শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪০ অপরাহ্ন

‘শাপলা’ নিয়ে এনসিপির লড়াই এখনই থামছে না

  • সময়: সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১০.৩১ এএম
  • ৩৬ জন

প্রতীক হিসেবে শাপলাকেই চাইছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। অন্যদিকে ইসি দলটিকে প্রতীক হিসেবে শাপলা দিতে নারাজ। কিন্তু এনসিপির দাবি, তাদের শাপলাই দিতে হবে। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির বদলে দলটির কার্যক্রম এখন প্রতীক আদায়ের আন্দোলনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এমনকি পছন্দের প্রতীক না পেলে ইসির নিবন্ধন না নেওয়ার মতো কঠিন বার্তাও দিয়েছে দলটি। ফলে বলা যায়, এ ইস্যুতে দলটির লড়াই সহসা থামছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনসিপি দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য যখন ইসিতে আবেদন করেছিল, তখন প্রতীক হিসেবে শাপলা, কলম ও মোবাইল চেয়েছিল। বাকি দুটির বদলে এখন শুধু শাপলাতে আটকে থাকায় এক জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে ইসি ও এনসিপি দুপক্ষই। রেওয়াজ আছে, ইসির নিবন্ধনযোগ্য একটি দল প্রথমে কোনো প্রতীক পছন্দ করলে সেটি অগ্রাধিকার অনুযায়ী ওই দলটিই পাবে। এনসিপির আগে শাপলা প্রতীক চেয়েছিল নাগরিক ঐক্য। কিন্তু ইসি তাদের প্রতীকটি তখন বরাদ্দ দেয়নি। এ বিষয়ে এনসিপিকে কমিশন ব্যাখ্যায় এ কথা জানিয়েছে, তবে এ ব্যাখ্যা মানতে নারাজ দলটি।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, এর আগে এনসিপির নেতাকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এনসিপির নিবন্ধন চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রতীক প্রশ্নে জটিলতা তৈরি হলে ফেসবুক পোস্টে মান্না লিখেনÑ‘শাপলা প্রতীক যদি তাদের (এনসিপি) দিয়ে দেয়, কোনো মামলা করব না। কিন্তু প্রতিবাদ তো করব।’ ডাকসুর সাবেক ভিপির এমন মন্তব্যে থমকে আছে শাপলা প্রতীক ইস্যুতে ইসির পরবর্তী পদক্ষেপ। ইসি মনে করছে, কোনো দল যদি শাপলা বরাদ্দ পায়, তবে তাতে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি মামলাও হতে পারে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর এনসিপিকে নিবন্ধনযোগ্য দল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সে সময় দলটিকে ৫০টি প্রতীকের নমুনা পাঠিয়ে সেখান থেকে একটি বেছে নিতে গত ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছিল ইসি। একই সঙ্গে ওই চিঠিতে জানানো হয়, দলটির প্রথম পছন্দ শাপলা বর্তমানে নির্বাচন পরিচালনার বিধিমালার তালিকায় নেই, তাই এটি বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

পরবর্তী সময়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ইমেইলের মাধ্যমে ইসির সিনিয়র সচিব বরাবর চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে সাদা-লাল শাপলার নমুনা দিয়ে সেখান থেকে একটিকে তাদের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু নাহিদের সে অনুরোধ রাখেনি ইসি। সংস্থাটি এনসিপিকে শাপলা না দেওয়ার বিষয়ে অনড় আছে। কী কারণে প্রতীকটি দেওয়া হবে না এর ব্যাখ্যাও প্রতিষ্ঠানটি দিয়েছে।

ব্যাখ্যায় সংস্থাটি বলেছে, সংবিধান অনুযায়ী মূল জাতীয় প্রতীক হচ্ছে শাপলা। সংবিধানের ৪(৪) অনুচ্ছেদে জাতীয় সংগীত, পতাকা ও প্রতীকের অননুমোদিত ব্যবহার নিষিদ্ধ উল্লেখ আছে। আর অপরাধ হিসেবেও এটা চিহ্নিত হয়। এ কারণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে জাতীয় পতাকার পাশাপাশি জাতীয় প্রতীক শাপলা চিহ্নিত পতাকা দণ্ডায়মান রাখা হয়। তাছাড়া বহু সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের লোগোতে এ প্রতীক ব্যবহার করা হচ্ছে।

আরো বলা হয়, কোনো রাজনৈতিক দলকে এ প্রতীক বরাদ্দ দিলে তিনটি গুরুতর সমস্যা হবে। এগুলো হচ্ছেÑজাতীয় পরিচয়পত্রে ব্যবহৃত প্রতীক কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত হলে সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি তৈরি হবে এবং রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্রের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ভোটারের মনে হতে পারে এটা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। ফলে নির্বাচনি প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হওয়া ও জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে। শাপলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হলে সংবিধানের নিরপেক্ষতা ও ন্যায়সংগত নির্বাচন নীতির পরিপন্থি হবে। এ কারণে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ‘নাগরিক ঐক্যকে’ শাপলা প্রতীক দেয়নি ইসি। আগামী দিনেও কোনো দলকে শাপলা প্রতীক বরাদ্দ করা অসমীচীন ও অযৌক্তিক হবে।

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের সামনে ‘বাংলাদেশ ড্রাইভার সমন্বয় জাতীয় ঐক্য পরিষদ’ ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। শাপলা প্রতীক কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য বরাদ্দ না রাখায় ইসির প্রতি ধন্যবাদ জানানো হয় ওই কর্মসূচি থেকে।

এ সংগঠনের অবস্থান কর্মসূচির পর গত বৃহস্পতিবার এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল সিইসি ও ইসির সিনিয়র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে। পরে সাংবাদিকদের কাছে তারা জানান, শাপলা না দেওয়ার বিষয়ে দুই ঘণ্টার বৈঠকে তাদের কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেননি সিইসি ও সচিব। শাপলা প্রতীক না পেলে তারা ইসির নিবন্ধন নেবেন না।

এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ইসি যদি শাপলা প্রতীক না দিয়ে স্বেচ্ছাচারী আচরণ করে, তাহলে এ কমিশনের যে কোনো কার্যক্রমে আমাদের অনাস্থা থাকবে।

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মেজবাহ কামাল আমার দেশকে বলেন, শাপলা প্রতীক পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কোনো বাধা দেখছি না। কিন্তু ইসি আমাদের এ প্রতীক দিচ্ছে না। এই প্রতীক না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে। আমরা এই প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করব ইনশাল্লাহ।

শাপলা প্রতীক নিয়ে এনসিপির অনড় অবস্থানের মধ্যে গতকাল রোববার চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসিরউদ্দীন বলেন, সংসদ নির্বাচনের প্রতীকের তালিকায় শাপলা প্রতীক নেই।

সিইসির এই বক্তব্যে বোঝা যায়, ইসি এখনো কোনো দলকে প্রতীক হিসেবে শাপলা না দেওয়ার বিষয়ে তাদের পূর্বের অবস্থানে অনড় রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে গতকাল রোববার ইসিতে খোঁজ নেওয়া হয়। জানা যায়, প্রতীকের তালিকায় শাপলা যুক্ত করে আইনে সংশোধনী আনার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এমনকি শাপলা কোনো দলকে না দেওয়ার বিষয়ে কমিশন আগের অবস্থানে অনড় রয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. মোহাম্মদ আবদুল আলীম এনসিপিকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, শুরু থেকেই যেহেতু ইসি কোনো দলকে শাপলা প্রতীক না দেওয়ার বিষয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করে আসছে, সে কারণে এনসিপির উচিত আদালতে চলে যাওয়া। ভারতসহ অনেক দেশে এ ধরনের জটিলতা বা সংকট তৈরি হলে সংক্ষুব্ধ পক্ষ আদালতে যায়। সেখান থেকে নিদের্শনা এলে এ নিয়ে কোনো পক্ষের দায় এড়ানোর সুযোগ থাকে না।

জটিল এ পরিস্থিতিতে ইসির করণীয় প্রসঙ্গে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. আলীম বলেন, এ সংকট উত্তরণে ইসির উচিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে সমাধানের উপায় বের করা।

আপিল বিভাগের আইনজীবী হাবিবুর রহমান আমার দেশকে জানান, জাতীয় ফুল শাপলা রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে সংরক্ষিত আছে। এমনকি এ প্রতীকটি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচয় বহন করছে। তবে কোনো নিবন্ধিত দল শাপলা প্রতীক চেয়ে না পেলে আদালতে যেতে পারে। সর্বোচ্চ আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com