শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৬ অপরাহ্ন

আমেরিকায় ভারতীয় পণ্যের রপ্তানি কমেছে ৩৭ শতাংশ

  • সময়: মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০২৫, ১০.৪২ এএম
  • ২৩ জন

ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক বহাল রেখেছে আমেরিকা। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই শুল্কনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে ভারতের অর্থনীতিতে। রীতিমত ধস নেমেছে ভারতীয় রপ্তানিতে। আমেরিকার বাজারে ভারতীয় পণ্য রপ্তানি টানা চতুর্থবারের মতো কমেছে। চলতি বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে রপ্তানি কমেছে ৩০ দশমিক পাঁচ শতাংশ। ওয়াশিংটনের শুল্কনীতির ফলে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে ভারত। এমন তথ্য প্রকাশ করেছে বাণিজ্য পরামর্শদাতা সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (জিটিআরআই)

২ নভেম্বর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত পাঁচ মাসে ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার আমেরিকায় রপ্তানি আট দশমিক আট বিলিয়ন ডলার থেকে কমে পাঁচ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে, যা ৩৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ হ্রাস হয়েছে। এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে তীব্র স্বল্পমেয়াদি পতনের একটি।

ভারতের ওপর আমেরিকার শুল্কারোপ শুরু হয়েছিল ১০ শতাংশ থেকে। তারপর তা গত আগস্টের শুরুতে ২৫ শতাংশে উন্নীত হয় এবং সে মাসের শেষ নাগাদ বেশ কয়েকটি ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার শাস্তি হিসেবে ভারতের পণ্য রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেন ট্রাম্প।

ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ শুল্ক প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে একটি, যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ান তেল কেনার শাস্তি হিসেবে তাদের রপ্তানির ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করেছেন।

ট্রেড থিংক ট্যাংকের প্রতিবেদনে চলতি বছরের ২ এপ্রিল থেকে আরোপিত ট্রাম্পের শুল্কের তাৎক্ষণিক প্রভাব বিশ্লেষণ করতে মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রপ্তানির তথ্য যাচাই করা হয়েছে।

জিটিআরআই জানিয়েছে, শুল্ক কেবল ভারতের রপ্তানিকেই হ্রাস করেনি বরং মূল রপ্তানিশিল্পের কাঠামোগত দুবর্লতাও প্রকাশ করেছে। থিংক ট্যাংক জানিয়েছে, যেসব পণ্যের ওপর আগে কোনো শুল্ক ছিল না, সেসব পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে ধস নেমেছে। মে মাসে তিন দশমিক চার বিলিয়ন ডলার থেকে ৪৭ শতাংশ কমে সেপ্টেম্বরে এক দশমিক আট বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এতে স্মার্টফোন ও ওষুধশিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমেরিকার বাজারে স্মার্টফোন রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছিল ১৯৭ শতাংশ। ২০২৫ সালের একই সময় মে মাসে দুই দশমিক দুই ৯ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫৮ শতাংশ কমে সেপ্টেম্বরে তা ৮৮৪ দশমিক ছয় মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

মাসের পর মাস এই পতন রেকর্ড করা হয়েছে। জুনে দুই দশমিক শূন্য বিলিয়ন ডলার, জুলাইয়ে এক দশমিক পাঁচ দুই বিলিয়ন ডলার, আগস্টে ৯৬৪ দশমিক আট মিলিয়ন ডলার; অবশেষে সেপ্টেম্বরে ৮৮৪ দশমিক ছয় মিলিয়ন ডলার। তবে এসব পতনের কারণ জানা যায়নি।

ওষুধ রপ্তানিও একই সময়ের মধ্যে ১৫ দশমিক সাত শতাংশ কমেছে, যা ৭৪৫ দশমিক ছয় মিলিয়ন ডলার থেকে সেপ্টেম্বরে ৬২৮ দশমিক তিন মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, ওষুধ রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে ১৫ দশমিক সাত শতাংশ।

এদিকে, অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানি ৩৭ শতাংশ, তামা ২৫ শতাংশ, গাড়ির যন্ত্রাংশ ১২ শতাংশ এবং লোহা ও ইস্পাত আট শতাংশ কমেছে।

প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বব্যাপী একই ধরনের শুল্ক বহাল থাকায় রপ্তানিতে এই হ্রাস সম্ভবত আমেরিকার শিল্প খাতের মন্দার ফল, যা প্রতিযোগিতায় ভারতের পিছিয়ে পড়ার কারণে হয়নি।

শ্রমনির্ভর খাত যেমন টেক্সটাইল, রত্ন ও গহনা, রাসায়নিক, কৃষি-খাদ্য এবং যন্ত্রপাতি রপ্তানি ৩৩ শতাংশ কমেছে, মে মাসে চার দশমিক আট বিলিয়ন ডলার থেকে সেপ্টেম্বরে তিন দশমিক দুই বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। রত্ন ও অলঙ্কার রপ্তানি ৫৯ দশমিক পাঁচ শতাংশ কমে ৫০০ দশমিক দুই মিলিয়ন ডলার থেকে ২০২ দশমিক আট মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এই রপ্তানি হ্রাসে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে সুরাট ও মুম্বাইয়ের উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোয়। আর এই বাজারটি দখল করেছে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।

সৌর প্যানেল, রাসায়নিক, সামুদ্রিক খাবার রপ্তানিও হ্রাস পেয়েছে। সোলার প্যানেলের রপ্তানি ৬০ দশমিক আট শতাংশ কমেছে; ২০২ দশমিক ছয় মিলিয়ন ডলার থেকে ৭৯ দশমিক চার মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে- রাসায়নিক, সামুদ্রিক ও সামুদ্রিক খাবার, টেক্সটাইল এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানিও উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। রপ্তানিকারকরা এ সংকট মোকাবিলায় দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে মোদি সরকারকে চাপ দিচ্ছে। অবিলম্বে পদক্ষেপ না নিলে ভারতের বাজার দখল করবে ভিয়েতনাম, মেক্সিকো এবং চীন।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com