আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক পরিচয়ে বিগত সরকারের আমলে ফরিদপুরে দুর্নীতি, লুটপাট আর ক্ষমতার অপব্যবহারের অভয়ারণ্য গড়ে তুলেছিলেন শেখ হাসিনার বিয়াই খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তার পুত্র খন্দকার মাশরুর হোসেন মিতু ছিলেন শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের স্বামী। শেখ পরিবারের সঙ্গে আত্মীয়তার সুবাদে হয়ে ওঠেন অগাধ ক্ষমতার অধিকারী।
এরপর সরকারি টেন্ডারবাণিজ্য ছাড়াও জমি দখল ও কমিশন আদায়ের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে পাচার করেন বিদেশে। এই দুর্নীতি আড়াল করতে পুরো ক্ষমতার ১০ বছর জনগণকে মাতিয়ে রাখতেন দেশ-বিদেশের শিল্পী এনে নাচ-গানের অনুষ্ঠানে।
এভাবেই মোশাররফপুত্র জন্ম দেন নানান নারী কেলেঙ্কারির। এমন একটি কেলেঙ্কারিতে পুতুলের কাছে ধরা খেয়ে স্বল্পসময়ের নোটিসে দেশ ছেড়ে দুবাই গিয়ে গ্রেপ্তার হন অর্থপাচার মামলায়। ওই ঘটনায় মিতুর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎস সন্ধানে বেরিয়ে আসে শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে পুতুলের সম্পৃক্ততা।
তবে কৌশলী শেখ হাসিনা নিজের ও মেয়ের নাম এই আর্থিক কেলেঙ্কারি থেকে আড়াল করতে শুরু করেন কথিত এক শুদ্ধি অভিযান। যার বলি ফরিদপুরের খন্দকার মোশাররফসহ ঢাকার সম্রাট কিংবা জিকে গাউসের মতো আরো অনেকে।
এসব ঘটনার পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সারির নেতার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের ব্যাপক অভিযোগ মিডিয়ায় প্রকাশিত হলেও তাতে শেখ পরিবারের কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর জামাই মিতু কিংবা তার বেয়াই খন্দকার মোশাররফকেও এসব দুর্নীতি থেকে আড়াল করতে নিরাপদে বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়। অবশ্য নিজের ও মেয়ের নাম ওই আর্থিক কেলেঙ্কারি থেকে বাদ দিতে পূর্বের তারিখ দিয়ে তৈরি করা হয় মিতুর সঙ্গে পুতুলের ডিভোর্স নথি।
শেখ হাসিনার বেয়াই পরিচয়ে ফরিদপুর-৩ আসন থেকে ২০০৯ সালে প্রথমবার এমপি হয়ে শুরু করেন দুর্নীতির মহোৎসব। এভাবেই তার নেপথ্য খলনায়ক হিসেবে আবির্ভূত হন তারই পুত্র খন্দকার মাশরুর হোসেন মিতু। যিনি নায়কের বেশে দেশ-বিদেশ থেকে নায়িকা-গায়িকাদের এনে ফরিদপুরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করে নাচে-গানে বিমোহিত করে রাখতেন জনগণকে। শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সঙ্গে বিয়ে হওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর জামাতা হিসেবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন প্রশাসনের কাছে।
পিতা-পুত্রের এই রঙ্গলীলার নিরাপদ আস্তানা হিসেবে তারা খুবই অল্প সময়ের মধ্যে ফরিদপুরে গড়ে তোলেন তিনটি প্রাসাদোপম বাংলো বাড়ি।
জানা গেছে, দুবাইতে মানিলন্ডারিংয়ের মামলায় আটক হয়ে মিতু তার ব্যাংক লেনদেনের অর্থের উৎস হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্ত্রী সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নাম প্রকাশ করেন।