মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন

অনিয়মের অভিযোগে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে বিজিএমইএ প্রশাসক

  • সময়: রবিবার, ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ৪.১২ পিএম
  • ৭ জন

নানা অনিয়মের অভিযোগে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন পোশাক উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক সমিতির প্রশাসক আনোয়ার হোসেন। তিনি রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান। গত ২৮ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেন সমিতির দশজন সদস্য। এছাড়া সম্প্রতি এ প্রশাসকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন বিজিএমইএর প্রাক্তন প্রথম সহ-সভাপতি এস এম নুরুল হক।

রিট পিটিশনে অভিযোগ করা হয়, বিজিএমইএ প্রশাসক আনোয়ার হোসেন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ১২০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করার কথা। কিন্তু ইতোমধ্যে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ৭৫ দিন পার হয়ে গেছে, নির্বাচনের কোনো আয়োজন না করে কালক্ষেপণের অভিযোগ তোলা হয়েছে এ সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

বিধি ভেঙ্গে অডিট ফার্ম নিয়োগের অভিযোগও উঠেছে এ প্রশাসকের বিরুদ্ধে। রিট পিটিশনে বলা হয়েছে, বাণিজ্য সংগঠন আইন ২০২২, বিধিমালা-১৯৯৪,ও বিজিএমইএর নিজস্ব সংঘস্মারক ও সংঘবিধির কোন আইন অনুযায়ী হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং অডিট ফার্মকে বিজিএমইএর মেম্বারশিপ ফাইল অডিট এবং ভেরিফিকেশন করার জন্য ১৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দায়িত্ব দিয়েছেন। এক্ষেত্রে খোলা দরপত্র পদ্ধতি অনুসরণ না করে সহায়ক কমিটির একজন সদস্যের মাধ্যমে হুদা ভাসিকে চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

জানতে চাইলে রিট পিটিশনে স্বাক্ষরকারী প্রথম সদস্য আবদাল ওয়ারিশ আবির আমার দেশকে জানান, বাণিজ্য সংগঠনের আইন অনুযায়ী আমরা আয়কর ও ট্রেড লাইসেন্স দিলেই সদস্যপদ পুনরায় নবায়ন করতে পারব। নবায়নের ক্ষেত্রে এত ডকুমেন্টস লাগে না। আর যে সদস্য তিন বছর চাঁদা দেবে না তার সদস্যপদ এমনিতেই বাতিল হয়ে যাবে। কেন এ প্রশাসক এসে উল্টো ধারা ধরিয়ে দিয়ে নতুন নিয়ম জারি করলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে এফবিসিসিআই থেকে অনুমতি নিতে হয়।

তিনি বলেন, নবায়নের ক্ষেত্রে ফ্যাক্টরি লাইসেন্স যোগ করেছেন তিনি, কিন্তু এটি আমাদের প্রয়োজন হয় না। কলকারখানার লাইসেন্স তো আমাদের প্রয়োজন নেই। আমরা ছোট ক্রেতাদের নিয়ে কাজ করি। তিনি এ নিয়ম কিভাবে জারি করলেন, এফবিসিসিআই, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা ২৮৭টি চেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগ বা পরামর্শ করেছেন?

বিজিএমইএ’র নিজস্ব আইন উপদেষ্টা থাকা সত্ত্বেও নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়ে, পুনয়ায় অর্থের অপচয় করে আট লক্ষ টাকা দিয়ে ১টি ল-ফার্মকে আইনি পরামর্শের জন্য নিয়োগ করেন আনোয়ার হোসেন। বিজিএমইএ সদস্যদের অভিযোগ. এর মাধ্যমে তিনি বিজিএমইএ’র আর্থিক ক্ষতি করে আইন বহির্ভূত কাজ করছেন।

লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, বিজিএমইএ’র নিজস্ব আইন উপদেষ্টা থাকা সত্ত্বেও কেন আপনি অন্য আরেকটি ল-ফার্মকে নিয়োগ প্রদান করেছেন?

সম্প্রতি বিজিএমইএ’র সব সদস্যদের ২০২৫ সালের সদস্যপদ নবায়নের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেন আনোয়ার হোসেন। সেখানে প্রতি বছর সংশ্লিষ্ট সংগঠন কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ট্রেড লাইসেন্স ও হালনাগাদ আয়কর সনদপত্রের কপি দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়াও ফ্যাক্টরি আইন ১৯৬৫এর আওতায় হালনাগাদ কারখানা লাইসেন্সের অনুলিপি চেয়েছেন তিনি। অথচ ফ্যাক্টরি আইন ২০০৬ এর মাধ্যমে ১৯৬৫ সালের এ আইন বাতিল হয়ে গেছে।

লিগ্যাল নোটিশে বলা হয়েছে, ‘বিজিএমইএ’র মতো এত বড় একটি বাণিজ্য সংগঠনের প্রশাসক হিসেবে আপনি এবং বিজিএমইএ’র সর্বোচ্চ দাপ্তরিক কর্মকর্তা (মাংসচিব) নিজেরাই জানে না যে- ফ্যাক্টরি অ্যাক্ট-১৯৯৫ এখন বলবৎ নেই। এটি আমাদের সবার জন্য চরম লজ্জার বিষয়।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাড়া দেননি আনোয়ার হোসেন।

গত ২০ অক্টোবর একাধিক অভিযোগে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেনকে প্রশাসক পদে বসায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারপর দিন আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, চট্টগ্রাম চেম্বার, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় বিজিএমইএতেও প্রশাসক বসানো হয়। মূলত বিদায়ী সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী, এমনকি আওয়ামী লীগের পদধারী ব্যক্তিও এই সংগঠনগুলোতে নেতৃত্ব ছিলেন।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024
Developed BY www.budnews24.com