বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:২৯ অপরাহ্ন

আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি এনসিপির

  • সময়: শনিবার, ২২ মার্চ, ২০২৫, ৯.২৪ এএম
  • ১৭ জন

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার চলাকালে দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, নির্বাচন বা একটি রাজনৈতিক দল কার্যক্রম করতে পারবে কি না- এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সরকার ও বিদ্যমান রাজনৈতিক দল এবং জনগণের রয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী বা রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের এ বিষয়ে মন্তব্য, পরিকল্পনা বা সিদ্ধান্ত প্রস্তাবনা দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এ ধরনের চর্চা যাতে বাংলাদেশে না হয়। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো রাজনৈতিক মহল নেবে। সেটা গণতান্ত্রিকভাবেই হবে, সামনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণ করতে চাইছি।

শুক্রবার রাজধানীর বাংলামোটরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক।

নাহিদ ইসলাম বলেন, একাত্তরের গণহত্যার বিচার নিয়ে প্রশ্ন আসছে। এটা আমাদের পুরোনো প্রজন্মের দায়। আমরা এখনো একাত্তরের গণহত্যার বিচার নিষ্পন্ন করতে পারিনি, সমাধান করতে পারিনি, রাজনৈতিক প্রশ্নগুলোর। সেটির পুনরাবৃত্তি না হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের বিষয়ে আমরা কঠোর। এ বিচারটা নিষ্পন্ন দেখতে চাই। আমরা মনে করি, যত গণহত্যা হয়েছে একাত্তর থেকে শুরু করে বাংলাদেশে সেগুলোর বিচার আমরা চাই। তবে রাজনৈতিকভাবে এ মুহূর্তে সবচেয়ে কনসার্নের জায়গা হচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলটির বিচার, নিবন্ধন বাতিল, সাংগঠনিক বিচারের জন্য সরকারসহ ফ্যাসিবাদী সব রাজনৈতিক দলের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।

গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার বিচার না করে কেবল নির্বাচনের দিকে গেলে বাংলাদেশের গুণগত পরিবর্তন হবে না বলে মনে করেন নাহিদ ইসলাম।

আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন নিয়ে ঊর্ধ্বতন সেনাকর্মকর্তার প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, রাজনীতিতে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করেছে কি না বা কোনো প্রভাব রাখার চেষ্টা করছে কি না, সেটা নিয়ে আমরা সন্দিহান। যেহেতু আমাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যে আলোচনা হয়েছে, সেটি রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মনে করছি। রাজনীতিবিদরা রাজনীতি নির্ধারণ করবে। চলমান ঘটনাপ্রবাহের নেতৃত্ব রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকা উচিত। সে জায়গায় সন্দিহান বলেই বৃহস্পতিবার আমার অবস্থানটি (ফেসবুক স্ট্যাটাস) নিতে হয়েছে।

৫ আগস্টের পর আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন জায়গায় সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ১১ মার্চের প্রেক্ষাপট ভিন্ন ছিল। অন্যপ্রান্তে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। ঘটনাপ্রবাহ স্ট্যাটাসে পরিষ্কার করেছি। ওখানে সবকিছু উপস্থাপন করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বলে জানান হাসনাত আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে সেনাপ্রধান একটা বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকে দেশের অনেকেই কথা বলেছেন, এটাকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে অসমীচীন হিসেবে ধরা হয়েছে। সরকারপ্রধানকে যেভাবে সম্বোধন করা হয়েছে, আওয়ামী লীগসহ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে আলোচনার কথা বলা হয়েছিল, তখন গিয়েছিলাম।

সেনাবাহিনী কি শেখ হাসিনার প্রশ্নে কমিটেড কি না- এমন প্রশ্নে হাসনাত বলেন, এটা অন্যপক্ষ (ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) বলতে পারবেন।

নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে হাসনাত বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ছাত্র-নাগরিক ও ফ্যাসিবাদবিরোধী ক্রিয়াশীল দলগুলো ঐক্যবদ্ধ রয়েছি, ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপত্তা ঝুঁকি বোধ করছি না।

৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নাম ও মার্কা অপ্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, এখন এটাকে যদি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র বা এজেন্সি দিয়ে অপচেষ্টা চালানো হয়। সেক্ষেত্রে আমরা সাধারণ মানুষ, নির্যাতিত-নিপীড়িত, গুম-খুনের শিকার মানুষের কাছে কমিটেড। কোনো এজেন্সি বা বিদেশি শক্তির কাছে কমিটেড নয়।

পতিত আওয়ামী লীগের বিচার ও নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের গণহত্যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেলেও এখনো তাদের বিচারিক কার্যক্রম দৃশ্যমান হয়নি। আওয়ামী লীগের বিচারের আগে এই দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে কোনো পর্যায়ের ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম করতে না পারে, সেজন্য অবিলম্বে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, শুধু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডই নয়; এর আগের শাপলা চত্বরের গণহত্যা, বিচারবহির্ভূত গণহত্যা, ভোট ডাকাতি, গুম, খুনসহ সব অপরাধের প্রকাশ্যে বিচার করতে হবে।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে কি না এই প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন নাহিদ ইসলাম। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এ ধরনের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত বলেও জানিয়েছেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, আওয়ামী লীগ কোনো গণতান্ত্রিক দল নয়। তারা নির্বাচনের মাধ্যমে পরাজিত হয়নি। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তারা পরাজিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ পুরোপুরি একটি ফ্যাসিবাদী দল।

ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনিতক দল ও গোষ্ঠীকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com