বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫০ অপরাহ্ন

দখল-আত্মসাতে রাতারাতি বিপুল সম্পদের মালিক এনামুর

  • সময়: বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫, ৯.৩৭ এএম
  • ২৩ জন

সাভারে রানা প্লাজার আহত শ্রমিকদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে আলোচনায় আসেন ডা. এনামুর রহমান। খুলে যায় ভাগ্য। বিনা ভোটে হয়ে যান সংসদ সদস্য এবং প্রতিমন্ত্রী। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের পর হতাহত শ্রমিকদের অনুদানের টাকা মেরে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

দেশ-বিদেশে গড়েছেন বিশাল সম্পত্তি। এখন কারাবন্দি সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্প্রতি দুদকেও মামলা হয়েছে। তার প্রথম স্ত্রীর অবৈধ সম্পদের তদন্ত করছে দুদক।

জমি না কিনে অন্যের জমির সীমান প্রাচীর ভেঙে ওই জমিতে হাসপাতালসহ তৈরি করেন নানা অবকাঠামো। পরবর্তীতে কৌশলে নামমাত্র মূল্যে কিনতেন ওই জমি। সাভার-ধামরাইয়ে কিছু জমি কিনে দেবোত্তর খাস খতিয়ানের সম্পত্তি দখলে নিয়েছেন। এমন অনেক অভিযোগ সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।

তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়ায় রয়েছে ময়দা তৈরির কারখানা ও একাধিক প্লট। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নামে-বেনামে একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। তবে এসব সম্পত্তির বেশিরভাগই করেছেন তার প্রথম স্ত্রী রওশন আরা চৌধুরী ও তৃতীয় স্ত্রী ফরিদা আক্তারের নামে। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর নামেও রয়েছে বিপুল সম্পত্তি। সাভারসংলগ্ন ধামরাইয়ের সুঙ্গর মৌজায় রয়েছে দুই একর ৮৮ শতক জমি।

এ ছাড়াও তার দখলে রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত মঠ-মন্দিরের দেবত্তোর সম্পত্তি ও খাস খতিয়ানের বেশ কয়েক একর সম্পত্তি। ধামরাইয়ের সোয়াপুর ইউনিয়নের রৌহা গ্রামে রয়েছে প্রায় ৫০ একর জমি, যার বেশিরভাগই প্রথম স্ত্রীর নামে। পৌর এলাকার রাজাবাড়ী মৌজায় বিশেষভাবে তৈরি পাঁচতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি। দক্ষিণ দরিয়াপুর মৌজার ঈদগাহ মাঠসংলগ্ন এলাকায় বড় ছেলের নামে রয়েছে ছয়তলা বাড়ি। দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে রয়েছে পৌর এলাকার উলাইলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসংলগ্ন ছয়তলা বাড়ি।

সাভার বাজারের ব্যবসায়ী মাধব সাহা অভিযোগ করেন, জমি না কিনে এনাম তার ২৬ শতক জমিতে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য অবকাঠামো তৈরি করেছেন। পরবর্তীতে তিনি ওই জমি প্রভাবশালীর মধ্যস্থতায় নামমাত্র মূল্যে রেজিস্ট্রি করে দিতে বাধ্য হন। বর্তমান বাজারদরে ওই জমির মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা বলে তিনি দাবি করেন।

সাভার সরকারি কলেজের এক শিক্ষকের বাড়ি চারদিক থেকে ঘেরাও করে নির্মাণকাজ করেন তিনি। পরবর্তীতে একপর্যায়ে ওই বাড়ি তার কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হন ওই শিক্ষক। ইচ্ছার বিরুদ্ধে এনামুর রহমানের কাছে জমি বিক্রি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা সাভার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী নুরুল আমিন, পণ্ডিতপাড়ার টিভি মেকানিক ইব্রাহিম মিয়া, কাতলাপুরের ফজলুল হক ফজল, আনিসুর রহমান লেবু, খলিলুর রহমান ও তার জামাতাসহ অনেকে।

এনাম মেডিকেলের দক্ষিণ পাশের বাউন্ডারিসংলগ্ন দক্ষিণ দরিয়ার পুরের বাসিন্দা মজিবুর রহমান অভিযোগ করেন, বেশ কয়েকটি জেনারেটর বসানো রয়েছে। দূষণের ফলে বাড়ি ছেড়ে ভাড়া বাসায় যাওয়ার চিন্তা করছেন তিনি। মজিবুর রহমানের প্রতিবেশী কামাল হোসেন জেনারেটরের শব্দদূষণের কারণে ইতোমধ্যে বাড়ি ভাড়া দিয়ে অন্যত্র ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। শব্দদূষণের শিকার প্রতিবেশী বাড়ির মালিক রুহুল আমিন, ইলিয়াস হোসেন, নাসির উদ্দিনসহ অনেকে জানান, তাদের বাড়ি ও জায়গা ক্রয়ের জন্য পরিকল্পিতভাবে শব্দদূষণ করা হচ্ছে।

অবৈধ সম্পদের কারণে দুদকে মামলা

বিভিন্ন দুর্নীতি এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ডা. মো. এনামুর রহমানের বিরুদ্ধে ছয় কোটি ৪৩ লাখ ৪৯ হাজার ১৮ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা দায়ের করেছে। তার প্রথম স্ত্রী রওশন আক্তার চৌধুরীর নামে ২৮ কোটি ২৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৯৯ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত করছে দুদক।

দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এনাম মেডিকেল হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড, এনাম এডুকেশন অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভিলেজ (প্রাইভেট) লিমিটেড এবং এনাম ক্যানসার হাসপাতাল লিমিটেডে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। এ ছাড়া সাবেক প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

অন্যদিকে এনামুর রহমানের চার স্ত্রীর নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ থাকলেও তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করেননি। নির্বাচন কমিশনে এনামুর রহমানের জমা দেওয়া দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা থেকে বেশকিছু তথ্য জানা গেছে। দশম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তিনি।

এর ঠিক আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী ওই সময় তার আয়ের উৎস ছিল পেশা (শিক্ষকতা, চিকিৎসা, আইন, পরামর্শক ইত্যাদি)। এ সময় তার বার্ষিক আয় ছিল ছয় লাখ ৮৪ হাজার টাকা। পরে ২০১৮ সালে এনামুর রহমানের আয়ের উৎস ছিল ব্যবসা, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও এফডিআর এবং সংসদ সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে প্রাপ্ত ভাতা। হলফনামা অনুযায়ী ওই সময় বছরে তার আয় ছিল ৩০ লাখ টাকার বেশি।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওযার পর সম্পদ বাড়তে থাকে। স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের নামেও দেশ-বিদেশে বিপুল সম্পদ গড়ে তোলেন। তার তিন সন্তান লেখাপড়া করতে গিয়ে বিদেশে বসবাস করছেন।

২০২৩ সালে সাবেক প্রতিমন্ত্রীর বার্ষিক আয়ের উৎস ছিল দুটি শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত (এফডিআর ও ব্যাংক থেকে সুদ) এবং চাকরি (প্রতিমন্ত্রীর সম্মানী ভাতা)। এরপর এক দশকের ব্যবধানে তার আয় বছরে পাঁচগুণের বেশি বেড়েছে। ২০২৩ সালের দেওয়া তথ্যানুযায়ী প্রায় আট কোটি ২৯ লাখ টাকার স্থাবর- অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় স্ত্রীদের সম্পদের কোনো হিসাব দেননি তিনি।

ডা. এনামুর রহমানের প্রথম স্ত্রী রওশন আক্তার চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি তাতে সাড়া দেননি। চতুর্থ স্ত্রী ফরিদা আক্তারের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com