দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে অভিশংসিত হন দক্ষিণ কোরিয়ার দুই প্রেসিডেন্ট। চলতি মাসে ৩ ডিসেম্বর ইউন সুক ইওল অল্প সময়ের জন্য দেশটিতে সামরিক আইন জারি করেছিলেন, যা পুরো দেশ এমনকি বিশ্বকেও চমকে দিয়েছিল। এক দিনেরও কম সময়ের মধ্যে পার্লামেন্টের চাপে সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন তিনি। তবে তার এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশটি কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটে পড়ে। পরবর্তী সময়ে ১৪ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদে ২০৪-৮৫ ভোটে অভিশংসিত করা হয় ইউনকে। সেইসঙ্গে দায়িত্ব থেকে বরখাস্তও করা হয় তাকে।
এবার সামরিক আইন জারির দায়ে অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে গ্রেপ্তারির জন্য আদালতের কাছে অনুমতি চেয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। দেশের সাংবিধানিক ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার দক্ষিণ কোরীয় যৌথ তদন্ত দপ্তরের পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়। ইউনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও ক্ষমতার অপব্যবহারে অভিযোগ আনা হয়।
দুর্নীতি তদন্ত দপ্তর, পুলিশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত যৌথ তদন্ত দপ্তর জানায়, এর আগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অভিশংসিত প্রেসিডেন্টকে তিনবার সমন দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি তা উপেক্ষা করেছেন। ফলে আদালতও তার আইনজীবীদের শুনানি বিলম্বের আবেদন নাকচ করেছে।
এখন ইউনকে গ্রেপ্তারির জন্য আদালতের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইউনহাপ নিউজ এজেন্সিকে অভিশংসিত প্রেসিডেন্টের এক আইনজীবী ইউন গাপ-গিউন জানান, দুর্নীতি তদন্ত দপ্তর তার ক্ষমতার বাইরে গিয়ে কাজ করছে। তিনি এর বিরুদ্ধে ‘আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ’ নেবেন।
অপর এক আইনজীবী গ্রেপ্তারির এই অনুমতিকে ‘অন্যায্য’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তদন্ত দপ্তরের এটির কোনো এখতিয়ার নেই।
সিউল ওয়েস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের এই আইনজীবী বলেন, ‘জরুরি সামরিক আইন জারি প্রেসিডেন্টের এখতিয়ারের মধ্যেই পড়ে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব পালনের সম্মানে বিভিন্ন অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও বিদ্রোহ-বিশৃঙ্খলার জন্য তার বিচার হতে পারে।
সামরিক আইন জারির ফলে সেনাবাহিনী রাজধানী সিউলে পার্লামেন্ট ভবনে অবস্থান নেয় এবং আইনসভার সদস্যদের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায়।
ইউন সুক ইওল তার সামরিক আইন জারিকে প্রয়োজনীয় বৈধ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করে আসছেন। বিরোধীদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক বাধা ও ‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তির’ হুমকি রোধ করতে সামরিক আইন জারি করেছেন বলে আসছেন তিনি।
এদিকে শুক্রবার পার্লামেন্টে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক সুকেও অভিশংসিত করা হয়। এর জেরে দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট আরও জোরালো হয়েছে।
বর্তমানে উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী চুই স্যাং মক ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন।
সাংবিধানিক আদালতে শূন্য থাকা পদে বিচারপতি নিয়োগ দিতে অস্বীকার করার জেরে হান ডাক সুকে অভিশংসন করা হয়। আদালতে ৯ বিচারপতির স্থানে বর্তমানে ছয় বিচারপতি দায়িত্ব পালন করছেন।
বর্তমানে সাংবিধানিক আদালতে ইউন সুক ইওলের অভিশংসনের বিষয়ে শুনানি চলছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে আদালত রায় দেবে ইউন সুক ইওলকে পুনর্বহাল করা হবে, নাকি ক্ষমতাচ্যুত করা হবে।
এদিকে শুক্রবার আদালতে বিচারের প্রথম দফা শুনানি হয়। শুনানিতে ইউন সুক ইওলের আইনজীবীরা প্রস্তুতির জন্য সময় প্রার্থনা করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে। আগামী ৩ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য হয়েছে।