দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হল শাখা ছাত্রদলের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) নিহতের ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাত ২টার দিকে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের নেতৃত্বে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) থেকে তাৎক্ষণিক মিছিল বের করেন তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে ভিসির বাসভবনের সামনে জড়ো হন।
মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী।
এসময় ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘ঘটনাস্থলে বহিরাগত ২০-৩০ জনের একটা জটলা ছিল। পায়ে সামান্য একটু আঘাত পাওয়ায় তারা উগ্র আচরণ করে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সাম্যকে উপর্যুপরি হামলা চালায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় পুলিশ এসেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এসেছে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে কাজ করছেন। রাতের মধ্যেই হয়তো জানতে পারব প্রকৃত ঘটনা কী।’
পরে ভিসির বাসভবনের সামনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে ঢাবি উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস।
এ সময় শাহরিয়ার আলাম হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং ঢাবি উপাচপার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশের ঘোষণা দেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির।
তিনি বলেন, ‘এমন একটা ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কোনোভাবে দায় এড়াতে পারেন না। তাই প্রক্টর এবং ভিসির পদত্যাগের দাবিতে বুধবার ছাত্রদল বিক্ষোভ ও সমাবেশ করবে।’
এর আগে রাত ১২টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় সন্ত্রাসীদের ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। সাম্য সিরাগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বাসিন্দা ফখরুল আলমের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শী সাম্যর বন্ধু বায়েজীদ আব্দুল্লাহ জানান, ঘটনা রাত সাড়ে ১১টার। সাম্য, বায়েজীদ আব্দুল্লাহ ও রাফি তিন বন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন রমনা কালীমন্দিরের গেট দিয়ে একটি মোটরসাইকেলে বের হচ্ছিলেন। এ সময় তাদের মোটরসাইকেলের সঙ্গে অপর একটি মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে।
অপর মোটরসাইকেল থাকা আরোহী উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তার সঙ্গে থাকা আরও ১০-১২ জন চারটি মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থলে আসেন। তাদের সঙ্গে সাম্য এবং তার বন্ধুদের কথা-কাটাকাটি হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে পড়েন সাম্যরা। দলটির প্রত্যেকে মারধর করতে শুরু করেন সাম্যদের। মারামারির এক পর্যায়ে সাম্যকে ছুরি দিয়ে জখম করে বসেন একজন। আহত হন দুই বন্ধুও।
বায়েজীদের ভাষ্যমতে, ওই দলটির কেউই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নয়। তাই তাদের কাউকেই চিহ্নিত করতে পারেননি তারা। কিন্তু একজনকে আটকে রাখা হয়েছিল। সাম্যর অবস্থার অবনতি হচ্ছে দেখে তারা তাকে সেখানে উপস্থিত লোকদের হাতে তুলে দিয়ে সাম্যকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকেও ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। আর হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক সাম্যকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফারুক বলেন, ‘সহপাঠীরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার ডান পায়ে ধারাল অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সহপাঠীরা জানান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে কথা কাটাকাটির জেরে দুর্বৃত্তরা তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। ঘটনাটি শাহবাগ থানা পুলিশকেও জানানো হয়েছে।’