শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। বর্তমানে বিএনপি এবং জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির এবং ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। যদিও ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবির মুখে কিছু উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু এর বাস্তবায়ন এখনো স্পষ্ট নয়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের প্রকাশ্যে আসা এবং সেখানে রাজনৈতিক মতবিনিময় সভায় হট্টগোল ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলি এর বিরুদ্ধে আপত্তি জানালেও, ছাত্রশিবির পালটা বক্তব্য রেখেছে। এই পরিস্থিতি ভবিষ্যতে ছাত্র রাজনীতির পুরনো চেহারা ফিরে আসার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
শিবিরের বিরোধিতা কেন করছে ছাত্রদল?
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেদিনের সভায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আহ্বানে যোগ দিয়েছিলেন ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশী রিফাত মাহমুদ। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম যে, শিবির এই ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত। বাইশটা ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠন তাদেরকে নিষিদ্ধ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগও আছে। সেই প্রেক্ষাপটে আমরা বলেছি যে তাদের সঙ্গে থাকবো না। তখন আমরা ওয়াকআউট করি, সেখান থেকে চলে আসি।’
শিবিরকে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে সবার আগে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে বলে মনে করেন মাহমুদ।
‘আমরা বিশ্বাস করি তারা যে তিনজনের কমিটি দিয়েছে, সেটাই তাদের কমিটি না। এর বাইরেও তাদের হয়তো লোক আছে। এখন তারা গুপ্ত রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসুক আগে। তাদের অবস্থান, কর্মসূচি তাদেরকে আমাদের কাছে তুলে ধরতে হবে। তারপর ছাত্রসংগঠনগুলো, সাধারণ ছাত্র এবং প্রশাসন বিবেচনা করবে তাদের রাজনীতি এখানে চলবে কি চলবে না।’
তবে শিবির ইস্যুতে সাময়িক উত্তেজনা থাকলেও জাহাঙ্গীরনগরে মোটাদাগে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখা গেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টি ঘুরে সেখানে শিবিরের নেতাকর্মীদের অবস্থানও দেখা গেছে। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনও দিতে পারেনি সংগঠনটি।
অন্যদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল সক্রিয় থাকলেও তাদের কোনও কমিটি নেই। তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে এমন অবস্থায় আছে ছাত্র সংগঠনটি।
তবে ক্যাম্পাসে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশ সুরক্ষামূলক কাজের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়া বেশ সক্রিয় আছে বাম সংগঠনগুলোও।
অন্যদিকে ছাত্রশিবিরও চেষ্টা করছে পূর্ণ সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে হাজির হতে। কিন্তু বিরোধিতার মুখে সেটা কতটা সম্ভব?
জানতে চাইলে ছাত্রশিবিরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি মহিবুর রহমান অবশ্য বিবিসি বাংলাকে বলেন, খুব শিগগিরই পূর্ণ কমিটি নিয়ে সামনে আসার চেষ্টা করছেন তারা।
‘আমরা দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে ছিলাম না। সে অবস্থা থেকে সামনে আসতে একটু সময় লাগবে এটাই স্বাভাবিক।’
কিন্তু বিরোধিতার মুখে শিবির কতটা সুবিধা করতে পারবে?
‘দেখেন এখানে মোটাদাগে সবাই যে আমাদের বিরোধিতা করছে এমনটা না। কয়েকজন বিরোধিতা করছে, বাকিরা আমাদেরকে সমর্থন দিচ্ছে। কারণ রাজনীতি করার অধিকার আমাদের আছে। এখানে কোনও একটা সংগঠন যদি আরেকটা সংগঠনের সঙ্গে বসতে না চায়, তাহলে তারা কি রাজনীতি করতে পারবে না?’ বলছিলেন রহমান।
তিনি বলেন, রাজনীতি করার অধিকার তো কোনও সংগঠন অন্য সংগঠনকে দিতে পারে না। কারণ একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে কে রাজনীতি করতে পারবে, কে পারবে না সেটা তো বলে দেয়ার বৈধ কাঠামো আছে। এখানে সিনেট আছে, সিন্ডিকেট আছে, একাডেমিক কাউন্সিল আছে। তারা তো আমাদেরকে নিষিদ্ধ করেনি। এখন এর বাইরে তো কেউ কাউকে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে না।