শেয়ারবাজারে মার্জিন ঋণসুবিধার নিয়মকানুন সংস্কারের সুপারিশ করেছে পুঁজিবাজার সংস্কারসংক্রান্ত টাস্কফোর্স। সুপারিশ অনুযায়ী, যেসব বিনিয়োগকারীর মোট বিনিয়োগ ১০ লাখ টাকার কম, তাদের মার্জিন ঋণসুবিধা বন্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে, যেসব বিনিয়োগকারীর কোনো নিয়মিত আয়ের উৎস নেই, তাদের জন্যও ঋণসুবিধা সীমিত রাখার কথা বলা হয়েছে।
গতকাল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) টাস্কফোর্সের সদস্যদের কাছ থেকে সুপারিশসংবলিত প্রাথমিক প্রতিবেদন গ্রহণ করেছে। এতে মার্জিন ঋণের আইনি কাঠামো সংস্কারের পাশাপাশি ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শুধুমাত্র ১০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলেই হবে না, বরং সেকেন্ডারি বাজারে কমপক্ষে ছয় মাসের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। একই সঙ্গে, বিনিয়োগকারীর ঋণ সক্ষমতা যাচাই করা বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এছাড়া, যেসব শেয়ারের বিপরীতে ঋণসুবিধা দেওয়া হবে, তার একটি তালিকা প্রতিদিন স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে প্রকাশ করার সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। এ-শ্রেণির কোম্পানিগুলোর শেয়ার, যাদের মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ৩০-এর বেশি নয়, সেগুলোকে ঋণযোগ্য শেয়ার হিসেবে বিবেচনা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পিই রেশিও ২০-এর মধ্যে সীমিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ব্রোকারেজ হাউসের পাশাপাশি মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকেও আইন সংশোধনের মাধ্যমে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক, প্লেসমেন্ট শেয়ারধারী এবং বিক্রয় নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা শেয়ারগুলোকে ঋণসুবিধার বাইরে রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
টাস্কফোর্সের একজন সদস্য দৈনিক আমার দেশকে জানান, ‘আমাদের সুপারিশগুলোর মূল লক্ষ্য হলো শেয়ারবাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি কমানো। বিশেষ করে, যেসব বিনিয়োগকারীর পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা নেই বা আর্থিক সক্ষমতা কম, তাদের জন্য ঋণসুবিধা সীমিত রাখাই হবে সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।’
বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কাছে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। এ সময় বিএসইসির অন্যান্য কমিশনার ও টাস্কফোর্সের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব সুপারিশ কার্যকর হলে শেয়ারবাজারে ঋণ ব্যবস্থাপনা আরও সুশৃঙ্খল হবে এবং বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বিএসইসি ও অন্যান্য নীতিনির্ধারকদের হাতে রয়েছে।