রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য ব্যাংকের মতো গত দেড় দশকে সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি করা হয়েছে অগ্রণী ব্যাংকেও। এ সময়ে ঋণের নামে ব্যাংকটি থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন প্রভাবশালীরা। রীতিনীতি না মেনে দেওয়া সেই ঋণ এখন খেলাপির খাতায় উঠছে।
ব্যাংকটির তথ্য মতে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির কাছেই ৩৩ শতাংশ ঋণ আটকে আছে। ফলে ব্যাংকটি এখন তাদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে।
গত বৃহস্পতিবার অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন ব্যাংকটির নতুন চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ।
তিনি জানান, খেলাপি ঋণ আদায়ে শীর্ষ গ্রুপ গুলোর সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। নিয়মের মধ্যে থেকে তাদের সুযোগ দিয়ে ঋণ নিয়মিত করার চেষ্টা করছি। ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে সবাই কাজ করছে।
তিনি বলেন, ২০০৪ সালে এমডি হিসেবে যখন যোগদান করি, তখন ব্যাংকের ইকুইটি প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ঋণাত্মক ছিল। খেলাপি ঋণ ছিল আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। আর নিট মুনাফা ২১শ কোটি টাকা ঋণাত্মক ছিল। তবে ২০১০ সালে বিদায় নেওয়ার আগে ইকুইটি এক হাজার ৭২ কোটি ইতিবাচক এবং খেলাপি ঋণ কমে দুই হাজার ১০০ কোটি টাকা নেমে আসে। আর ৩৫২ কোটি টাকা মুনাফা ছিল।
তিনি আরও বলেন, এখন আবার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে দেখি ব্যাংকের অবস্থা নাজুক। মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে। গত ১৫ বছর ঋণ ঠিকভাবে বিতরণ না করার কারণে এ পরিস্থিতি হয়েছে। যারা নানা অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ বের করে নিয়েছে, তারা তালিকার বাইরে রয়েছে। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে অডিটে হলে আসল চিত্র বের হয়ে আসবে। তখন অনিয়মের মাধ্যমে যারা ঋণ বের করে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সৈয়দ আবু নাসের বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে আমরা গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিছু আদায় হচ্ছে। শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির স্থিতি আরও কমে যাবে। গোপন কোনো খেলাপি নেই। যেসব খেলাপি করা হয়নি আমি এসে সব করেছি। আশা করি খেলাপি ঋণের হার ৩৮ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ নেমে আসবে। কারণ দুই শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে পুনঃতফসিল করা হচ্ছে। ব্যাংক ভালো অবস্থানে নিতে সবাই কাজ করছি।
চেয়ারম্যান বলেন, শীর্ষ অনেক গ্রুপকে সহায়তা না দেওয়ার কারণে খেলাপি হয়েছে। আমার সময় অনেকে ভালো গ্রাহক ছিল। একটি রাজনৈতিক দলের ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে গত সরকার তাদের সহায়তা করেনি। তবে এখন যেহেতু তারা এসেছে তাদের বিষয়টি দেখা হবে। নিয়মের মধ্যে থেকেই তাদের সহায়তা করা হবে। তবে প্রতিষ্ঠানের ক্যাশফ্লো ভালো ও ব্যালেন্স শিট শক্ত হতে হবে।
শীর্ষ ২০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জাকিয়া গ্রুপের এক হাজার ২১০ কোটি, জজ ভুঞ্জা গ্রুপের এক হাজার ৯০ কোটি, তানাকা গ্রুপের ৯২৬ কোটি, সাত্তার গ্রুপের ৫৫০ কোটি, মুন গ্রুপের ৫২৪ কোটি, সোনালী গ্রুপের ৫২১ কোটি, অ্যারোস্টোকেট গ্রুপের ৪৬২ কোটি, ঢাকা হাইড অ্যান্ড স্কিন ৪৫৮ কোটি, প্যাসিফিক গ্রুপের ৪৪৩ কোটি, সাদ মুসা গ্রুপের ৪১০ কোটি, সাহাবা ইয়ার্নের ৩৭৪ কোটি, নাভানা ফার্নিচার ২৭২ কোটি, এ্যাডভান্স কম্পোজিট মিলস ৩১৭ কোটি, প্রাইম কম্পোজিট মিলস ৩১১ কোটি, নিউ ফ্যাশন ২২৯ কোটি, আর্থ এগ্রো ফার্মসের ২২৩ কোটি, জুলিয়া সোয়েটার কম্পোজিট এবং আর সোয়েটারের ২১৯ কোটি, জয়নব ট্রেডিং ১৮৪ কোটি এবং সামিটেক্স গ্রুপের ১৬৯ কোটি টাকা।