বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৮ অপরাহ্ন

প্রত্যন্ত অঞ্চল ইন্টারনেট বিপ্লবের অপেক্ষায়

  • সময়: সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২.৪৫ পিএম
  • ১০৫ জন

প্রথমেই বলে নিচ্ছি স্টারলিংক কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে। স্টারলিংক হলো ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের মালিকানাধীন স্যাটেলাইট ইন্টারনেট। এটি ব্যবহার করতে কোনো ধরনের কেব্‌ল বা টাওয়ারের প্রয়োজন হয় না। ২০২০ সালে স্টারলিংক যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সেবা চালু করে। এরপর ২০২১ সালে যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশে স্টারলিংক সেবা চালু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে নাইজেরিয়া, কেনিয়া ও রুয়ান্ডায় প্রবেশ করে। চলতি বছর স্টারলিংক নতুন আরও কিছু দেশে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়েছে।

আফ্রিকার চাদ, এশিয়ার মঙ্গোলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনাসহ বেশ কয়েকটি নতুন এলাকায় এখন স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা চালু হয়েছে। বাংলাদেশেও ২০২৫ সাল থেকে স্টারলিংক তাদের সেবা দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছে। যারা স্টারলিংক ব্যবহার করে, তাদের শুরুতেই ছাতার মতো একটি কিট দেয়া হয়। মহাকাশ থেকে সরাসরি ওই কিটের মাধ্যমে গ্রাহকের রাউটারে চলে আসে ইন্টারনেট। মজার ব্যাপার হলো, আপনি গ্রামেগঞ্জে যেখানেই থাকেন না কেন তাদের কিট ব্যবহার করলে সহজেই আপনার কাছে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে ইন্টারনেট।

শুধু তা-ই নয়, স্টারলিংকের স্পিড অবিশ্বাস্য। বর্তমানে এটি ৫০ এমবিপিএস থেকে ২০০ এমবিপিএস পর্যন্ত ডাউনলোড স্পিড এবং ১০ এমবিপিএস থেকে ২০ এমবিপিএস পর্যন্ত আপলোড স্পিড প্রদান করে। অতএব বুঝতেই পারছেন ঝড়ের গতিতে আপনাকে ইন্টারনেট সেবা দেবে এই স্টারলিংক। আর সেজন্যই তো ইলন মাস্কের এই প্রযুক্তি নিয়ে এত আলোচনা। বাংলাদেশে পতনের আগে হাসিনা সরকার ডিজিটালের ডামাঢোল পেটালেও এখন পর্যন্ত বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় উচ্চগতির ইন্টারনেট নেই বললেই চলে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবার বেহাল দশা।

ঘরের ভেতর থ্রিজি সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কোনো কোনো এলাকায় তো নেটওয়ার্কই ভালোভাবে কাজ করে না, তার ওপর ইনটারনেট আশা করা বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়। তবে বিভিন্ন উপজেলা ও পাড়া-মহল্লায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা দেওয়া হচ্ছে এটা ঠিক, কিন্তু তাতে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা মোটেও সন্তোষজনক নয়। কোথাও কোথাও ইন্টারনেট পাওয়া গেলেও ভালো স্পিড পাওয়া যায় না। আবার কোথাও একটু ভালো স্পিড পাওয়া গেলেও এই ব্রডব্যান্ড কোম্পানিগুলোর নানা রকম সমস্যা লেগেই থাকে। বিভিন্ন স্থানে ইন্টারনেটের কেব্‌ল কাটা পড়লে দীর্ঘ সময় ইন্টারনেট সেবা না পাওয়ার ভোগান্তি তো আছেই।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট ব্যবহারের এই তিক্ত অভিজ্ঞতার মাঝে স্টারলিংকের বাংলাদেশে আসার আগ্রহ দেখানোর খবরটা আনন্দদায়ক। তবে শুধু আনন্দিত হলেই হবে না, এবার এই স্টারলিংক নিয়ে একটু হতাশার কথা বলি। ইলন মাস্কের এই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে খরচটা অনেক বেশিই করতে হবে। বিশেষ করে যারা সাধারণ ইউজার তাদের জন্য এটা অনেকটা সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়াবে। আরেকটু ক্লিয়ার করে বলি, স্টারলিংক সেবা ব্যবহার করতে গ্রাহকদের একটি স্টারলিংক কিট কিনতে হয়, যার দাম প্রায় ৫৯৯ ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৬৫ হাজার টাকা)। মাসিক সেবার জন্য ১২০ ডলার (বাংলাদেশি প্রায় ১৪ হাজার টাকা) খরচ করতে হতে পারে।

তবে যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ছোট-বড় নিজের কোম্পানির জন্য এটি ব্যবহার করতে চাইবে, তাদের জন্য দুর্দান্ত হবে এটি। বর্তমানে মানুষ অনলাইনমুখী। গ্রামে বসেও অনেকে নিজের অনলাইন ব্যবসা বা আউটসোর্সিং করে উপার্জন করছেন। সেসব মানুষদের জন্যও এটি দারুণ সেবা হিসেবে কাজ করবে। স্টারলিংক ব্যবহার করতে যেহেতু মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে হবে, সেহেতু কয়েকজন টিম গড়েও এটি ব্যবহার করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সবার খরচ কম পড়বে। খরচের দিক বিবেচনা করলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট বিপ্লবের অপেক্ষায় এই স্টারলিংক। সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছেন স্টারলিংকের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি। সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশে স্টারলিংক আসার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

বর্তমান সরকার বাংলাদেশে স্টারলিংক আসার ব্যাপারে আগ্রহী, তবে তারা ইলন মাস্কের কোম্পানিকে কিছু নীতিমালা বেঁধে দেবে। কারণ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সরাসরি গ্রাহকরা পাবে ইন্টারনেট। তাহলে প্রশ্ন ওঠে সরকার এটাকে নিয়ন্ত্রণ করবে কীভাবে? সেজন্যই মূলত সরকার কিছু নীতিমালা নির্ধারণ করে দেবে। সরকারের গেটওয়ের মাধ্যমেই বাংলাদেশে ব্যবসা করতে হবে স্টারলিংককে। এতে সরকারের নজরদারিতে থাকবে গ্রাহকরা। কেউ চাইলেই যে কোনো অপকর্ম করতে পারবে না। এখন দেখার বিষয় হলো সরকারের নীতিমালা মেনে স্টারলিংক বাংলাদেশে আসতে রাজি হবে কি না। তবে বেশ কিছু দেশে সরকারের নীতিমালা মেনেই ব্যবসা করছে স্টারলিংক। আগামী এপ্রিলে বাংলাদেশে আসন্ন বিনিয়োগ সম্মেলনে ইলন মাস্কের আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এলেই হয়তো বাংলাদেশে স্টারলিংক প্রবেশের চূড়ান্ত ঘোষণা আসতে পারে।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com