মূল্যস্ফীতির চাপে দিশাহারা মানুষ। খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৮০ শতাংশের ওপরে। বাজারে চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, আলুর চড়া মূল্যে সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই সংকটের মধ্যে আছেন। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও, মানুষের আয় বাড়ছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তার তেমন সুফল পাচ্ছেন না ক্রেতা-ভোক্তারা। বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না সরকার। এর মাঝেই শুল্ক ও কর আরোপ হচ্ছে বিভিন্ন পণ্য ও সেবায়। এতে ক্ষুব্ধ সাধারণ ক্রেতা-ভোক্তারা।
ক্রেতা-ভোক্তারা বলছেন, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সংসার চালানো নিম্ন-মধ্যবিত্তদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। সংসার চালানোই যেখানে কঠিন, সেখানে বাড়তি ভ্যাট যেন তাদের কাছে ‘গলার কাঁটা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাধারণ মানুষ সংসার চালানোয় হিমশিম খেতে হবে জানালেও বিক্রেতারা বলছেন ভ্যাট বাড়লেও সমস্যা নেই। ক্রেতাদের কাছ থেকে উসুল করা হবে। তবে একশটির মতো পণ্য ও সেবার ওপর অতিরিক্ত ভ্যাট এবং করারোপে অসন্তোষ উভয়পক্ষ। তাদের দাবি, কী এমন হলো যে হঠাৎ করে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়াতে হলো। এতই টাকার সংকট পড়লে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনলেই তো হয় বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগীরা।
তথ্য বলছে, পুষ্টি থেকে নিয়ে তামাকজাত পণ্য, হোটেল-রেস্টুরেন্ট কোনো কিছুই চোখ এড়ায়নি অন্তর্বর্তী সরকারের। বিদেশি ফল আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। ৩০ শতাংশ থেকে ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে শুকনো ফলে এবং মেশিনে তৈরি বিস্কুটের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫ শতাংশ।
তা ছাড়া সরকারের এই করারোপের নজর থেকে বাদ যায়নি রান্নাঘরও। কর বাড়িয়ে এলপি গ্যাসের ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। যা দৈনন্দিন জীবনমানে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতা ও শ্রমজীবীরা।
বৃহস্পতিবার রাতে একটি অধ্যাদেশ ও একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। এর আগে ১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির এনবিআরের প্রস্তাব পাস হয়। মূলত বাংলাদেশকে দেওয়া আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের শর্ত হিসেবে অর্থবছরের মাঝামাঝি এসে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর শুল্ক-কর বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
তবে মাঠ পর্যায়ে এখনও তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে জানান একাধিক বিক্রেতা। দু-এক দিনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন হবে বলে বলছেন তারা। গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, হাতিরপুলসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারের মধ্যে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের মধ্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
বেসরকারি সংস্থায় চাকরিরত মনির হোসেন জানান, আর্থিক সংকটে থাকা সরকার সাধারণদের ঘাড়ে কেন সব কিছু চাপিয়ে দেবে? তিনি বলেন, প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করি, আমার বেতন ২৫ হাজার টাকা। বলা নেই কওয়া নেই সরকার হুট করে আমাদের ওপর ভ্যাটের দায় চাপিয়ে দিল, এটা কেমন কথা! আমার বেতন তো বাড়বে না। সরকার আমার কোম্পানিকে বলে বেতনটা বাড়িয়ে দিক। তাহলে যা মন চায় ততটুকু ভ্যাট বাড়িয়ে নিলেই তো হয়।
শরিফুল শেখ নামের এক ক্রেতা বলেন, সব দায় কি শুধু সাধারণরা নেবে। কত বড় বড় শিল্পপতি রয়েছেন তাদের আয়ের ওপর ভ্যাট বাড়ালেই তো হয়। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যত টাকা পাচার হয়েছে তা ফেরত আনলেই তো হয়। সরকার আসলে কি চাইছে আমরা কিছুই বুঝতে পারছি না।
এ সময় তিনি আরও বলেন, সরকার যদি আমাদের সাধারণদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যর্থ হয় তাহলে দায় স্বীকার করলেই তো হয়। দাম কমার কথা বলে আমাদের মিথ্যা আশ্বাস কেন দেবে।
এদিকে ব্যবসায়ী মনোওয়ার হোসেন বলেন, সরকার ভ্যাট যা বাড়াতে পারে আমাদের সমস্যা নেই। কিছু বলারও নাই। আমরা বেশি দামে কিনলে ক্রেতাদের কাছ থেকে তা উসুল করব। এখানে আমাদের কোনো লাভ-লস নেই। তবে সরকারকে জনগণের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে জানান তিনি।
আরেক ব্যবসায়ী কাউসার আহমদ জানান, নির্বাচিত সরকার না আসা পর্যন্ত কোনো কিছুই ঠিক হবে না। এই সরকার যতই বলুক সবকিছু নিয়ন্ত্রণে বা মূল্য কমছে আসলে এগুলো সব আমাদের ধোঁকা দেওয়া। কাল যে ক্রেতা আমার কাছ থেকে ১০০ টাকায় একটা পণ্য নিয়েছে পরশু সেই ক্রেতাকে যখন একই পণ্য ১৩০ টাকা বলব তখন এই পরিস্থিতি তো আর সরকার সামলাবে না। আমাদের ফেস করতে হবে। হঠাৎ করে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত দুঃখজনক এবং অযৌক্তিক বলে মনে করি।