বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৭ পূর্বাহ্ন

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচন নয়

  • সময়: বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২৫, ১১.২৮ এএম
  • ৬ জন

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হোক, তা চায় না বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, বর্তমান সরকারের একমাত্র দায়িত্ব হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ মসৃণ করা। এর জন্য যতটুকু প্রয়োজন, সংস্কার কাজ শেষ করে দ্রুত নির্বাচনে রোডম্যাপ ঘোষণা করা।

গত সোমবার রাতে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এমন অভিমত জানান বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।

প্রসঙ্গত, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো পদক্ষেপ এখনও দৃষ্টিগোচর হয়নি। তবে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করার সময় এ বিষয়টি উঠে আসে।

গত সোমবার আগারগাঁওয়ে জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের (এনআইএলজি) সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এ কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, তারা ঢাকার বাইরে গিয়ে যেসব মতামত পাচ্ছেন, সেখানে মানুষের কাছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রাধান্য পাচ্ছে। তবে ঢাকায় রাজনীতিবিদদের মধ্যে এ বিষয়ে তেমন কিছু শোনা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন যেসব দল দ্রুত নির্বাচন চাইছে, সেসব দলের স্থানীয় নেতারা দুটি নির্বাচনের কথাই বলছেন। কেউ আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথা বলছেন। একই দিনে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের কথাও বলছেন। তবে স্থানীয় পর্যায়ে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন চায়- এমনটা কম বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের এ বিষয়টি উঠে আসে। কমিটির সদস্যরা এ নিয়ে একমত পোষণ করেন যে, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো অবস্থাতেই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করতে পারে না। এটা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। তাছাড়া বিগত সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে স্থানীয় নির্বাচন হয়নি। তারা দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের জন্য রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানান।

এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আমরা এ মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচন চাই। অন্য কোনো বিষয় আমাদের চিন্তার মধ্যে নেই।

এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা তাদের জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা থেকে পিছিয়ে আসা এবং এ ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নে সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এ ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে বর্তমান সংবিধানকে বাতিল করা যাবে না বলে মনে করেন তারা। কেননা, বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোয় অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়েছে বলে অভিমত দিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, এ ঘোষণায় বিগত ১৬ বছরের আন্দোলন আর ত্যাগের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্তি চেয়েছেন তারা। কেননা, কেবল জুলাই-আগস্টের ৩৬ দিনের গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটেনি। সামনের কোনো বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এ বিষয়টি তুলে ধরবে বিএনপি। এছাড়া দলটি বিগত ১৬ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে সারা দেশে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, সভা-সমাবেশ করে জনমত গড়ে তোলারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।

এর আগে এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, তারা মনে করেন, এ ঘোষণায় বিগত ১৬ বছরের আন্দোলন-সংগ্রাম, গুম-খুন, নির্যাতন-নিপীড়ন, জেল-জুলুমসহ রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা সব থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে একমত হয়ে তা করতে হবে।

গত ডিসেম্বরে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে এক জাতীয় সংলাপে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ করা উচিত বলে যে বক্তব্য রেখেছেন, তাও স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উঠে আসে। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্য মানা যায় না। কারণ, একটা দীর্ঘ পরিক্রমায় ভোটার হওয়াদের বয়স ১৮ নির্ধারিত হয়েছে।

তাছাড়া যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই ভোটার হওয়ার বয়স ১৮ নির্ধারিত রয়েছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের আশঙ্কা, ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ নির্ধারণ করার মাধ্যমে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে কিনা! এছাড়া ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পেছনেও নির্বাচন পেছানোয় চাপ থাকতে পারে। কেননা, অন্তর্বর্তী সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নিয়ে ধারণা দিলেও পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ দেয়নি।

বৈঠকে নানা ষড়যন্ত্রের পরও দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন, এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছে স্থায়ী কমিটি। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, চিকিৎসা শেষে বেগম জিয়া সুস্থ হয়ে দেশে ফিরবেন।

বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024
Developed BY www.budnews24.com