সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৬ অপরাহ্ন

রাজনৈতিকভাবেই প্রস্তাব আনা হয়েছিল জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের

  • সময়: বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১.০৩ এএম
  • ৩১ জন

কোটা সংস্কার দিয়ে শুরু করা রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিতে পতন হয়েছে স্বৈরাচার সরকারের। এরপর থেকে শুরু হয়েছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরে সংস্কার। ১৯৭১–এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সংবিধান পরিবর্তনের পক্ষে অন্তর্বর্তী সরকার। সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের।

বুধবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী সংবিধানের সঙ্গে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি জানান। এরপরই শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা।

এর আগেও বহু বার বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের  জন্য আলোচনা হয়। শুধু তাই নয় রাজনৈতিকভাবেই প্রস্তাব আনা হয়েছিল আমার সোনার বাংলা গানটিকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো গানকে জাতীয় সংগীত হিসেবে চালু করার।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা জোর গলায় বলছেন, জাতীয় সংগীত প্রথম পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয় জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত খন্দকার মোশতাক আহমেদের সরকার।

৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর রাষ্ট্রপতির আসনে বসানো হয় খন্দকার মোশতাক আহমেদকে। ক্ষমতায় বসেই মোশতাক জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. দ্বীন মুহাম্মদকে ওই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। কমিটিকে বলা হয় এক মাসের মধ্যে নতুন কোনো সংগীতকে ‘জাতীয় সংগীত’ হিসেবে প্রস্তাব করতে।

রাজনীতি বিশ্লেষক ও ঐতিহাসিকরা বলছেন, দ্বীন মুহাম্মদ কমিটি এ বিষয়ে তিনটি বৈঠক করে। সে কমিটি দুটো গানের একটিকে  জাতীয় সংগীত করার প্রস্তাব করে প্রতিবেদন জমা দেয়। গান দুটো হলো, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘চল চল চল’ এবং ফররুখ আহমেদের ‘পাঞ্জেরী’ কবিতা।  কিন্তু ক্যু পাল্টা ক্যুতে ওই প্রস্তাবের হালে আর পানি পড়েনি।

জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দ্বিতীয় উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৭৯ সালের ৩০ এপ্রিলে। সে সময় ‘আমার সোনার বাংলা’ কে বাদ দিয়ে ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ’ গানটিকে জাতীয় সংগীত করার প্রস্তাব করা হয়।

সে সময় ক্ষমতায় ছিলেন জিয়াউর রহমান। ওই সময়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান এক গোপন চিঠিতে লেখেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি গান ভারতীয় জাতীয় সংগীত। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন।  আমার সোনার বাংলা গানটি আমাদের সংস্কৃতির চেতনার পরিপন্থি বিধায় জাতীয় সংগীত পরিবর্তন আবশ্যক।’

ওই চিঠিতে ‘আমার সোনার বাংলা’র পরিবর্তে ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ’ কে জাতীয় সংগীত করার প্রস্তাব করেন শাহ আজিজুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রীর ওই চিঠি পেয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রেডিও, টেলিভিশন এবং সব সরকারি অনুষ্ঠানে প্রথম বাংলাদেশ গানটি প্রচারের নির্দেশনাও জারি করে।

এসময় রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীতের পাশাপাশি প্রথম বাংলাদেশ গাওয়া শুরু হয়।  কিন্তু ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানের নিহত হলে সেই উদ্যোগ থেমে যায়। পাথরে চাপা পড়ে সেই নিদের্শনা।

জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের তৃতীয় দফার উদ্যোগ নেয়া হয় ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে।

২০০২ সালের ১৯ মার্চ তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী এবং সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মুজাহিদ জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের লক্ষ্যে একটি যৌথ সুপারিশপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেন।

স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের ইসলামি মূল্যবোধ ও চেতনার আলোকে জাতীয় সংগীত সংশোধিত হওয়া প্রয়োজন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই অনুরোধপত্রটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠান।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী খুরশীদ জাহান হক বিষয়টি অতি গুরত্বপূর্ণ বলে সচিবের কাছে প্রেরণ করেন।

সচিব জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার বহির্ভূত বিষয় বলে তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণ করে। একই বছরের ১৯ আগস্ট প্রস্তাবটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

কিন্তু সেই সরকারের আমলেই প্রস্তাবটি গৃহীত হয়নি। এরপর এ সম্পর্কে আর কোনো তৎপরতা নথিতে পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, জাতীয় সংগীত অপরিবর্তনীয় বলে কোনো আইন নেই। বিভিন্ন দেশে জাতীয় সংগীত বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে পরিবর্তিত হওয়ার উদাহরণও রয়েছে। ২০০৬ সালে নেপালের জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করা হয়।

নাজিবাদকে উৎসাহিত করে এমন ইঙ্গিত রয়েছে অভিযোগে জার্মানির জাতীয় সংগীতের কয়েকটি লাইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্ণবাদী শাসনের যুগ শেষ হলে ১৯৯৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় সংগীত পরিবর্তন করা হয়।

সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর ২০০৪ সালে নতুন একটি সংগীতকে ইরাকের জাতীয় সংগীত হিসেবে সাময়িকভাবে নির্বাচিত করা হয়। তারা এখনও নতুন জাতীয় সংগীত খুঁজছে। আফগান জাতীয় সংগীত এখন পর্যন্ত কয়েকবার পরিবর্তিত হয়েছে।

 

সূত্র: যুগান্তর

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024
Developed BY www.budnews24.com