বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৯ অপরাহ্ন

নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে হলেও আপত্তি নেই

  • সময়: বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫, ১০.২২ এএম
  • ১২ জন

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করলেও সরকার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ দিয়ে যদি ভোটের রোডম্যাপ ঘোষণা করে, তাহলে তা আগামী জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারিতে হলেও আপত্তি থাকবে না বিএনপির। কারণ দলটি ত্রয়োদশ নির্বাচন বানচালের শঙ্কা দেখছে। এজন্য সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণের ঘোষণা এলে দেশ নির্বাচনমুখী হবে।

বিএনপির নেতারা মনে করেন, এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সব ধরনের শঙ্কা যেমন কেটে যাবে। রাজনৈতিক দলগুলোও আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করে দিতে পারবে।

গতকাল মঙ্গলবার ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে রাত সাড়ে ৭টা থেকে সোয়া ৯টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত বৈঠকটি ছিল রুদ্ধদ্বার। ছয় দলীয় এই জোটের বক্তব্যকে বিএনপি বরাবরই গুরুত্ব দেয়।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ঐকমত্য তৈরিতে গত ১৯ এপ্রিল থেকে ফ্যাসিবাদবিরোদী যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র এবং নির্বাচন বর্জনকারী যুগপতের বাইরের দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করেছে বিএনপি।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সার্বিকভাবে গণতন্ত্র মঞ্চের তরফ থেকে আগামী দিনে বিএনপির করণীয় কী, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে উত্থাপিত চার থেকে পাঁচটি ইস্যুর কোনোটির সঙ্গে একমত হয়েছে, আবার কোনোটির সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি।

গণতন্ত্র মঞ্চের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈঠকে তাদের কয়েকজন নেতা বিএনপির নেতাদের নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গে বক্তৃতা-বিবৃতি নিয়ে কথা বলেছেন। তারা বিএনপি নেতাদের জানিয়েছেন, তারা সংস্কার নিয়ে যথেষ্ট আন্তরিক। যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের নিয়ে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবও উত্থাপন করেছে বিএনপি। বর্তমানে এই ইস্যুতে ব্যাপকভাবে কাজও করছে দলটি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচনের দাবিটি যেভাবে ব্যাপক পরিসরে সামনে আনা হয়েছে, সেভাবে সংস্কার কার্যক্রম আসেনি। সংস্কার নিয়ে বিএনপি ‘ব্যাকফুটে’ (পেছনে) রয়েছে। এতে জনগণের মধ্যে এক ধরনের ভুল বার্তা যাচ্ছে।

এজন্য গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা নির্বাচনি রোডম্যাপের পাশাপাশি সংস্কারের রোডম্যাপ নিয়েও সোচ্চার হওয়া দরকার বলে বিএনপিকে বলেছে। যাতে জনগণ বোঝে, বিএনপি শুধু নির্বাচন নয়, সংস্কারও চায়। বিএনপি গণতন্ত্র মঞ্চের এ প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত পোষণ করেছে বলে বৈঠক সূত্র জানিয়েছে।

এ ছাড়া বৈঠকে সংস্কার ইস্যুতে বিএনপির নেতারা যাতে একেক সময় একেক ধরনের বক্তব্য না দেয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে বলেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। তারা বলেছেন, নেতাদের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করছে। তবে বিএনপি জানিয়েছে, দলের মাঠ পর্যায় বা মধ্যম সারির নেতারা যেটা বলছেন, সেটা তো তা দলের বার্তা নয়। দলের শীর্ষ ও দায়িত্বশীল নেতারা যা বলবে, সেটাই মূল বার্তা।

বৈঠকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের চাঁদাবাজি, দখলবাণিজ্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মঞ্চের নেতারা। এর উত্তরে বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, মিডিয়া এটা নিয়ে অতিরঞ্জিত করছে। প্রত্যুত্তরে গণতন্ত্র মঞ্চ বলেছেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আপনাদের বিবেচনায় নেওয়া দরকার।

বৈঠকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিষয়টিও একপর্যায়ে আলোচনায় আসে বলে জানা গেছে। তবে বিএনপি জানিয়েছে, গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নতুন এই রাজনৈতিক দলটি নানা কারণে বর্তমানে আর তেমন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নেই। তাদের অভিমত, এনসিপিকে ঘিরে যেটুকু সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, সেটা এখন আর নেই। সব মিলিয়ে নতুন এই দলটির সার্বিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে রেখেছে বিএনপি।

জানা যায়, বৈঠকে বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, শহীদুল্লাহ কায়সার; বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, আকবর খান; ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, আব্দুল কাদের; গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, আবুল হাসান রুবেল, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও তানিয়া রব ছিলেন।

এ বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের বৈঠকটি অনানুষ্ঠানিক। বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আমাদের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, সংস্কারের কাজ আরো জোরদার করলে তা দুই-তিন মাসের মধ্যে শেষ করাতে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তারপর বিচারকাজ। এজন্য ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ালে বিচার প্রক্রিয়াটা দৃশ্যমান করা যাবে। এরপর যদি প্রশাসনিক কাজটা তাড়াতাড়ি করা যায়, তাহলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাজ শেষ করতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। আমি মনে করি, সরকার আন্তরিক হলে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনে দিকে আমরা যেতে পারি।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com