মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ১১:২৪ অপরাহ্ন

ডাকসু নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, আগামী সপ্তাহে কমিশন গঠন

  • সময়: মঙ্গলবার, ৬ মে, ২০২৫, ৯.২৮ এএম
  • ৬ জন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের দিকেই হাঁটছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নির্বাচনকে ঘিরে নির্ধারিত টাইমলাইন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রশাসনিক ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর কিছু কিছু চাহিদা ও প্রত্যাশার ভিন্নতা রয়েছে। সংগঠনভিত্তিক কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও মূল আকাঙ্ক্ষার জায়গায় রয়েছে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। এ বিষয়ে ছাত্রসংগঠনগুলো বেশ ইতিবাচক।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে চলতি সপ্তাহের শেষে বা আগামী সপ্তাহের শুরুতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। পরে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করবে কমিশন। তবে নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে আইনি নানা ধাপ ও প্রক্রিয়া পার করতে হচ্ছে প্রশাসনকে। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, সেসব ধাপ টাইমলাইনের সঙ্গে সংগতি রেখে পর্যায়ক্রমে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

গত ১৫ এপ্রিল ডাকসুর টাইমলাইন ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সেখানে মে মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা উল্লেখ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বর্তমানে সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ডাকসুর বিধিমালা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনে একজন চিফ রিটার্নিং অফিসার ও পাঁচজন রিটার্নিং অফিসার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। আগে ডাকসু নির্বাচনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যারা মোটামুটিভাবে সম্পৃক্ত এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে ডাকসুর মূল স্পিরিটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারবেন- এমন ব্যক্তিরা এগিয়ে থাকবেন এবং তাদেরই খুঁজছে প্রশাসন।

এ বিষয়ে ডাকসু নির্বাচনের পরামর্শদান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আমরা কাজ করছি। এ সপ্তাহের শেষে না হলে আগামী সপ্তাহের শুরুতে কমিশন ঘোষণা করা হবে। এতে রিটার্নিং অফিসার পদে দু-একজন কম-বেশি হতে পারেন।

কমিশন গঠন করে দ্রুত কাজ এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব গুছিয়ে ফেলব। নির্বাচন কমিশনও আগামী সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে ডাকসু নির্বাচনের যাত্রা শুরু হবে।

বিগত দেড় দশকে যারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদের সহযোগী ছিল, তারা এখন স্বপদে বহাল রয়েছে। তাদের অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত না করে নির্বাচন দেওয়া হলে অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে এবং ছাত্রলীগ পুনর্বাসন হতে পারে- এমন আশঙ্কা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের। তাই ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কার ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান ছাত্রদল ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন।

শিপন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেসব শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী বিগত দিনে ফ্যাসিবাদের হয়ে কাজ করেছেন, তারা এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন। তাদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে ডাকসু নির্বাচনে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। তাই এদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা ও কার্যকর সংস্কারের মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচন চাই।

শিপন আরো বলেন, ডাকসুর বর্তমান গঠনতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মনোভাবকে প্রতিনিধিত্ব করে না। সেটার সংস্কার জরুরি। আমরা এমন একটা নির্বাচন চাই, যেখানে কারো জন্য সুবিধাজনক অবস্থা থাকবে না। সবার জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ থাকবে।

এদিকে ঈদুল আজহার আগেই ডাকসু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছিল বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। নির্বাচন কমিশন ও তফসিল ঘোষণা হলে নির্বাচনি মাঠে নামবে তারা। এ বিষয়ে সংগঠনটির ঢাবি শাখার সভাপতি এসএম ফরহাদ বলেন, ‘আমরা চাই ডাকসুতে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সমস্যা ও সংস্কার শেষে নির্বাচন হবে- এই ভাবনা অসম্ভব এক বিষয়। বর্তমানে ডাকসু হওয়া মানেও বড় একটা সংস্কার। আসন্ন নির্বাচনে বেশ প্রতিযোগিতা হবে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।

দ্রুত তফসিল ঘোষণা করে ঈদুল আজহার আগে ডাকসু নির্বাচন চায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)। এ বিষয়ে সংগঠনটির ঢাবি শাখার মুখ্য সংগঠক হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘ডাকসুর টাইমলাইনে নির্বাচনের কোনো দিন-তারিখ ছিল না। আমরা মনে করি এতে কারো দুরভিসন্ধি রয়েছে। এটা আমাদের বেশ হতাশ করেছে। আমরা চাই ঈদুল আজহার আগেই নির্বাচন হোক।

এদিকে নির্বাচনে সব সংগঠনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে সমান সুযোগ চায় বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলো। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই ডাকসুর জন্য আন্দোলন করছি। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে নির্বাচন দেওয়ার বাস্তব পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ২০১৯ সালের মতো বিতর্কিত নির্বাচন চাই না। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে আমরা।

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ বলেন, ডাকসু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে সত্যিকার অর্থেই কাজ করছে, যাতে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ জন্য আমাদের প্রস্তুতি চলমান। নির্বাচনের দিন-তারিখ কবে হতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা নিয়ে বিভিন্ন কমিটি কাজ করছে। এসব কমিটির সবাই মিলে যখন নির্বাচনের বিষয়ে একমত হবে, ঠিক তখনই নির্বাচন দেওয়া হবে।

এর আগে ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গত ২৪ ডিসেম্বর আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকরামুল হককে আহ্বায়ক করে ডাকসু গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি, ১৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদকে আহ্বায়ক করে নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধন কমিটি এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশাকে আহ্বায়ক করে ডাকসু নির্বাচনের পরামর্শদান কমিটি গঠন করে। এই তিন কমিটি বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গত ২৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় পেশ করেছে। এরপর বিভিন্ন সংশোধনের মাধ্যমে প্রতিবেদনগুলো সিন্ডিকেটে পাস হয়।

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান আমার দেশকে বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠন হলে তার পরবর্তী ১১টি ধাপ সম্পন্ন করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বিষয়ে প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। আবাসিক হলগুলোতে নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে নির্দেশনা ইতোমধ্যেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com