বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে জার্মানির মার্সিডিজ বেঞ্জ, জাপানের মিতসুবিশিসহ বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের গাড়ি। দেশের মাটিতে উৎপাদিত গাড়ি বাজারে আসবে জুন মাসেই। আমদানি করা রিকন্ডিশন গাড়ির তুলনায় এসব নতুন গাড়ির দামও হবে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কম। গাজীপুর অবস্থিত র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এ গাড়িগুলো উৎপাদন করছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে উন্নত অটোমোটিভ অ্যাসেম্বলি ফ্যাসিলিটি নিয়ে কোম্পানিটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মডেলকে অ্যাসেম্বল করছে। এর মধ্যে রয়েছে জাপানের ব্র্যান্ড মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার, মালয়েশিয়াভিত্তিক প্রোটন এক্স৭০, জার্মানভিত্তিক মার্সিডিজ ওএফ১৬২৩ ও চীনের জ্যাক ডি৮৭০১। শুধু এ মডেলগুলোই নয় এ কোম্পানির পাইপলাইনে রয়েছে, প্রোটন এক্স৯০, জিএসি টি৮, সিএসি টি৯ এবং কয়েকটি এমজি গাড়ির মতো বেশকিছু আকর্ষণীয় মডেল।
গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর কাশিমপুরে র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ৫৭ একর জায়গায় অবস্থিত র্যানকনের শিল্পপার্কে তিনটি পৃথক উৎপাদন ও সংযোজন কারখানা রয়েছে। র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ ছাড়াও র্যানকন গ্রুপের আরো দুটি কোম্পানি সুজুকি মোটরসাইকেল এবং তোশিবা, এলজি ও স্যামসাং ব্র্যান্ডের ইলেক্ট্রনিক পণ্য উৎপাদন করছে।
এসব গাড়ি সফলভাবে বাজারে এলে র্যানকন প্রতি বছর দুই থেকে আড়াই হাজার গাড়ি উৎপাদনে সক্ষম বলে জানিয়েছেন র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. বদিউজ্জামান। আমার দেশকে তিনি বলেন, ‘আমাদের টেস্টিং ফ্যাসিলিটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা গ্লোবাল বেঞ্চমার্কের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এখানে রয়েছে থ্রিডি হুইল অ্যালাইনমেন্ট মেশিন, ব্রেক ফোর্স ও এবিএস টেস্টার, এভিএম ও এডিএএস ক্যালিব্রেটর, হুইল ব্যালেন্সিং মেশিন, ইমিশন টেস্টার, এমনকি একটি ইন-হাউস টেস্ট ট্র্যাক।’
জুনের মধ্যেই বাজারে আসবে র্যানকনে উৎপাদিত গাড়ি মিতসুবিশি এক্সপ্যান্ডার। তবে এসব গাড়ির দাম এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। সাত সিটের সিবিইউ (সম্পূর্ণ রূপে বিদেশে নির্মিত) এ প্যাসেঞ্জার গাড়ির দাম আমদানিকৃত গাড়ির তুলনায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কম হবে বলেও জানান এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। গাড়ির মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে জানতে চাইলে বদিউজ্জামান বলেন, ‘গাড়ির দাম এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে দাম নির্ধারণ নিয়ে আমাদের ফ্যাইন্যান্স টিম কাজ করছে। আগামী মে মাসের শুরুতে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অটোমোবাইল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে গাড়িটির দাম ঘোষণা করা হবে। তবে আমরা সিবিইউ গাড়ির চেয়ে কম দামে গাড়ি দিতে পারব বলে আশাবাদী।’
দেশে বর্তমানে নতুন কোনো সিবিইউ গাড়ি কিনতে গেলে ১২৭ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হয় সরকারকে। এতে গাড়ির দাম বেড়ে যায় মূল দরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। তবে দামের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কিছুটা স্বস্তি দিতে এগিয়ে আসছে র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ।
র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় দেখা গেছে, আমদানিকৃত মিতসুবিশি ও প্রোটন ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোর মূল কাঠামো ও গাড়ির বিভিন্ন অংশে রঙ করাসহ সেগুলো সংযোজনের কাজ করা হচ্ছে। বর্তমানে র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানাটিতে চারটি গাড়ি সংযোজন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি জাপানের মিতসুবিশি এক্সপেন্ডার ও মালয়েশিয়াভিত্তিক প্রোটন এক্স৭০। উৎপাদনের পথে আছে জার্মানভিত্তিক বাণিজ্যিক বাস মার্সিডিজ ওএফ১৬২৩ ও চীনভিত্তিক পিকআপ ট্রাক জ্যাক ডি৮৭০১। এছাড়া কারখানায় প্রোটন এক্স৯০, জিএসি টি৮, সিএসি টি৯ ও এমজিসহ বেশকিছু গাড়ি তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গাড়ির মূল কাঠামো আমদানি করে নিয়ে আসার পর আড়াই হাজার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতার এ কারখানায় গাড়ি তৈরি করা হয় অন্তত চারটি ধাপে। এগুলো হলো— পেইন্ট শপ, অ্যাসেম্বলি শপ, কোয়ালিটি কন্ট্রোল শপ ও ম্যাটেরিয়াল ওয়্যারহাউস। গাড়ি প্রস্তুতের পর দেশের সম্ভাব্য প্রায় ১৫ ধরনের সড়কের ওপর চালিয়ে গাড়ির সক্ষমতা যাচাই করা হয়। শিল্পপার্কের অভ্যন্তরেই তৈরি করা হয়েছে এসব কৃত্রিম সড়ক।
বদিউজ্জামান বলেন, ‘বাংলাদেশে একমাত্র আন্তর্জাতিকমানের টেস্টট্র্যাক রয়েছে এই কারখানায়। এই টেস্টট্র্যাকের মাধ্যমে গাড়ির গতি, ব্রেক, হ্যান্ডলিং, স্থিতিশীলতা, সাসপেনশন ও অন্যান্য কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। বিদেশি কোম্পানিগুলো কারখানার কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পরীক্ষা নিয়ে গেছে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই তাদের কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গাড়ির মান যাচাইয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাদের উৎপাদনের সনদ দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত বিরতিতে সব সময় তারা নিরীক্ষা করবে আমাদের উৎপাদিত পণ্য।’
কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত, র্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ ইতিমধ্যে দেশের অটো উৎপাদন খাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। প্রতিষ্ঠানটি কমপ্লিটলি নকড ডাউন (সিকেডি) অ্যাসেম্বলি। ২ হাজার ৫০০ ইউনিটের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতাসহ, আন্তর্জাতিক মানের এই ফ্যাসিলিটিতে রয়েছে আলাদা আলাদা বিভাগ, যার মধ্যে রয়েছে- পেইন্ট শপ, অ্যাসেম্বলি শপ, কোয়ালিটি কন্ট্রোল শপ, মেটেরিয়াল ওয়্যারহাউস।