বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে তাদের আগের দেওয়া প্রস্তাবের মূল্য সংশোধন করে নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন। এতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। সংগঠনটি নতুন করে তাদের নির্ধারণ করা মূল্যের কথা জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনকে চিঠি দিয়েছে।
তবে এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় মন্ত্রণালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সভাপতিত্বে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তৃতীয় দফা বৈঠকে উভয়পক্ষে আলোচনার পর ভোজ্যতেলের মূল্য নির্ধারণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে টিকে, মেঘনা, সিটি গ্রুপের প্রতিনিধিদের মঙ্গলবারের বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়াও ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান এবং ভোজ্যতেল কারখানা মালিক সমিতির সভাপতির কাছেও চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ভোজ্যতেলের দাম কত টাকা বাড়ানোর হবে এ নিয়ে ৬ এপ্রিল ও ৮ এপ্রিল দুই দফা বৈঠকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের দর কষাকষি হলেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভোজ্যতেলের কর সুবিধার মেয়াদ গত ৩১ মার্চ শেষ হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ মার্চ প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১৩ টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে। সেই অনুযায়ী বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৭৫ টাকার স্থলে ১৯৩ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পামঅয়েল ১৫৭ টাকার স্থলে ১৭০টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়।
তবে সংগঠনটির নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ১৭৫ টাকার স্থলে ১৮৯ টাকা, আর পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের নতুন দাম ৮৫২ টাকার স্থলে ৯২২ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পামতেলের দাম ১৫৭ টাকার স্থলে প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
গত রোববার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মোল্লার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি আকারে দেওয়া এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হলেও তিন পরিশোধন কারখানার মালিকপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, এ বিষয়ে মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে দাম বাড়ানোর বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্মত হলেও তেলের দাম লিটার প্রতি কত টাকা বাড়ানো হবে এ নিয়ে উভয় পক্ষে মতপার্থক্য রয়েছে।ফলে এর আগে দুই দফা বৈঠক করেও বিষয়টি চূড়ান্ত করতে পারেনি।
এদিকে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের কমছে তখন ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব একবারেই অযৌক্তিক।আর ভোক্তাসহ বিভিন্নপক্ষের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে ব্যবসায়ীদের এক তরফা ঘোষণা খুবই দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যখন আলোচনা চলছে, মঙ্গলবার বৈঠকের কথা রয়েছে। ঠিক তার দুইদিন আগে নববর্ষের ছুটির মধ্যে ব্যবসায়ীদের এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি অসৎ উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে ।এর ফলে বাজারে বড় ধরনের কারসাজি করার উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ভোজ্য তেলের সংকট দেখা দিলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর দাবি তুলে। ব্যবসায়ীদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে আট টাকা বাড়ায় সরকার। এখন চার মাসের ব্যবধানে ব্যবসায়ীরা ফের ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে।