খেলাপিদের থেকে ঋণ আদায় বাড়ছে। গত বছরের শেষ তিন মাসে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে, যা এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ। সরকার পরিবর্তনে অনেক ঋণখেলাপি গ্রাহক অর্থ পরিশোধ মনোযোগী হয়েছেন এবং ডিসেম্বরভিত্তিক ব্যাংকগুলোর ব্যালেন্সশিট ভালো দেখাতে খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দিয়েছে যার কারণে আদায়ে পরিমাণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর এই তিন মাসে খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে ৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে আদায়ের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। ২০২২ সালের শেষ তিন মাসে ৫ হাজার ২৭৮ কোটি, ২০২১ সালের একই সময় ২ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালের শেষ তিন মাসে ২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় হয়।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বছরের শেষে খেলাপি ঋণ কমানোর একটা চাপ থাকে। কারণ, বুক ক্লিন করার জন্য ব্যাংকগুলো নগদ আদায় জোর দেওয়ার পাশাপাশি পুনঃতফসিলে ঝুঁকে পড়ে। এটা প্রতি বছরই হয়ে থাকে। তাই গত বছরের শেষ তিন মাসে খেলাপি ঋণ আদায় বেড়েছে। এছাড়া সরকার পরিবর্তনের একটা প্রভাব রয়েছে। অনেক ঋণ খেলাপি পলাতক থাকলেও যারা বর্তমানে দেশে আছে তারা ভয়ে খেলাপি ঋণ পরিশোধ করছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মোট খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে ২৪ হাজার ৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে শেষ তিন মাসে যার পরিমাণ ৯ হাজার ৭৯২ কোটি টাকা। এছাড়া জানুয়ারি-মার্চে আদায় হয়েছিল ৬ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা, এপ্রিল-জুনে ৪ হাজার ২৮৪ কোটি এবং জুলাই-সেপ্টেম্বরে ৩ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। গত বছরের শেষ তিন মাসে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ আদায় করেছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। এই ব্যাংকগুলো অক্টোবর-ডিসেম্বর সময় ৮ হাজার ২৬ কোটি টাকা আদায় করেছে। সরকারি ব্যাংকগুলোর আদায়ের পরিমাণ ১ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা, বিশেষায়িত ব্যাংকের ২৭৯ কোটি এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর আদায়ের পরিমাণ ৩০ কোটি টাকা।
তবে খেলাপি ঋণ যে হারে বাড়ছে সেই হারে এখনো আদায় হচ্ছে না। গত বছর ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে এক লাখ ৯৯ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। বছর শেষে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকা।
সূত্র জানিয়েছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ ও সমালোচিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়া ব্যাংকগুলো ঋণের প্রকৃত চিত্র দেখাতে শুরু করেছে। তাদের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেশি বেড়েছে। একইভাবে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণও বেশ বেড়েছে। পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, এস আলমসহ আরো কিছু বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছে। এতেও বেড়েছে খেলাপি ঋণ।
এদিকে খেলাপি ঋণ আদায়ের পাশাপাশি খেলাপি ঋণ অবলোপন বা রাইট অফ থেকেও আদায় বেড়েছে। গত বছরের শেষ তিন মাসে খেলাপি ঋণ অবলোপন থেকে আদায় হয়েছে ৫২৩ কোটি টাকা। তার আগের তিন মাস আদায়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ২৬০ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে আদায়ের পরিমাণ ৪৮৪ কোটি, ২০২২ সালের একই সময়ে ছিল ৫১৩ কোটি টাকা, ২০২১ সালের শেষ তিন মাসে ৪৪০ কোটি এবং ২০২০ সালের একই সময়ে আদায়ের পরিমাণ ছিল ৪৪১ কোটি টাকা।