রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৪৪ অপরাহ্ন

ঢাকায় নাশকতার পরিকল্পনা আ.লীগ নেতাকর্মীদের

  • সময়: শনিবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৫, ৯.৫২ এএম
  • ৭ জন

চলতি সপ্তাহে ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শেখ হাসিনার নির্দেশে ভারতসহ বিদেশে পলাতক নেতারা এবং দেশে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে কমপক্ষে ২৫০ জন নেতাকর্মীকে ঢাকায় আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, মহানগর, জেলা ও উপজেলার নেতারা যারা এখন নিজ নিজ এলাকায় রয়েছেন কিংবা আপাতত সতর্কতার সঙ্গে গ্রেপ্তার এড়াতে পেরেছেন, তারাই ভার্চুয়ালি মিটিং করে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করছেন। সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের বলা হয়েছে, চলতি সপ্তাহেই দলীয় সভানেত্রী দেশে ফিরবেন। তাই চলতি সপ্তাহের মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে নিজ নিজ পরিচিত বলয়ের শেল্টারে রাজধানীতে অবস্থান নিতে হবে। দলীয় সভানেত্রীর আগমনের ঘোষণা আসামাত্রই নির্ধারিত স্থান অভিমুখে রওনা করতে হবে। এক্ষেত্রে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অভিমুখে রওনা করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।

শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সর্বশেষ ভার্চুয়ালি মিটিংয়ে শেখ হাসিনা ‘আমি শিগগিরই ফিরে আসছি’ বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকেই প্রনিধানযোগ্য বলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বোঝানো হয়েছে। ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে যার অবস্থান থেকে রাজপথে নেমে আসতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়া এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করতে তাৎক্ষণিকভাবে নাশকতা সৃষ্টি করতে হবে। ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য লাইসেন্সধারী অস্ত্র নিয়ে রাজপথে নামার জোর নির্দেশনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দলীয় ক্যাডারদের নামে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়া। লাইসেন্স করা সেসব অস্ত্রের সবগুলো জমা পড়েনি। পাশাপাশি ৫ আগস্টের দিন ও পরে পুলিশের বিভিন্ন থানা ও ইউনিট থেকে লুট হওয়া অস্ত্র নিয়েও মাঠে থাকার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এমন পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আওয়ামী লীগের এই নাশকতার পরিকল্পনা সম্পর্কে গোয়েন্দা দপ্তর থেকে সরকারের শীর্ষপর্যায়ে জানানো হয়েছে গত সপ্তাহে। দ্রুততার সঙ্গে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বাহিনীটির সব ইউনিটে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও প্রতিটি জেলায় জরুরি বিশেষ বার্তা দিয়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। মাঠে থাকা সশস্ত্র বাহিনীর ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে গোয়েন্দা তথ্যের কথা জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, দেশবিরোধী ও জনশৃঙ্খলা অবনতির জন্য পরিকল্পিত নাশকতা রোধে বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। এর মধ্যে রয়েছে সারা দেশে মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ ক্যাডারদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা। যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তাদের অবস্থান চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা। রাজধানীসহ সারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করা; নৌঘাট, লঞ্চ টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ডে নজরদারি বাড়ানো, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের (বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি) সহযোগিতা নিয়ে ঢাকামুখী কার্যক্রম প্রতিহত করা; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন সাইট পর্যালোচনা করে গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করা এবং অর্থদাতাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকার স্ট্যান্ডগুলোতে নজরদারি বাড়ানো।

গ্রেপ্তারসহ তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া সব তথ্য সংশ্লিষ্ট ইউনিটপ্রধানকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তৃণমূলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পরামর্শ ও মতামত নিতেও বলা হয়েছে নির্দেশনায়।

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম আমার দেশকে বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে তথ্য পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশের স্থিতিশীলতার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে সবসময় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা রয়েছে। সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে।

নাশকতায় আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে বলে মনে করেন কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, এসব অস্ত্রের মধ্যে কিছু ছোট অস্ত্র রয়েছে, যেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের পদধারী নেতাদের বেশিরভাগই এখনো বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করছেন, যে সংখ্যাটি নেহায়েত কম নয়। তারা নাশকতার পরিকল্পনা করলে কীভাবে মোকাবেলা করবেনÑ এমন প্রশ্নে আইজিপি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ তো নিষিদ্ধ হয়নি। তাহলে কীভাবে পদধারী নেতাদের গ্রেপ্তার করব, আইনের আওতায় আনব। মামলায় যারা আসামি তাদের ঢালাওভাবে এখনই গ্রেপ্তার না করার সিদ্ধান্ত সরকারের। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আসলে কিছু করার নেই।’

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com