স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই দাবি-দাওয়ার মিছিল শুরু হয়। পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন বঞ্চিতরা যেমন অধিকার আদায়ের আশায় মাঠে নামেন, তেমনি ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে ফ্যাসিবাদের দোসরদেরও আন্দোলনে নানা তৎপরতা দেখা যায়।
এ সময় দাবি-দাওয়া নিয়ে সবচেয়ে বেশি মাঠে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা একের পর এক দাবি নিয়ে আন্দোলন করেন। এ সময় সংঘাত-সংঘর্ষসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীদের বহু দাবি এরই মধ্যে সরকার পূরণ করলেও তাদের আবদারের যেন শেষ হচ্ছে না। নতুন নতুন দাবি নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় আকস্মিকভাবে বিক্ষোভ-রাস্তা অবরোধের ঘটনা ঘটছে। এতে একদিকে যেমন চরম জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়াও বিঘ্ন হচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসব অস্থিরতা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন খোদ শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার। আর শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পতিত আওয়ামী সরকারের সময় বঞ্চিত অনেকে দাবি জানাতে না পারায় এখন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আশা নিয়ে আন্দোলন করছেন। সরকারের উচিত আলোচনা করে যৌক্তিক দাবি দ্রুত পূরণ বা বুঝিয়ে আন্দোলন থামানো। তবে এক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদের দোসরদের হস্তক্ষেপসহ নানা কারণে কিছুটা ব্যর্থতা দেখা যাচ্ছে। যে কারণে আন্দোলন নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলনকারীদের মাঝে কিছু সুযোগসন্ধানী বা ফ্যাসিবাদের দোসররা ঢুকে বিশৃঙ্খলা করতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।
সূত্রমতে, সম্প্রতি ৮ দফা দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে রাজধানীতে বেশ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। দাবি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনায়ও সমাধান না পেয়ে শিক্ষার্থীরা ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে লংমার্চের হুমকি দেন। সেই আলটিমেটাম শেষ হয় মঙ্গলবার। এর আগের দিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলের বৈঠকে দাবি পূরণে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন স্থগিত করে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বলে মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও মঙ্গলবার রাতে আন্দোলন স্থগিতের কথা জানানো হয়। তবে বুধবার ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির ওপর ‘ভরসা রাখতে না পারায়’ সিদ্ধান্ত পালটে আবার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা। ফলে এ নিয়ে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।
এদিকে উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। উপাচার্য ড. মুহাম্মাদ মাছুদকে অপসারণ দাবিতে বুধবার সন্ধ্যায় কাফন মিছিল করেছে কুয়েট শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা জানান, কুয়েট উপাচার্যকে অপসারণ দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের ৫২ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও উপাচার্যকে অপসারণ না করায় তারা এ মিছিল করেন।
একই ইস্যুতে ফের শাহবাগ ‘ব্লকেড’(অবরোধ) ঘোষণা দেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বুধবার বিকালে রাজু ভাস্কর্যের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মোসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ এ ঘোষণা দেন। ঘোষণা অনুযায়ী রাত সাড়ে ৯টায় এ কর্মসূচি পালন ঘিরে উত্তপ্ত অবস্থা সৃষ্টি হয়।
সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার। বুধবার ফরিদপুরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অস্থিরতা যেন আর না ঘটে সে বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। পুরো সমাজ একটি অস্থিরতার মধ্যে চলছে এবং সব যে রাতারাতি ঠিক হয়ে যাবে, সেটা ভাবাও বোধহয় ঠিক নয়।
এর আগে সোমবার আকস্মিকভাবে উচ্চশিক্ষার সুযোগসহ ৮ দফা দাবিতে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সব গেট বন্ধ করে বিক্ষোভ করেন কৃষি ডিপ্লোমার শিক্ষার্থীরা। এ কারণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কয়েক ঘণ্টা অফিসে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। এই আন্দোলনকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে পাঁচ দফা দাবিতে পাল্টা বিক্ষোভ করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে দীর্ঘ সাত ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পরে কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সকে স্নাতক সমমান (ডিগ্রি পাস কোর্স) করার দাবিতে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন নার্স মিডওয়াইফাররা। একই দিন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও দলটির নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে সচিবালয় এলাকায় অবস্থান নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দেন কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেন। আগের দিন তারা সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন করেন তারা। এসব আন্দোলন ঘিরে প্রশাসনেও বেশ অস্থিরতা দেখা দেয়।
চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া আমার দেশকে বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার কোনো দাবির প্রতি ভ্রূক্ষেপ করেনি। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাই দাবি-দাওয়া বেশি উত্থাপন হচ্ছে। তিনি বলেন, পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা যেসব দাবিতে আন্দোলন করছে, তা যৌক্তিক। তাদের কয়েকজন আমার কাছেও এসেছিল। আমির তাদের সঠিক নিয়মে আন্দোলনের পরামর্শ দিয়েছি। কারণ রাজপথে আন্দোলন করলে জনগণের ক্ষতি হয়।
তিনি বলেন, আসলে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও দাবিতে আন্দোলন হবেই। সরকারের দায়িত্ব তাদের যৌক্তিক দাবি পূরণ করা অথবা বুঝিয়ে সান্ত্বনা দেওয়া। কিন্তু প্রশাসনের সর্বত্র আওয়ামী লীগের লোকজন বসে থাকায় তারা আন্দোলনকারীদের সঠিকভাবে হ্যান্ডলিং করে না। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে পেটানো হয়। তাছাড়া আওয়ামী লীগের অনেকে আন্দোলনে ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
একই ধরনের মন্তব্য করে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নামতে হয়। তা না হলে কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে না। তবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে বিকল্প কর্মসূচি দিলে ভালো হয়। সরকারের উচিত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
তবে শিক্ষাবিদ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান বলেন, দেশে এক কোটি শিক্ষিত বেকার রয়েছে। শিক্ষাজীবন শেষে চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। ওই হতাশা থেকেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোটি তরুণ শিক্ষার্থীর অভিভাবক হিসেবে তাদের ভবিষ্যতের বিষয়ে যেন একটি ব্যবস্থা করে যান। তাহলে শিক্ষার্থীরা এ ধরনের আন্দোলন করবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর আমার দেশকে বলেন, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে যে কেউ আন্দোলন করতে পারেন। তবে যাতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব আন্দোলনে দেশি-বিদেশি কোনো কুচক্রী মহলের ইন্ধন আছে কি না, সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
কুয়েট শিক্ষার্থীদের কফিন মিছিল
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য ড. মুহাম্মাদ মাছুদকে অপসারণের দাবিতে কাফন মিছিল করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে এ কফিন মিছিল বের করেন তারা। শিক্ষার্থীরা জানান, কুয়েট উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশনের ৫২ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও উপাচার্যকে অপসারণ না করায় এ মিছিল করেন তারা।
গত ১৫ এপ্রিল থেকে ভিসির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। গত ২১ এপ্রিল থেকে তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বুধবার শিক্ষা উপদেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিনিধিদল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করতে কুয়েটে যায়। সকালে এ নিয়ে আলোচনায় বসেন তারা। তবে এখনো কোনো সমাধান আসেনি।
তবে বুধবার ফরিদপুরে সাহিত্য ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়ে সরকারের মনোভাব সম্পর্কে শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার বলেন, আমি কোনো ব্যক্তি নিয়ে কথা বলব না। পুরো প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা আলোচনা করছি। এখানে অংশীদার যারা ছিলেন, তাদের নিয়ে কমিটি হচ্ছে। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে তারা যে রিকমন্ডেশন (পরামর্শ) দেবেন, সেগুলো সরকার বিবেচনায় নেবে। তবে সমস্যা সমাধান করার যে প্রক্রিয়া, আমরা সেটি ত্বরিত সম্পাদন করছি। আশা করি দ্রুত সমাধান হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, আগের সরকারের সময় শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া উত্থাপন করার সুযোগ ছিল না। যখনই কেউ দাবি-দাওয়া উত্থাপন করত, তখন রাষ্ট্র ঝাঁপিয়ে পড়ত তাদের ওপর। বর্তমানে রাষ্ট্র মনে করে, এখন একটি ব্যবস্থা রয়েছে। তাদের দাবি-দাওয়া আমরা সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখছি। আমরা চেষ্টা করব তারা যেটি চাচ্ছে, সেটি নিয়ম ও আইনের মধ্যে এবং যুক্তিসঙ্গত সমাধান করার। তারা হয়তো অতীতের মতো ভাবছে সমাধান হবে না। কিন্তু আমরা অতিদ্রুত সমাধান করব।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ফের আন্দোলনের ঘোষণা
ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির ওপর ‘ভরসা রাখতে না পারায়’ সিদ্ধান্ত পাল্টে আবার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানান শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফরম কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের সেল সম্পাদক (অস্থায়ী) মো. সাব্বির আহমেদ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে কমিটি গঠন করেছে, তার ওপর শিক্ষার্থীরা ভরসা করছে না। আগেও এমন কমিটি হয়েছিল কিন্তু দাবি-দাওয়া পূরণ হয়নি। তাই সব শিক্ষার্থীর সম্মতিতে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি সম্মেলন হবে। সেখানে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সম্মেলনে অংশ নিতে বিভাগীয় পর্যায় থেকে পলিটটেকনিক শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিরা ঢাকা এসে পৌঁছেছেন। অন্যদেরও আমরা চলে আসতে বলছি।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে চলমান আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। তবে দাবি বাস্তবায়নে গড়িমসি দেখলে ফের আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন তারা। পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়নে মঙ্গলবার বিকালে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে আট সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ। কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের একজন উপদেষ্টাকেও কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়। ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়ন করে তিন সপ্তাহের মধ্যে বিভাগের সচিবের কাছে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয় কমিটিকে।
মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার সিরাজ-উদ-দৌলা খান স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সড়ক ও রেলপথ অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। এতে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশের ছাত্র প্রতিনিধিগণ ২১ এপ্রিল কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিবের সঙ্গে এ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি)-এর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ছাত্র প্রতিনিধিদের ছয় দফা দাবির মধ্যে যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের লক্ষ্যে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ (টিএমইডি) আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম আন্দোলনরত ছাত্রদের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান।
এরই মধ্যে যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণের লক্ষ্যে এ বিভাগ, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, আইইবি, আইডিইবি এবং ছাত্র প্রতিনিধিসহ আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি দাবিগুলো পূরণে সুপারিশ প্রণয়ন করবে। ওই সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আন্দোলনরত ছাত্রদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা দূর হয়ে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসবে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশা করা প্রকাশ করা হয়।