শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন

ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিস্থীতি নেই

  • সময়: বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ৬.০৬ পিএম
  • ৪০ জন

সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যানজট পরিস্থিতির অবনতির কারণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশান অঞ্চলের তৃণমূল পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ডিসিসিআইর “আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক, যানজট ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক বাণিজ্যের চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির কারণে প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে গিয়ে আমাদের উদ্যোক্তাদের ক্রমশই কঠিনতর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, সেই সাথে কর ও ভ্যাট ব্যবস্থার জটিলতা ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাড়িঁয়েছে।

বিশেষকরে, কর ও ভ্যাটের নিয়মিত পরিবর্তন, অগ্রিম আয়কর ও রেগুলেটরি ডিউটির অতিরিক্ত বোঝা, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতার কারণে দেশের বেসরকারিখাতের উপর অতিরিক্ত অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।

এছাড়া সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, যানজট পরিস্থিতির অবনতির কারণে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ পরিলক্ষিত হচেছ না বলে অভিমত জ্ঞাপন করেন ডিসিসিআই সভাপতি। তাসকীন আহমেদ বলেন, ঋণপত্র খোলার জটিলতা, এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তিতে পদ্ধতিগত প্রতিবন্ধকতা এবং উচ্চ সুদ হার আমাদের স্থানীয় শিল্পায়নকে বাধাগ্রস্থ করছে। এমতাবস্থায় দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারিখাতের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং কার্যকর বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।

এলসি সমন্বয়ের দূীর্ঘসূত্রিতা, ডলারের মূল্যের অস্থিরতা, ব্যাংক ঋণের সুদের উচ্চ হার, ভ্যাট প্রদানে হয়রানি, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়ার জটিলতা ও উচ্চ ফি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং অসহনীয় যানজটের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি ক্রমশই অবনতি হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেন মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীরা।

উল্লেখ্য, রাজধানীর তৃণমূল পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের সমস্যা চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি করণীয় নির্ধারনের লক্ষ্যে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত “আয়কর, ভ্যাট, শুল্ক, যানজট ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি” শীর্ষক মতবিনিময় সভা ৬ ফেব্রুয়ারি ডিসিসিআই গুলশান সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গুলশান, মহাখালী, বনানী এবং বাড্ডা অঞ্চলের ১৪টি এসোসিয়েশনের নেতা এবং বেশকিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক (বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ-এফইপিডি) মো. সাইয়েদুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব (মূসক বাস্তবায়ন) মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (গুলশান বিভাগ) মো. তারেক মাহমুদ বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক (বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ) মো: সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, এলসি মার্জিন শতভাগ হবে কিনা, এটি নির্ভর করে ব্যাংক ও ভোক্তার সম্পর্কের উপর এবং এলসি মার্জিনের বিষয়টি সব পণ্যের ক্ষেত্রে এক নয়। তিনি বলেন, কোভিড মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে মার্কিন ডলারের মূল্যের অস্বাভাবিক ওঠানামার কারণে আমাদের স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সামগ্রিক আর্থিকখাতে স্থিতিশীলতা আনায়নে সরকারি-বেসরকারিখাতের সমন্বিত উদ্যোগ জরুরী বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

এনবিআরের প্রথম সচিব (মূসক বাস্তবায়ন) মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, চলতি অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বেশ চ্যালেঞ্জিং এবং এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তিনি ব্যবসায়ী সহ সবার সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, সম্প্রতি স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং প্রান্তিক পর্যায়ে করজাল বিস্তারের লক্ষ্যে এনবিআর কাজ করছে। এছাড়াও সার্বিকভাবে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে একটি অটোমেটেড এবং স্বচ্ছ রাজস্ব ব্যবস্থাপনার কোন বিকল্প নেই বলে তিনি তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।

ডিএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (গুলশান বিভাগ) মো. তারেক মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর জনগনের আস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তবে, চাঁদাবাজি, হয়রানি ও ফুটপাত দখল মুক্ত করতে ব্যবসায়ীসহ সব স্তরের জনগনকে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তার আহ্বান জানান এবং সবার সম্মিলিত উদ্যোগে বিদ্যমান অচলাবস্থা নিরসন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে গুলশান ১নং ডিএনসিসি দক্ষিণ পাঁকা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি’র সহ-সভাপতি মোঃ আবু তাহের বলেন, এলসি খোলা হতে সমন্বয় পর্যন্ত প্রায় তিন মাস সময় লেগে যায়, দীর্ঘসময়ের জন্য টাকা আটকে থাকার কারণে ব্যবসায়ীদের মূলধন স্বল্পতা দেখা দিচেছ পাশাপাশি ডলারের মূল্যের অস্থিরতার কারণেও ব্যবসায়ীরা এলসি’র মূল্য পরিশোধে বিরাট ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

মহাখালী বাজার ব্যবসায়ী সমিতি’র সভাপতি ফিরোজ আলম স্বপন জানান, ভ্যাট হার বৃদ্ধি, ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের উচ্চ ফি এবং দীর্ঘসূত্রিতার কারণে ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন। আমিন হোসেন এ্যান্ড কোং-এর পার্টনার মোহাম্মদ আল আমিন জানান, আয়কর আইনের ১৬৩ধারা এবং অগ্রীম আয়কর সমন্বয়ের দীর্ঘসূত্রিতার জন্য ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন এবং অনেকক্ষেত্রে ব্যবসায়ের মূলধন থেকে ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়।

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী এবং সহ-সভাপতি মো. সালেম সোলায়মান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com