নানা অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে ৮টি সরকারি অফিসের চারটিতে অভিযান ও চারটি দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। রোববার এসব অভিযান ও চিঠি পাঠানোর তথ্য জানান দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, অভিযান থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তীতে দুদক থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী ও শিক্ষকরা চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত ক্রয়, ভুয়া বিল-ভাউচার প্রস্তুত, কেনা-কাটায় টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ পায় দুদক। অভিযোগ পেয়ে দুদকের গোপালগঞ্জ জেলার দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে রোববার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
দুদক কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, অভিযানের সময় সেখান থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যায়, সেগুলো হচ্ছে— বিগত সময়ে আসবাবপত্র কেনায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।
সরেজমিনে চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত বেঞ্চ কেনা ও নিম্নমানের মালামাল কেনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। ২টি পানি শোধনাগার বন্ধ রয়েছে। একটির যন্ত্রপাতি ও পাইপ নিম্নমানের পাওয়া গেছে। পানি শোধনাগার দুটি লাখ লাখ টাকায় তৈরি করে ফেলে রেখে সরকারি অর্থের অপচয় করা হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে শারমিন চৌধুরীকে সেকশন অফিসার পদে নিয়োগের শর্ত ভঙ্গ করে নিয়োগ দেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৩২ বছর হওয়ার কথা থাকলেও বয়স পাওয়া গেছে ৩৩ বছর ৩ মাস। কফি হাউজ ও লেকপাড়ের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শেষ না করেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে ঠিকাদারকে অতিরিক্ত বিল দিয়ে রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতি করা হয়েছে। লাইব্রেরিতে কেনা করা বিদেশি বইগুলো মূল বই নয় মর্মে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পাওয়া গেছে। সেসব বিল ভাউচার পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়েছে। সাত-আট বছর আগে শুরু হলেও অদ্যাবধি মূল গেইট নির্মাণ শেষ না করে আর্থিক অনিয়ম করা হয়েছে।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া তুহিন মাহমুদ সিন্ডিকেট করে কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম করেছেন মর্মে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। তার গোপালগঞ্জ শহরে ৫ তলা বাড়িসহ বিপুল সম্পদের মালিক রয়েছেন বলেও প্রমাণ পাওয়া গেছে। সহকারী রেজিস্টার নজরুল ইসলাম হীরা টেন্ডারবাজি, অনিয়ম ও দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪৯টি কম্পিউটার চুরির মাস্টার মাইন্ডও তিনি। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়ে প্রকাশ্য অনুসন্ধানের সুপারিশ করেছেন উপ-পরিচালক মশিউর রহমান।
অন্যদিকে, তিতাস গ্যাসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঢাকার সাভার এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-২ থেকে একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে দুদক টিম সাভারের তিতাস গ্যাস অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে। সাভারের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন করে ১১০টির বেশি অবৈধ গ্যাস সংযোগ পাওয়া যায়। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় সেসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
একইসঙ্গে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির অধীন গাজীপুরেও কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদানের অভিযোগ অনুসন্ধানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট গাজীপুর সদরের উত্তর বিলাশপুর, চান্দনা চৌরাস্তায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ পাওয়া যায়। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের গাজীপুর অফিসের সহযোগিতায় প্রায় ৪০টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। অবৈধ সংযোগ ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিতাস কর্তৃপক্ষকেও বলা হয়।
অন্যদিকে, শিক্ষা বোর্ডের অনিয়ম আড়াল করতে অডিট টিম কর্তৃক ঘুষ লেনদেন ও অন্যান্য অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের দিনাজপুর জেলা কার্যালয় থেকে আরেকটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের সময় তাদের ব্যাংক হিসাব বিবরণী পর্যালোচনা করা হয়।