রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে ঐকমত্য

  • সময়: রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫, ৯.২৪ এএম
  • ৬ জন

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ত্রয়োদশ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে বিএনপির দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ১২ দলীয় জোট ও এলডিপি নেতারা।

গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পৃথক বৈঠকে একমত পোষণ করেন এসব নেতা। জাতীয় নির্বাচন, সংস্কার এবং ফ্যাসিস্টদের বিচারসহ নানা ইস্যুতে ১২ দলীয় জোট ও এলডিপির সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। এসব দাবিতে প্রত্যেক দলের পক্ষ থেকে নিজস্ব কর্মসূচি পালন এবং জনমত গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৈঠক থেকে।

ত্রয়োদশ নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে গত বুধবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের একদিন পর বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরির জন্য দেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতবিনিময় করার। এরপরই আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ১২ দলীয় জোট ও এলডিপির সঙ্গে বৈঠক করল বিএনপি। দ্বিতীয় ধাপে আজ বৈঠক হবে ভিপি নুরুল হক নুরের গণঅধিকার এবং তৃতীয় ধাপে কাল বৈঠক হবে বাংলাদেশ লেবার পার্টির সঙ্গে।

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, এতে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে একমত হয়েছেন নেতারা। তাদের দাবি, ডিসেম্বরের মধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন করা সম্ভব। বিগত ১৬ বছর ধরে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এ মুহূর্তে জনগণ একটি অবাধ নির্বাচন প্রত্যাশা করে। এজন্য দ্রুততম সময়ে ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে বর্তমান সরকারকে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দিতে হবে। তার আগে নির্বাচনি রোডম্যাপ চান দল ও জোটের শীর্ষ নেতারা। তারা এও বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফসল। রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনের সরকার। তাই নির্বাচনের দাবিতে এখনই আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা দেখছে না বৈঠকে অংশ নেওয়া দলগুলো। তবে অভিন্ন দাবিতে জনমত গঠনে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠক থেকে।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রত্যেক দলের নেতা মনে করছেন, চলতি বছরের ডিসেম্বরই নির্বাচনের উপযুক্ত সময়। বিলম্ব হলে ফ্যাসিস্টরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। দেশ নিয়ে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র হতে পারে। তাই সবাই চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ, তাদের দোসর এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিষয়ে একমত পোষণ করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপিসহ গণতন্ত্রমনা অন্যান্য দল ও তাদের নেতাদের নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার চলছে। সেসব প্রতিরোধে সবাইকে সচেতনতার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে প্রত্যেক দলের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে একটি কনভেনশন আকারে নির্বাচনের দাবি উত্থাপনের আলোচনা করেন নেতারা। তবে এ বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। ঘাপটি মেরে থাকা প্রশাসনের দোসরদের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে বৈঠক থেকে।

বৈঠক শেষে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, কদিন আগে প্রধান উপদেষ্টা ও তার সহকর্মীদের সঙ্গে বিএনপির একটি আলোচনা হয়েছে। সে আলোচনার বিষয়বস্তু নিয়েই আমরা মতবিনিময় করেছি। এ ব্যাপারে আরো রাজনৈতিক জোট ও দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনের দাবিতে এখনই আন্দোলনের প্রয়োজন দেখছে না বিএনপি। কারণ, আমরাই তো সরকারকে সমর্থন দিয়েছি। আমাদের একটি জোটের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বাকি জোট ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব।

আবারও ডিসেম্বর মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। কারণ, নির্বাচন আয়োজনের জন্য যা যা প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা ইতোমধ্য সম্পন্ন হয়েছে বলে আমরা মনে করি। আমরা সরকারকে এও জানাচ্ছিÑ যারা গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচার করার।

১২ দলীয় জোটের শীর্ষনেতা ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আমরা একটা বিষয় লক্ষ করেছি যে, প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে অটল রয়েছেন। কিন্তু আমাদের দাবি হচ্ছে, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। দেশবাসীর প্রত্যাশাও একই।

বৈঠক প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা আমার দেশকে বলেন, বিএনপি চায় ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন, যার সঙ্গে আমরা পুরোপুরি একমত। এ সরকারের একটা কমিটমেন্ট আছে। তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য কাজ করছে। এ লক্ষ্যে সরকারের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে, সে আস্থা আমরা রাখতে চাই।

নির্বাচনের জন্য আন্দোলনের প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের আন্দোলনের ফসল বর্তমান সরকার। ফলে নির্বাচনের জন্য আমাদের আলাদা করে আন্দোলনের প্রয়োজন নেই। তবে আমরা আমাদের নিয়মিত রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ-মিছিল চালিয়ে যাব।

সরকারের বিপক্ষে কোনো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, নির্বাচন করার জন্য ডিসেম্বর উপযুক্ত সময়। এর মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব। এর বাইরে যাওয়ার কোনো কারণ দেখা যাচ্ছে না। এ সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করা সম্ভব। তাছাড়া প্রধান উপদেষ্টাও ডিসেম্বর থেকে জুনের কথা বলেছেন। তার কথার মধ্যেও ডিসেম্বর রয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ড. ইউনূস আমাদের প্রতিনিধি। তার বিপক্ষে কোনো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া যাবে না। তার বিরুদ্ধে রাজপথে কর্মসূচি দেওয়ার পক্ষে আমরা নই। তাকে আমাদের সহযোগিতা করা প্রয়োজন, যাতে তিনি দ্রুত সংস্কারকাজ সম্পন্ন করতে পারেন এবং নির্বাচন দিতে পারেন।

লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে বিএনপির পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। ১২ দলীয় জোটের পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব গোলাম মহিউদ্দীন ইকরাম প্রমুখ। এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেয়।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com