মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারা দেশেই বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। চার দিনের টানা বর্ষণে তলিয়ে গেছে ফেনী, পটুয়াখালী ও নোয়াখালীর শহরসহ নিম্নাঞ্চল। এতে করে বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ।
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনীতে টানা বর্ষণে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মুহুরী নদীতে ভেসে গেছে দুটি দোকানঘর, নদীপাড়ের রাস্তা। ফুলগাজী বাজার থেকে রাজসপুর সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে শিক্ষা বোর্ড থেকে পরীক্ষা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জানা যায়নি। আবার বন্যা হওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ফলে ফেনী শহরের অলিগলি কোথাও কোথাও সড়কে তিন থেকে চার ফুট পানি জমেছে।
ডাক্তারপাড়া, শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক, পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিস, রামপুর, পাঠানবাড়ি, একাডেমি, নাজির রোড, সদর হাসপাতাল মোড, কলেজ রোড, পেট্রোবাংলা, শহীন একাডেমি সড়ক, মিজান রোডসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ।
জেলার দাগনভূঞা, সোনাগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলায়ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ও রাস্তাঘাট ডুবে ব্যাপক ভোগান্তি এবং পুকুর ও খামার পানিতে ভেসে গিয়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অতিরিক্ত পানির চাপে বিভিন্ন স্থানে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমতাবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারিয়া ইসলাম জানান, ভারী বৃষ্টির কারণে মুহুরী নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ফুলগাজীর রাজেশপুর সড়কে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে দুটি দোকান নদীতে ধসে গেছে। এতে করে ওই গ্রামের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা নাসরিন কান্তা বলেন, এখন প্রায় সব স্কুলেই সান্মাসিক পরীক্ষা চলমান রয়েছে। সড়ক ও স্কুলে পানি ওঠায় অনেক স্কুলে ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী পরীক্ষা স্থগিত করার নোটিস দেওয়া হয়েছে। তবে বোর্ড পর্যায়ে চলমান পরীক্ষা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো নোটিস পাওয়া যায়নি।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম জানান, মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ পথঘাট ডুবে গেছে। ড্রেনেজব্যবস্থা না থাকায় পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার অধিকাংশ খালবিল দখল হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় এই কৃত্রিম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাছরিন আক্তার জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, চার দিনের টানা ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে পটুয়াখালী শহরসহ নিম্নাঞ্চল । বিরতিহীন বৃষ্টির কারণে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও আশপাশের এলাকাগুলো হাঁটুসমান পানিতে ডুবে যায়। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, অফিসগামী কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের ভোগান্তির শেষ নেই। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন নিম্ন ও খেটে খাওয়া মানুষেরা। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ২১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস।
শহরের নতুন বাজার, পুরান বাজার, সদর রোড, চরপাড়া, জুবিলী সড়ক, মহিলা কলেজ, কালেক্টরেট স্কুল, কলেজ রোড, এসডিও রোড, পোস্ট অফিস সড়ক, সবুজবাগ, তিতাস সিনেমা হল সংলগ্ন, কালিকাপুর এলাকা, ডিসি অফিস, গণপূর্ত অফিস ও পুরানবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে শহরের ব্যবসায়ীসহ অফিসগামী মানুষকেও পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। রাস্তাঘাটে যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে রিকশাচালক ও দিনমজুরদের আয়-রোজগারে বড় প্রভাব পড়েছে। পটুয়াখালী পৌর প্রশাসক (উপসচিব) জুয়েল রানা বলেন, ‘টানা তিন দিনের বর্ষণে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা ভারী বর্ষণের কারণে পানি দ্রুত নামছে না। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পানি নিষ্কাশনের কাজ চলছে এবং ড্রেন পরিষ্কার করা হচ্ছে।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, নোয়াখালীতে তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে জেলা শহরের অধিকাংশ সড়ক ও অলিগলির রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। বৃষ্টিতে অলিগলি ছাড়াও কিছু কিছু প্রধান প্রধান সড়কে এবং বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
টানা বর্ষণে জেলা শহর মাইজদীর প্রেস ক্লাব সড়ক, টাউন হল মোড়, ইসলামিয়া সড়ক, ডিসি সড়ক, মাইজদী স্টেশন সড়ক (আনসার ক্যাম্প সড়ক), মহিলা কলেজ সড়ক, জেলখানা সড়ক, মাইজদী বাজার সড়ক, মাইজদী আবাসিক এলাকা সড়ক, জজকোর্ট-কোর্টবিল্ডিং সংযোগ সড়ক, মাইজদী পাবলিক কলেজ সড়কসহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, যানবাহন চালক ও পথচারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
এ ছাড়া মাইজদী পৌর বাজার, মাইজদী বাজার, দত্তেরহাট, সোনাপুরসহ নোয়াখালীর পৌরসভার বিভিন্ন বাজারে জলাবদ্ধতার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন আগত ক্রেতা-বিক্রেতারা।
এ ঘটনায় নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, বিভিন্ন এলাকা আমি ঘুরে দেখেছি। প্রধান সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি। তবে পাশের কিছু সড়ক পানিতে ডুবে গেছে।