রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১২ অপরাহ্ন

বিচারের আশায় ক্লান্ত সাগর-রুনি’র পরিবার

  • সময়: মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ১১.০৪ এএম
  • ৪৬ জন

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছর পূর্ণ হলো আজ। বিচার শুরু না হলেও হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছরে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার তারিখ পিছিয়েছে ১১৫ বার। এরই মাঝে চার বার বদল হয়েছে তদন্ত সংস্থা। সবশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধানকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয়েছে উচ্চ ক্ষমতার টাস্কফোর্স।

তবে, পিবিআই’কে মামলাটি হস্তান্তরের আগের ছয় বছর কোন তদন্ত হয়নি এমন অভিযোগ ওঠেছে। ওই সময় তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব শুধু প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় চেয়েছে মাত্র। এদিকে অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ক্লান্ত সাগর-রুনি’র পরিবার এখনো ন্যায়বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছেন।

রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডে রহস্য ভেদ করতে পারেনি থানা-পুলিশ, ডিবি ও র‌্যাবের তদন্ত। উল্টো এক যুগ ধরে তদন্ত করেও প্রতিবদেন জমা দিতে ব্যর্থ র‌্যাব। এ মামলায় নিম্ন আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে তারিখ পড়েছে রেকর্ড ১১৫ বার। তবে র‌্যাবের তদন্তে উঠে আসা সন্দেহভাজন দুজন ঘাতকের ডিএনএ নমুন ম্যাচিংয়ে বিগত সরকারের অনীহা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন।

রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, যখন ডিএনএ পরীক্ষার আবেদন করা হয়, তখন আবেদনের বিরোধিতা করেন সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস। এ কারণে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, এটার পেছনে কোন রহস্য আছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত বছরের নভেম্বর মাসে সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। পিবিআই প্রধানের নেতৃত্বে কাজ করছেন টাস্কফোর্স টিমের সদস্যরা। এ নিয়ে পিবিআইয়ের অতিরিক্ত আইজিপি মোস্তফা কামাল বলেন, ১২ বছর তদন্তে যে সব তথ্য উঠে এসেছে সেগুলোর রিভিউ করা হচ্ছে। যারা অতীতে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন, তাদের বক্তব্য নেয়া হচ্ছে। আশা করছি আগামী ৬ মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারে সময় চাঞ্চল্যকর এ মামলার কোন অগ্রগতি হয়নি। মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ১১৫ বার সময় নেয়া হয়েছে। মামলার কোন আগ্রতি হয়নি। ফ্যাসিস্টের কোন সহযোগী এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল বলেই এ মামলার রহস্য উদঘাটন করেনি তারা। এখন উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। পিবিআই প্রধানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আশা করছি বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন তারা।

বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময় আছে। এর মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে। সরকারের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। বাকিটা নির্ভর করছে ডিএনএ পরীক্ষাসহ কিছু প্রযুক্তি ও তথ্য প্রমাণের ওপর।

তিনি আরো বলেন, পিবিআই কর্মকর্তা আমাদের সাথে কথা বলেছেন। আশা করছি, তারা ফলপ্রসূ কিছু বের করতে পারবেন। তবে অনেক দিন পার হয়ে যাওয়ায় তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা অনেক চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে।

​এদিকে মামলার বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলী রোমেল বলেন, ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা সফল হবে না। এটি আমরা মেনেও নেব না। যতক্ষণ পর্যন্ত ফলাফল না পাব, ততক্ষণ পর্যন্ত আশাবাদী হতে পারছি না।

পিবিআই কথা বলেছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এতদিন যারা তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত বলে মনে করছি। ধারণা করছি তারা অনেক কিছুই জানেন।

এ মামলায় চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের কথা থাকলেও তা করতে পারেনি তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি. এম. ফারহান ইশতিয়াকের আদালত আগামী ২ মার্চ প্রতিবেদন দাখিলের নতুন তারিখ ধার্য করেন।

এদিকে এ মামলায় গ্রেপ্তার মেহরুন রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ ৮ আসামির কেউই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল ইসলাম ওরফে অরুন, আবু সাঈদ, সাগর-রুনির বাড়ির দুই নিরাপত্তারক্ষী পলাশ রুদ্র পাল ও এনায়েত আহমেদ। বতমানে তারা সবাই জামিনে আছেন।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com