মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৯ পূর্বাহ্ন

নতুন চাল বাজারে, দামও নিম্নমুখী মাছ সবজি ডিমের দাম চড়া

  • সময়: সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ১০.৫৮ এএম
  • ১৫ জন

চালের মূল্য কয়েক দফা বৃদ্ধির পর বাজারে এসেছে নতুন চাল। দামও কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এখনো নতুন চালের সরবরাহ খুবই কম। সপ্তাহখানেকের মধ্যে নতুন চালের সরবরাহ বাড়বে। তখন দাম আরো কিছুটা কমতে পারে।

তবে পুরোনো চাল আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। এদিকে সব ধরনের সবজি ও মাছের দাম বেড়েছে। মুরগির দাম কিছুটা কম হলেও ডিমের দাম বেড়েছে ডজনে ৫ টাকা হারে।

বর্তমানে সীমিত আকারে বাজারে আসা বিআর-২৮ জাতের নতুন চাল বাজারে ৫০ কেজির বস্তা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২৬০০ থেকে ২৬৫০ টাকায়। সে হিসেবে প্রতি কেজি পাইকারি ৫৩ টাকা আর খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকায়। আর পুরাতন ২৮ জাতের চালের দাম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ১০০ টাকায়, খুচরায় প্রতি কেজি ৬৪ থেকে ৬৬ টাকায়। আর রশিদ কোম্পানির নতুন মিনিকেট চালের পাইকারি ৫০ কেজির বস্তা ৩৫০০ টাকা, পুরাতন চাল ৩৭০০ টাকা। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বৈশাখের পুরাতন চাল বাজারে সরবরাহ নেই বললেই চলে। এখন যা বিক্রি হচ্ছে, তা অগ্রহায়ণের চাল। ফলে এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন চাল বাজার দখল করে নিতে পারে।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্যমতে, বাজারে গত এক বছরে সরু চালের দর বেড়েছে সাড়ে ১৪ শতাংশ। মাঝারি চালের প্রায় ৯ এবং মোটা চালের ৫ শতাংশ দর বেড়েছে। যদিও গত এক মাসে দাম বাড়ার এই হার কিছুটা কম। এরই মধ্যে বাজারে নতুন চাল আসায় কিছুটা দাম কমতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ভোগ্যপণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নাবিল গ্রুপের এমডি আমিনুল ইসলাম স্বপন বলেন, নতুন জাতের চাল খুবই সীমিত আকারে বাজারে এসেছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে নতুন জাতের চাল বাজারে সরবরাহ বাড়বে, তখন দাম কিছুটা কমতে পারে। তবে চালের দাম কেমন কমতে পারেÑ এখনই বলা মুশকিল। কেননা, বিগত বছরের চেয়ে কেজিতে ৪ টাকা বেশি দামে ধান-চাল ক্রয় করছে সরকার। সরকারের বেশি দামে কেনার কারণে বাজারে চালের দাম কিছুটা বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।

নাবিল গ্রুপের এমডি আরো বলেন, পরিস্থিতির আলোকে বলা যায় এবার নতুন চাল বাজারে এলেও দামে তেমন একটা হেরফের হবে না। কেজিতে ২-৩ টাকা কমতে পারে। সেটাও স্থায়ী হবে কি না বলা মুশকিল।

চালের পাইকারি বাজার বাবুবাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৮ ছাড়া এখনো বাজারে নতুন চাল আসেনি। ইসলাম রাইস এজেন্সির আমজাদ হোসেন বলেন, চাল ব্যবসা এখন আর প্রকৃত চাল ব্যবসায়ীদের হাতে নেই। সব নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে করপোরেট হাউসগুলোর হাতে। ফলে চালের বাজার অস্থির। এরপরও নতুন চাল বাজারে এলে কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা কমতে পারে বলে তিনি মনে করেন।

নয়াবাজার, বাবুবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে সরু বা মিনিকেট চালের দাম সর্বোচ্চ দরের রেকর্ড ছুঁয়েছে। ভালো মানের (মোজাম্মেল ব্র্যান্ডের) চালের কেজি এখন সর্বোচ্চ ৯০ টাকা। বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মোটা ও মাঝারি মানের চালও। খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি গুটি স্বর্ণা বা মোটা চাল ৫৩ থেকে ৫৫ এবং পাইজাম চাল ৫৬ থেকে ৫৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগে এসব চাল অন্তত ২ টাকা কমে বিক্রি হয়েছে। বিআর-২৮ জাত বা মাঝারি চালের কেজি মাসখানেকের ব্যবধানে প্রায় ৩ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৪ থেকে ৬৬ টাকায়।

আবার ভালো মানের বিআর-২৮ জাতের চিকন চাল ব্যবসায়ীরা মিনিকেট বলেও বিক্রি করছেন ৭০ থেকে ৭২ টাকায়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সরু চালের দাম। ৮০ টাকার নিচে এখন সরু চাল মিলছে না। মানভেদে সরু জাতের চাল কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে কেজিতে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। মাসখানেক আগেও সরু জাতের চালের কেজি ছিল ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা।

এদিকে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। বেশিরভাগ সবজির দামই ৮০ টাকার ওপরে। পাশাপাশি দাম বেড়েছে পেঁয়াজ ও মুরগির ডিমের। মাছের বাজারও চড়া। সব ধরনের মাছ কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে। তবে এর মধ্যে চিংড়ি ও ইলিশের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ৬৫০ টাকার চিংড়ি এখন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর কেজিপ্রতি ২ হাজার ৮০০ টাকার ইলিশ এখন ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে গতকাল নয়াবাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি পটোল, বরবটি, চিচিঙ্গা, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা করে, আর কাঁকরোল ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শসা, করলা, ঝিঙে, ধুন্দুল, ঢেঁড়স ও পেঁপের কেজি এখন ৬০ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে। টমেটো ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সব ধরনের শাকের দামও বেড়েছে। পুঁইশাক ২০ থেকে ২৫, লালশাক ১৫ থেকে ২০ টাকা আঁটি বিক্রি হচ্ছে। রমজানের আগে-পরে এসব সবজির দাম অনেক কম ছিল।

কারওয়ান বাজারের আড়তদার বাবুল মিয়া বলেন, শীতের সবজি শেষ হয়ে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহ কম। ফলে এখন যেসব সবজি বাজারে আসছে, তার দাম অনেক বেশি। এ অবস্থা আরো কিছুদিন থাকতে পারে।

বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম এক মাসের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ টাকা বাড়লেও সপ্তাহের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম কমেছে ৩ থেকে ৫ টাকা। গতকাল শনিবার খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায়। যদিও রাজধানীর অভিজাত এলাকার বাজার ও পাড়া–মহল্লায় এ দাম আরো কিছুটা বেশি। এ ছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকা।

কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী রাসেল মিয়া বলেন, পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম ৩ থেকে ৫ টাকা কমেছে। ফরিদপুর এলাকার পেঁয়াজের দাম ৪৮ টাকা এবং পাবনাসহ অন্যান্য এলাকায় পেঁয়াজ ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রোববার থেকে আরো ২ থেকে ৩টাকা কমতে পারে। তবে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে কমলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব খুবই কম। ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন।

সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির ডিমের (লাল) দাম ডজনে ৫ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে এক ডজন ডিম বিক্রি হয় ১২০ টাকায়, যা বর্তমানে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কিছুটা কমেই বিক্রি হচ্ছে। গতকাল এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com