রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:০৩ অপরাহ্ন

বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধ চায় আইএমএফ

  • সময়: বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০.৩০ এএম
  • ১০২ জন

ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারে বড় সংস্কার আনার প্রস্তাব দিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)। তারা বলেছে, ডলারের দাম পুরোপুরি বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ছেড়ে দিতে বলেছে। এটি ছেড়ে না দিলে ডলারের দাম বাড়বে বলে মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা তৈরি হবে, ফলে ডলার ধরে রাখার প্রবণতা বাড়বে। ডলার আটকে থাকবে গ্রাহকদের হাতে। এতে বাজারে ডলারের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বলেছে সংস্থাটি।

জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারে আরও কিছু সংস্কার আনার পক্ষে একমত পোষণ করেছে। তবে এখনই পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা ঠিক হবে না। এতে ডলারের দামে বড় ধরনের ওঠানামা করবে। যা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। পর্যায়ক্রমে বর্তমানে প্রচলিত ক্রলিং পেগ (একটি সীমার মধ্যে দাম বেঁধে দিয়ে ওঠানামার সুযোগ দেওয়া) পদ্ধতি শিথিল করা হবে। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফের বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আইএমএফের মিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশকে দেওয়া আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের শর্ত বাস্তবায়ন ও চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে যেসব শর্ত ছিল সেগুলোর বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করতে আইএমএফ মিশন বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছে। গত ৩ ডিসেম্বর থেকে তারা ঢাকায় অবস্থান করে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করছে। ইতোমধ্যে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা ঢাকায় অবস্থান করে আরও বৈঠক করবে।

সূত্র জানায়, বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতিতে আর সংস্কার ও পরিবর্তন, মুদ্রানীতি ও রাজস্ব নীতির মধ্যকার আরও সমন্বয় সাধন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্ডার পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা ও জবাবদিহিতা আরও বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ক্ষেত্রে ক্রলিং পেগ পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠকে আইএমএফ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ কিছু খাতে সংস্কার নিয়ে আলোচনা করেছে। তারা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডারের পরিবর্তন করতে বলেছে। এসব বিষয় নিয়ে আইএমএফ সরকারের সঙ্গে আরও আলোচনা করবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বৈদেশিক মুদ্রার পাচার বন্ধ হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। রপ্তানি আয়ও বাড়তে শুরু করেছে। এতে বাজারে ডলারের প্রবাহ বেড়েছে। যে কারণে ডলারের দাম স্থিতিশীল হয়েছে। দামের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ওঠানামা হচ্ছে না।

আইএমএফ মনে করে, বৈদেশির মুদ্রার বিনিময় হারে বড় ধরনের সংস্কার দরকার। বর্তমানে ক্রলিং পেগের আওতায় ডলারের দাম স্থির হয়ে রয়েছে। গত প্রায় দুই মাস পর এর দাম স্থির। এতে গ্রাহকদের মধ্যে এমন প্রত্যাশার জন্ম নিতে পারে যে ডলারের দাম আগামীতে আরও বাড়বে। ফলে তাদের মধ্যে ডলার ধরে রাখার প্রবণতা বাড়বে। এতে বাজারে ডলারের প্রবাহ কমে যাবে। এই প্রবণতা রোধ করার জন্য ডলারের বিনিময় হার ক্রলিং পেগ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। বর্তমান নীতিতে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২০ টাকা পর্যন্ত ওঠতে পারে। ফলে বাজারে ওই দামেই ডলার বিক্রি হচ্ছে। তবে কেনা হচ্ছে আরও কম দামে। আইএমএফ চাচ্ছে ডলারের দাম ওঠানামা করুক। বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে এই দর ওঠানামা করবে। এতে বাজারে প্রতিযোগিতা ফিরে আসবে।

আইএমএফ ঋণের আলোচনার শুরু থেকেই ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চাপ দিচ্ছে। এর জন্য সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু সে সীমা অতিক্রম হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়নি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধন করার প্রস্তাবও আইএমএফ শুরু থেকে দিয়ে আসছে। এটি পরিবর্তন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে প্রস্তাব দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে মুদ্রানীতি যেমন বাস্তবায়ন হচ্ছে না, তেমনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ক্ষমতার প্রয়োগ স্বাধীনভাবে করতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জবাবদিহিতাও বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারের উচ্চপর্যায়ে আরও বৈঠক করার প্রস্তাব দিয়েছে।

বৈঠকে বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে গত সরকারের আমলে নয়টি ব্যাংক দখল করে ব্যাপক লুটপাট করা হয়েছে। ওইসব অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। যে কারণে ব্যাংক খাতে এখন তারল্য সংকট। লুটপাটের টাকা ফিরে না আসায় খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com