সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়ালের প্রত্যাবর্তন; এতদিন এটাই ছিল পরিচিত গল্প। আর ম্যাচটা যখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের হয়, তখন রাজারা রাজার মতো ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রতিপক্ষের জয় ছিনিয়ে নেবে প্রত্যাশা থাকে এমনটাই। তবে এদিন হলো তার উল্টো। চিরচেনা বার্নব্যুতেই রিয়ালের সলিল সমাধির গল্পটা রচিত করে দিয়ে গেল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল আর্সেনাল।
গল্পটা অবশ্য তারও আগেই লেখা হয়ে গিয়েছিল। প্রথম লেগে রিয়ালকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ম্যাচটা একরকম নিজেদেরই করে রেখেছিল আর্সেনাল। এরপরও ম্যাচটা যখন বার্নাব্যুতে আর দলটা যখন রিয়াল তখন; প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন নিয়েই গ্যালারিতে কিংবা টিভি সেটের সামনে হাজির হয় ভক্তরা।
তবে এদিন সেই প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি কিলিয়ান এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়ুস জুনিয়ররা। ফিরতে লেগেও হেরে বসেছে ২-১ গোলে। তাতে দুই লেগ মিলিয়ে ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ৫-১। আর এই ব্যবধানে রিয়ালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে লন্ডনের ক্লাবটি।
রেকর্ড পনেরোবারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয়েছিল ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময়ে। বিপরীতে আর্সেনাল সেমিফাইনালে উঠল ১৬ বছর পর। গানাররা শেষ চারে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেল ফরাসি চ্যাম্পিয়ন পিএসজিকে।
অথচ, এদিন ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়েছে কার্লো আনচেলত্তির দল। কখনো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্বাদ না পাওয়া এমবাপ্পের লড়াইটাও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে দিনশেষে তাদের রুখে দিয়েছে আর্সেনাল। রক্ষণে জমাট বেধে থেকে রিয়ালের একের পর এক আক্রমণ ঠেকিয়ে দিয়েছে মিকেল আর্তেতাল শিষ্যরা। একই সঙ্গে পাল্টা আক্রমণে রিয়াল ডিফেন্ডারদের তটস্থ রেখেছে আর্সেনাল।
ফরাসি রেফারি ফ্রাঁসোয়া লেতেক্সিয়ের দুইবার পেনাল্টির বাঁশি, একবার পেনাল্টি মিস, একবার পেনাল্টি বাতিল, হলুদ কার্ড প্রদর্শন, অফসাইডের ফাঁদে আটকা, ভিএআর যাচাই করতে গিয়ে কালক্ষেপণ—প্রথমার্ধে এতকিছু হলেও হয়নি গোল! অথচ, গোলটা পেতেই পারতেন এমবাপ্পে। ম্যাচের শুরুতেই ভিনির ক্রস থেকে আর্সেনালের জালে বল পাঠান এমবাপ্পে। কিন্তু অফসাইডের কারণে সেটি বাতিল হয়ে যায়। ৬ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে আর্সেনালের বুকায়ো সাকার বিদ্যুৎ গতির শট রিয়ালের বারের খুব কাছ দিয়ে চলে যায়। এরপর তিনি মিস করেন পেনাল্টি।
দ্বিতীয়ার্ধে আরও মরিয়া হয়ে উঠে রিয়াল। গোলের জন্য হন্যে হয়ে ওঠা আনচেলত্তি ৬১ মিনিটে তিন বদলি নামান। কিন্তু হিতে বিপরীত হয় তাতে। ৬৫ মিনিটে উল্টো গোল করে বসে আর্সেনাল। দুর্দান্ত ফুটবলশৈলীর প্রদর্শনীতে বুকায়ো সাকা এবার কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে যেন প্রথমার্ধে পেনাল্টি মিসের প্রায়শ্চিত্ত করেন। দুই লেগ মিলিয়ে রিয়াল তখন ৪–০ গোলে পিছিয়ে।
তবে দুই মিনিটের মধ্যে গোল শোধ দিয়ে নিভু নিভু আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখেন ভিনিসিয়ুস। এরপর সময় যতই গড়াচ্ছিল হারের শঙ্কা ততই ঝেঁকে বসেছিল রিয়ালের। সুযোগ বুঝে যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে মার্তিনেল্লি কোর্তোয়াকে একা পেয়ে রিয়ালের জাল কাঁপান। ওখানেই লেখা হয়ে যায় রিয়ালের সলিল সমাধি।