রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকে উদ্বেগজনক হারে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকগুলোর বড় অঙ্কের প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে মূলধন ঘাটতি আরো ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাড় পাওয়ার পরও মূলধন ঘাটতি থেকে বের হতে পারছে না।
ব্যাংকগুলো হলোÑজনতা, অগ্রণী, রূপালী ও সোনালী। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই চারটি ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণ স্থিতি ছিল দুই লাখ ৯৭ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ৩৯ দশমিক ১৬ শতাংশ।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চার ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোকে ৩৮ হাজার ২৫৮ কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ এই ছাড়ের কারণে ব্যাংকগুলোর আর্থিক বিবরণীতে মূলধন ঘাটতি রয়েছে মাত্র ১৩ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা। চার ব্যাংকের মধ্যে এখন সবচেয়ে খারাপ অবস্থা জনতা ব্যাংকের। আর তুলনামূলক ভালো অবস্থানে রয়েছে সোনালী ব্যাংক।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, অনিয়মের মাধ্যমে এসব ব্যাংক থেকে অনেক ঋণ দেওয়া হয়েছে। এসব ঋণ আদায় না হওয়ায় খেলাপি হয়ে পড়ছে। উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণের কারণে প্রয়োজনীয় মুনাফা করতে পারছে না ব্যাংকগুলো। আবার নতুন করে মূলধন জোগান দিচ্ছে না সরকার। তবে অবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আলোকে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতি পূরণের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও জমা দিয়েছে। অনেক ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বয়ক ও পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যদিও দৃশ্যমান কোনো উন্নতি হয়নি।
তথ্য অনুযায়ী, জনতা ব্যাংকের মোট ঋণ স্থিতি ৯১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৫৫ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা বা ৬৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকটি ১৯ হাজার ৯২৮ কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা পায়। ফলে ঘাটতি দেখানো হয়েছে মাত্র ছয় হাজার ৪৯২ কোটি টাকা।
অগ্রণী ব্যাংকে মোট ঋণ রয়েছে ৬৯ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি রয়েছে ১৫ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১১ হাজার ৬৯ কোটি টাকার ছাড় পাওয়ায় ঘাটতি দেখানো হচ্ছে মাত্র চার হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।
এ ছাড়া রুপালী ব্যাংকের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির ছয় হাজার ৯৪৭ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি রয়েছে। ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সুবিধা পায় চার হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৯২ কোটি টাকা।
সোনালী ব্যাংকের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১৪ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা বা ১৬ দশমিক ২১ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর ব্যাংকটির মূলধন ঘাটতি রয়েছে দুই হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। তবে দুই হাজার ৯০৬ কোটি টাকা ছাড় ছিল। যে কারণে ব্যাংকটির মূলধন উদ্বৃত্ত দেখাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের এমডি বলেন, ‘খেলাপি ঋণ বাড়লে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। এতে বেড়ে যায় মূলধন ঘাটতি। সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু হলো খেলাপি ঋণ।