শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৫ অপরাহ্ন

পাতে মাছ-মাংস তোলা বড় দায়

  • সময়: রবিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০২৫, ৪.১০ পিএম
  • ৫৬ জন

বাজারে এমনিতেই চালের দাম বাড়তি। এর মধ্যে বিয়ের মৌসুমে বাড়তি মুনাফা করতে মাংসের বাজারেও সিন্ডিকেটের থাবা পড়েছে। এসএমএসের মাধ্যমে প্রতি রাতেই নির্ধারণ হচ্ছে মুরগির দাম। পরিস্থিতি এমন এক কেজি ব্রয়লার মুরগি কিনতে ক্রেতার সর্বোচ্চ ২২০ টাকা ব্যয় হচ্ছে। লেয়ার ও সোনালি মুরগির কেজিও ৩০০ টাকার ওপরে। সঙ্গে এক কেজি গরুর মাংস ৮০০ ও খাসির মাংস ১২০০ টাকা হওয়ায় এ সব পণ্য কিনতে ক্রেতার নাভিশ্বাস বাড়ছে। পাশাপাশি মাছের দামেও দমবন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। এক সময়ে ১০০-১২০ টাকা কেজি পাঙাশ এখন প্রায় তিনশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাছ কিনতে গুনতে হচ্ছে ৫০০ থেকে হাজার টাকা। এতে গরিবের পাতে মাছ-মাংস তোলা যেন বড় দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে একাধিক ক্রেতার সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, সপ্তাহে একবার মাংস কিনতেন, তারা মাসে একবার পরিবারের জন্য ন্যূনতম আমিষ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন। অর্থাৎ তাদের সাধ আছে ঠিকই, কিন্তু মাছ-মাংস কেনার সাধ্য হচ্ছে না। বাজারের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা, যা এক মাস আগেও ১৭০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৩০ টাকা। প্রতি কেজি লেয়ার মুরগি ২৮০-২৯০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৫৫০ থেকে ৫৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া রাজধানীর খুচরা বাজারে গরুর মাংস হাড়সহ বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা, যা সাত দিন আগেও ৭৬০-৭৮০ টাকা ছিল। আর প্রতি কেজি হাড়ছাড়া গরুর মাংস কিনতে ক্রেতার গুনতে হচ্ছে ১০০০ টাকা। সঙ্গে ছাগল ও খাসির মাংস ১০০০-১২০০ টাকা কেজি দারে বিক্রি হচ্ছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন যুগান্তরকে বলেন, সামনেই রমজান মাস। আর এর মধ্যে যেভাবে বাজারে মাংসের দাম বাড়ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকৃত যে উৎপাদন ব্যয়, তার চেয়ে বাজারের দাম অনেক বেশি। তাই সংশ্লিষ্টদের এদিকে নজর দিতে হবে। এছাড়া মাছের দামেও ক্রেতারা অসন্তুষ্ট।

ছুটির দিন নয়াবাজারের নিত্যপণ্য কিনতে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা মো. হামিম বলেন, ছুটির দিন বাসায় একটু মাছ-মাংসের আয়োজন করা হয়। বাচ্চারা বায়না করে শুক্রবার মাংস খাবে। কিন্তু যে টাকা আয় করি তা দিয়ে গরুর মাংস কেনার সাধ্য নেই। ব্রয়লার মুরগি দিয়ে রান্নায় মাংসের চাহিদা মেটানো হতো। এখন এই মুরগির কেজি ২১০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। দেখার যেন কেউ নেই। তিনি বলেন, নতুন সরকার আসাতে ভেবেছিলাম বাজারে নজরদারি বাড়বে। কিন্তু মূল্য পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। কষ্ট বাড়ছে আমাদের মতো ভোক্তার। নয়াবাজারের খুচরা মুরগি বিক্রেতা মো. হাসেম আলী বলেন, এখন বিয়ের মৌসুম। তাই বিক্রিও ভালো। আর এই সুযোগ নিচ্ছে কাপ্তান বাজারের পাইকারি মুরগি বিক্রেতা। তারা রোজ রাতে এসএমএসের মাধ্যমে বাড়তি মূল্য নির্ধারণ করে দিচ্ছে। যে কারণে পাইকারি পর্যায় দাম বেড়ে খুচরা পর্যায়ে প্রভাব পড়ছে। ক্রেতারা বেশি দামে কিনলেও খামারিরা দাম পাচ্ছে না। অতি মুনাফা করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, বাজারে মুরগির দাম বেশি থাকলেও খামার পর্যায়ে যথাযথ দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য অনেক খামারি ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। গুটিকয়েক ব্যবসায়ী মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। মুরগির খাবারের বাজারও তাদের দখলে। এতে ক্ষুদ্র খামারিদের জন্য দিন দিন পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। কাপ্তান বাজারের শাহ আলী ব্রয়লার হাউজের বিক্রেতা মো. শাকিল বলেন, শীতের কারণে খামারে মুরগির বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। যে কারণে বড় মুরগির সরবরাহ কমেছে। ফলে চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় দাম বেড়েছে।

বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সব সময় মাংসের দাম সিটি করপোরেশন ঠিক করে। বর্তমানে তারা মূল্য নির্ধারণ করছে না। তবে বাজারে মূল্য নিয়ন্ত্রণে তদারকি করা হচ্ছে। অধিদপ্তরের টিম সার্বিকভাবে অভিযান পরিচালনা করছে।

অন্যদিকে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বড় আকারের পাঙাশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। ছোট পাঙাশ মাছ কেজিপ্রতি ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি বড় আকারের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪৫০ টাকা, মাঝারি থেকে ছোট আকারের রুই মাছ প্রতি কেজি ২২০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাতল মাছ ৩০০-৩৫০ টাকা, পাবদা ৪০০-৬০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৬৫০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাঁচকির কেজি ৩০০ টাকা, মলা মাছ ৩০০-৪০০ টাকা, কৈ মাছ ৩৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি নতুন পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েক দিন আগে ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০-৭০ টাকা। তবে সরবরাহ বাড়ায় সবজির দাম কমেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লম্বা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, গোল বেগুন ৫০ টাকা। এ ছাড়া ঝিঙা প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ২০ টাকা, মূলা প্রতি কেজি ২০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বিচিওয়ালা শিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, বিচি ছাড়া শিম ৩০ টাকা, মটরশুঁটি ১০০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ২০ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা এবং প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা, যা এক মাস আগে ৭২-৭৫ টাকা ছিল। নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০-৮৬ টাকা, যা আগে ৭০-৭৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিআর-২৮ ও পাইজম চাল প্রতি কেজি ৬৩-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ৫৭-৫৮ টাকা ছিল।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com