ডলার বাজারে কারসাজি রোধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের ডলার ক্রয়ে ভিন্ন ভিন্ন দাম দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি ডলারের ক্রয় এবং বিক্রয়ের পার্থক্য হবে সর্বোচ্চ এক টাকা। যদি কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করে তাহলে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। তবে ট্রানজেকশনের পরিমাণ যদি বেশি হয় তাহলে পুরো লেনদেনের ৫ শতাংশ হারে জরিমানা করা হবে।
সোমবার ২৬ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও ট্রেজারি প্রধানের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বৈঠক করে কঠোর এ নির্দেশনা দেন। বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা যুগান্তরকে বলেন, নতুন সিদ্ধান্তের বিষয়ে মঙ্গলবার প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।
জানা যায়, বৈঠকে ডলার মার্কেটের বর্তমান পরিস্থিতি, মার্কেটের উন্নতি, ডলারের মিট রেট এবং সঠিক তথ্য আদান-প্রদান নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন ট্রেজারিপ্রধান বলেন, ‘গভর্নর জানিয়েছেন ডলারের দুটো রেট হবে। একটি ক্রয় অপরটি বিক্রয়। ক্রয় এবং বিক্রয়ের মধ্যে পার্থক্য হবে সর্বোচ্চ এক টাকা। কোনো ব্যাংক এই নিয়ম অমান্য করলে তাকে ১০ লাখ টাকার বেশি জরিমানা করা হবে। পাশাপাশি ট্রানজেকশনের পরিমাণ যদি অনেক বেশি হয় তাহলে পুরো ট্রানজেকশনের ৫ শতাংশে হারে জরিমানা করা হবে।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের একটি রেফারেন্স রেট চালু করবে। এর মাধ্যমে ডলারের মিট রেট ঠিক করা হবে। তবে সেটা কিভাবে হবে বিস্তারিত জানায়নি। এ নিয়ে মঙ্গলবার একটি সার্কুলার জারির কথা জানিয়েছে।’
বৈঠকে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ড্যাশবোর্ডে ব্যাংকগুলোর ডলারের লেনদেন রিপোর্ট করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর ডলারের গড় লেনদেন ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। এছাড়া তথ্য আদান-প্রদানের জন্য একটি ডিজিটাল পদ্ধতি নিয়ে কাজ চলছে বলে জানান গভর্নর।
একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি বলেন, ‘গভর্নর বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে মার্কেট উন্নতি করার জন্য ডলারের একটি ফান্ড তৈরির কথা বলেন। যাতে সংকটে এ ফান্ড ব্যাংকগুলো ব্যবহার করতে পারে।’
ডলার বাজার অস্থির হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাখ্যা : দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে বিশেষ করে ডলারের দামে সম্প্রতি বেশ অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর পেছনে ৬টি কারণ মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারা বলছে, অস্থিরতা রোধে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা এক বার্তায় এ তথ্য জানান।
বার্তায় বলা হয়, বছরের শেষ মাস ডিসেম্বর। এ কারণে নানাবিধ ঋণ পরিশোধের ভ্যালু ডেট (পেমেন্ট শিডিউল) এই মাসেই বিধায় বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। আইএমএফের লক্ষ্য পূরণ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে, যা আন্তঃব্যাংক ও বাজারে ডলারের জোগান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখেনি।
বার্তায় আরও বলা হয়, বাংলাদেশের রেটিং অবনমনের কারণে বিদেশি ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর করেসপন্ডেন্ট রিলেশনশিপ বাধাগ্রস্ত হয়েছে, ফলে ইউপাস এলসি খোলা (আমদানি করা পণ্যের পাওনা পরিশোধে সময় থাকে ২৭০ দিন) বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। পেমেন্টের ম্যাচুরিটি ডেফার্ড করা সম্ভব হয়নি ও অফশোর ব্যাংকিং ঋণের আন্তঃপ্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বৈদেশিক দেনা পরিশোধসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বাজারে চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। রেমিট্যান্স আহরণে অ্যাগ্রিগেটরদের একচেটিয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকা বাজারে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারকে অস্থিতিশীল করেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ইনফ্লো-আউটফ্লো মিস ম্যাচের কারণেও ডলার বাজারে অস্থিতিশীলতা পরিলক্ষিত হয়েছে।