মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে মুল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে, যার প্রধান কারণ খাদ্যের দাম হ্রাস। মার্চের মতোই, খাদ্যের দাম, বিশেষ করে চাল এবং মাছের দাম, এপ্রিল মাসে মুল্যস্ফীতির সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে রয়ে গেছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। তবে এ মাসে দেশে চালের ঘাটতি বেড়েছে বলে উঠে এসেছে জিইডির প্রকাশিত প্রতিবেদনে।
শনিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মে মাসের অর্থনৈতিক আউটলুকে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
জিইডির মে মাসের তথ্যে বলা হয়েছে, খাদ্যের দাম বৃদ্ধির মধ্যে খাদ্য সরবরাহের ধাক্কার প্রভাব কমাতে, খাদ্য, চালের পর্যাপ্ত কৌশলগত বাফার স্টক বজায় রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।
এতে বলা হয়, আমানত এবং বেসরকারি খাতের ঋণ এপ্রিল মাসে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং বিনিয়োগের ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধারের পথ নির্দেশ করে। ধীর রাজস্ব সংগ্রহ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি ঋণ বন্ধ থাকার কারণে সাম্প্রতিক কয়েক মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারি খাতের ঋণের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বেসরকারি খাতের ঋণ কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। রাজস্ব বৃদ্ধি এবং সরকারের ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টা আর্থিক স্থায়িত্ব এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে জিইডি।
এপ্রিলে মার্চ মাসের মতোই, খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণ হিসেবে রয়ে গেছে, যা ৪২.২ শতাংশ। এপ্রিল মাসে এর প্রভাব সামান্য কমায় মূল্যস্ফীতিও কমেছে। খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতির অংশ হিসেবে, এপ্রিল মাসে গৃহায়ন ও ইউটিলিটি খাতের প্রভাব (১৩ শতাংশ), পোশাক ও জুতা (৯.৮ শতাংশ) এবং পরিবহন (৭ শতাংশ) প্রধান প্রভাবক ছিল।
এপ্রিলে চালের ঘাটতি বেড়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়. খাদ্যের নির্দিষ্ট শ্রেণীর ক্ষেত্রে, মার্চ মাসে চালের প্রভাব ছিল ৩৪ শতাংশ, কিন্তু এপ্রিলে তা বেড়ে ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এটি মূলত বাজারে চালের সরবরাহের ঘাটতি নির্দেশ করে। এপ্রিল মাসে সবজির দাম (১১.৪৫ শতাংশ) কম ছিল। একই সময়ে এপ্রিল মাসে সব ধরনের চালের (১৯.৪ শতাংশ) মধ্যে মাঝারি চালের দাম সবচেয়ে বেশি ছিল। বেগুনের দাম মার্চে (১৭.১২ শতাংশ) শীর্ষে ছিল, প্রত্যাশা অনুযায়ী এ সবজির দাম কমে তৃতীয় স্থানে (১১ শতাংশ) নেমে এসেছে।
এপ্রিল মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতির ক্ষেত্রে সয়াবিন তেলের প্রভাবও উল্লেখযোগ্য (৮.২ শতাংশ)। আলুর দাম কমে সামগ্রিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমতে সাহায্য করেছে, যার অংশ -১৩.৬ শতাংশ। গ্রামীণ ও নগর অঞ্চলের তুলনা বিবেচনা করলে, মূল্যস্ফীতিতে গ্রামীণ এলাকা (৪৪.৭ শতাংশ) এবং শহর অঞ্চল (৩৬.৫ শতাংশ) এর মধ্যে খাদ্যের অবদানের ক্ষেত্রে একটি ‘লক্ষণীয় পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।
জিইডি বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে কঠোর মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে, যার লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং বৈদেশিক মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল করা। এছাড়াও, চাল এবং ভোজ্যতেলের মতো প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের উপর শুল্ক হ্রাসের মতো রাজস্ব নীতিগত পদক্ষেপগুলোও মূল্যস্ফীতির এই পতনে অবদান রেখেছে। বন্যা এবং অন্যান্য জলবায়ুগত ঘটনা না ঘটার কারণে মৌসুমি শাকসবজি এবং ফসলের প্রাপ্যতা সরবরাহের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াকে সহজতর করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রত্যাশা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন মাসের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এই ধরনের প্রচেষ্টা অপরিহার্য বলে মত দেওয়া হয় মে মাসের এ আউটলুকে।