বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৬ অপরাহ্ন

স্বতন্ত্র বিচার বিভাগ ও বিচারক নিয়োগে কাউন্সিল গঠন দ্বারপ্রান্তে

  • সময়: মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৪.৫৬ পিএম
  • ৬ জন

বিচার বিভাগ স্বতন্ত্রীকরণের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ও উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বতন্ত্র কাউন্সিল গঠন দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট।

মঙ্গলবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ ১১ আগস্ট ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। প্রধান বিচারপতির দায়িত্বভার গ্রহণের পর ১২ আগস্ট সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত অভিষেক বক্তব্যে এবং ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতি ও জেলা জুডিশিয়ারির বিচারকদের সামনে বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ উপস্থাপন করেন।ওই সময় তিনি রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বতন্ত্রীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক পৃথকীকরণের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।

এমন প্রেক্ষাপটে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের বাস্তবায়নে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় আইনি ও কাঠামোগত সংস্কার, বিচার বিভাগের জন্য স্বতন্ত্র ও পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দকরণ, অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণসহ বিচার বিভাগে মেধার চর্চার উন্মেষের লক্ষ্যে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে উন্নত দেশগুলোর মতো সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

এরই অংশ হিসেবে গত ২৭ অক্টোবর বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাব আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠায় সুপ্রিমকোর্ট। পরবর্তীতে গত ১০ ডিসেম্বর সুপ্রিমকোর্ট রেজিস্ট্রির তিনজন কর্মকর্তা আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের কক্ষে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে প্রস্তাবিত বিচার বিভাগীয় সচিবালয়ের বিভিন্ন কৌশলগত বিষয় সম্পর্কে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। বর্তমানে বিচার বিভাগীয় সচিবালয় তৈরির বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে সক্রিয়ভাবে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আশা করা যায় যে, অচিরেই বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় স্থাপনের বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপগুলো দৃশ্যমান হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠিত হলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদায়ন, বদলি, পদোন্নতি, শৃঙ্খলা, ছুটি ইত্যাদি বিষয়ে প্রচলিত দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটবে এবং বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

এ ছাড়া গত ২১ সেপ্টেম্বর ঘোষিত রোডম্যাপের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে দেশের উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের কাজ চলমান রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে যেসব প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়, তা গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে এ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত করে বিচারপতিদের মতামত নেওয়া হয়। সেই মতামতের আলোকে গত ২৮ নভেম্বর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রস্তাবে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের জন্য একটি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ-ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত ও পাকিস্তানে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন বা অনুরূপ প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান রয়েছে। প্রস্তাবে বিচারক পদে নিয়োগের লক্ষ্যে উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাইক্রমে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করার জন্য একটি ‘জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল’ গঠনের কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির সভাপতিত্বে ওই কাউন্সিলের মোট সদস্য সংখ্যা হবে ১০ জন। প্রধান বিচারপতি ওই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হবেন।

কাউন্সিলের সদস্যরা হবেন- আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম জ্যেষ্ঠ বিচারক, আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগের কর্মে প্রবীণতম জ্যেষ্ঠ বিচারক, অধস্তন আদালতের বিচারক হতে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন এরূপ বিচারকগণের মধ্য হতে কর্মে প্রবীণতম জ্যেষ্ঠ বিচারক, বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আইনের অধ্যাপক এবং দুইজন নাগরিক প্রতিনিধি। প্রস্তাবটিতে নাগরিক প্রতিনিধি নিযুক্ত করার নিয়মাবলী সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, কাউন্সিলের শিক্ষক সদস্য ব্যতিরেকে অন্যান্য সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রণীত বিধি মোতাবেক কিংবা এরূপ বিধি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের লিখিত আদেশ অনুসারে দুই বছরের জন্য নাগরিক সদস্যরা নিযুক্ত হবেন। সুপ্রিমকোর্টের বিচারক পদে উপযুক্ত প্রার্থীকে সুপারিশ প্রদানসহ কাউন্সিলের যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে মর্মে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সংবিধানের ৯৫ ও ৯৮ অনুচ্ছেদের অধীনে বিচারক নিয়োগে সুপারিশ প্রদান করার জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুরোধ জ্ঞাপন করা হলে কাউন্সিল সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবে।কাউন্সিল প্রাথমিকভাবে বাছাইকৃত প্রার্থীদের বিষয়ে মতামত বা পরামর্শ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তিকে কাউন্সিলের সভায় আহ্বান করতে পারবে বা যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কাউন্সিল কর্তৃক চাহিদাকৃত তথ্য উপস্থাপনে নির্দেশ প্রদান করতে পারবে মর্মে প্রস্তাবে উল্লেখ রয়েছে।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024
Developed BY www.budnews24.com