দেশে যাতে আগামী ১৮ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে, সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সমর্থনের অঙ্গীকার করেছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। সোমবার ঢাকায় নিজ কার্যালয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, যা-ই ঘটুক না কেন, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পাশে থাকবেন, যাতে তিনি তার লক্ষ্য অর্জন করতে পারেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেনাপ্রধানের এ বক্তব্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ কতদিন পর দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এ নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা কৌতূহল ও প্রশ্ন রয়েছে। সেনাপ্রধানের এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে মানুষের কৌতূহলের অবসান হবে।
নির্বাচন নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা বলেছেন, সেনাপ্রধানের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও প্রশাসনে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ছয়টি কমিশনও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে নাগাদ অনুষ্ঠিত হবে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টা বা অন্য কোনো উপদেষ্টার কাছ থেকে আসেনি। এ প্রেক্ষাপটে সেনাপ্রধানের বক্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা। আশা করা যায়, দেড় বছর পর দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এ প্রক্রিয়ায় দেশে গণতান্ত্রিক শাসন চালু হবে।
রাজনীতি থেকে সেনাবাহিনীকে দূরে রাখা প্রসঙ্গেও সেনাপ্রধান মন্তব্য করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, এটা কেবল তখনই ঘটতে পারে, যখন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছুটা ভারসাম্য থাকে, যেখানে সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে। সেনাপ্রধানের এ বক্তব্যও গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বর্তমানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। এ মন্ত্রণালয় সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। সেনাপ্রধান যে ব্যবস্থার কথা বলছেন, তা করতে সংবিধান সংশোধন করা দরকার।
সেনাপ্রধান আরও বলেছেন, সেনাবাহিনী অশান্ত পরিস্থিতির পর দেশকে স্থিতিশীল করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে। তিনি জানান, ‘আমি নিশ্চিত, একসঙ্গে কাজ করলে আমাদের ব্যর্থ হওয়ার কোনো কারণ নেই।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।’ সেনাপ্রধানের এসব বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এটাই স্পষ্ট যে, তিনি দেশে দ্রুত গণতান্ত্রিক পরিবেশ দেখতে চান।