারণ প্রেস মালিকদের।
মুদ্রণশিল্প সমিতির অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে প্রশাসক নিয়োগের আবেদনকারী সমিতির সদস্য ও রিমিনি ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলী আমার দেশকে বলেন, বই ছাপার কাজে অলরেডি টেন্ডারে সিন্ডিকেট করে ফেলেছে ওই চক্র। এখন এনসিটিবি বা মন্ত্রণালয় এসব বাতিল না করলে আমরা কি করব। প্রশাসক নিয়োগের পর সব অনিয়মের বিষয় আমরা তুলে ধরব।
এ বিষয়ে সিন্ডিকেটে অভিযুক্ত আনন্দ প্রিন্টার্সের স্বত্বাধিকারী ও মুদ্রণশিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি রাব্বানি জব্বারের মোবাইলে যোগাযোগ করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। আর সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুবেল মোবাইল রিসিভ করেননি।
এনসিটিবির সচিব অধ্যাপক সাহতাব উদ্দিন বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কারা কাজ পাবে-না পাবেÑতা সংশ্লিষ্ট কমিটি জানে। তবে অনিয়মে অভিযুক্ত আওয়ামী সিন্ডিকেটের বিষয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সূত্রমতে, আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকে প্রায় ৯ কোটি ও মাধ্যমিকে প্রায় ২১ কোটি বই ছাপানো হবে। এজন্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে মাধ্যমিকের বই ছাপাতে প্রায় এক হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা ও প্রাথমিকের জন্য প্রায় ৪২৩ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার দরপত্র সম্পন্ন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির দরপত্র উন্মুক্ত করার কথা রয়েছে।