ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংশ্লিষ্টরা এ বৈঠকে বসেছেন বলে জানিয়েছেন সিনিয়র সহকারী সচিব ফজলে ওয়াহিদ।
ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হবে কি না- বৈঠকে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দ্বিতীয় দফা এ বৈঠক আহ্বান করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) নেতারা ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবকে সম্পূর্ণ যৌক্তিক ও ভোক্তার স্বার্থবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এর আগে গত রোববার দুপুরে এ বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সচিবালয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে প্রথম দফা বৈঠক করলেও কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি। ফলে আজ পুনরায় বৈঠক আহ্বান করা হয়।
ভোজ্যতেলের কর সুবিধার মেয়াদ ৩১ মার্চ শেষ হয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ মার্চ প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম ১৩ টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়। এ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) চিঠিও দিয়েছিল সংগঠনটি। কিন্তু ঈদের টানা ৯ দিনের ছুটির কারণে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাণিজ্য উপদেষ্টার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খানের পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ও ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার প্রতিনিধিরা উপস্থিত রয়েছেন। গত রোববারের বৈঠকেও তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রগুলো আরো জানায়, কারখানার মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আমদানি পর্যায়ে শুল্ক-কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত মাসে। দাম বাড়াতে চাওয়ার মূল কারণ এটাই। তবে রেয়াত সুবিধা বজায় থাকলে দাম বাড়াতে চান না তারা। ফলে সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে ভোজ্যতেলের দাম বাড়নো হবে কি না।
তবে কর রেয়াতের সুবিধা বহাল রাখার পক্ষে এনবিআর নেই এমন আভাস পেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর আগে রোজার মাঝামাঝি সময়ে ট্যারিফ কমিশন ভোজ্যতেলে আমদানি পর্যায়ের শুল্ক-কর রেয়াতের মেয়াদ ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির সুপারিশ করে এনবিআরকে চিঠি দেয়। কিন্তু এনবিআর এ পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফলে এটা সুস্পষ্ট যে, শুল্ক-কর রেয়াতের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলে ভোজ্যতেলের দাম বাড়বে না, অন্যথায় ব্যবসায়ীদের চাপে নতি স্বীকার করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পুনরায় ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।
এর আগে গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে ভোজ্যতেলের সংকট দেখা দিলে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর দাবি তোলে। ব্যবসায়ীদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি আট টাকা বাড়ায় সরকার। এরপরও বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট না কাটায় রোজার আগে দাম সহনীয় রাখতে ভোজ্যতেলের শুল্ক–করে রেয়াতি সুবিধা দিয়েছিল সরকার। এতে রমজানের মাঝামাঝি সময়ে এসে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ স্বাভাবিক হয়।
ওই সময় বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৭৫ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পামঅয়েল ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর বর্তমানে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৯৩ টাকা এবং খোলা সয়াবিন ও পামঅয়েল ১৫৭ টাকা নির্ধারণের অনুরোধ করা হয়েছে। সে হিসাবে লিটারে দাম বাড়ছে ১৮ ও ১৩ টাকা।
এ প্রসঙ্গে ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন তেলের কমছে তখন ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব একবারেই অযৌক্তিক। এতদিন ব্যবসায়ীরা শুল্ক-কর রেয়াতের যে সুবিধা ভোগ করেছে, তার স্বাদ আরো ভোগ করতেই জনগণের স্বার্থবিরোধী এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর কোনো পক্ষের সঙ্গেই আলোচনা না করে ব্যবসায়ীদের লিটারপ্রতি ১৮ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা খুবই দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, সরকার যখন শুল্ক-কর রেয়াতের সুবিধা দিয়েছিল তখনো তো ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মূল্যে তেল বিক্রি করেছে। তাই এখন আর দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই।