৬ বলে জিততে দরকার স্রেফ ৫ রান। দাসুন শানাকার করা প্রথম বলটাই শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে চার হাঁকালেন জাকের আলী। সমীকরণ সোজা, ৫ বলে ১! কিন্তু নাটক যে তখনো বাকি! শানাকার পরের ৩ বলে কোনো রান তুলতে পারল না বাংলাদেশ। উল্টো উইকেট হারাল দুটি- জাকের ও শেখ মেহেদী। তবে পঞ্চম বলে আর বিপদ হতে দিলেন না নাসুম আহমেদ। মুখোমুখি প্রথম বলেই সিঙ্গেল নিয়ে ১ বল বাকি থাকতেই এনে দেন ৪ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয়। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সুপার ফোরে যাত্রা শুরু কর বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জিতল বাংলাদেশ। এই ফরম্যাটে এর চেয়ে বড় লক্ষ্য ছুঁয়ে বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র দুটি ম্যাচ। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই সর্বোচ্চ ২১৫ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে জিতেছিল বাংলাদেশ।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দাসুন শানাকার ঝড়ো ফিফটিতে (৬৪*) ভর করে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। জবাব দিতে নেমে সাইফ হাসান (৬১) ও তাওহীদ হৃদয়ের (৫৮) পরিস্থিতির দাবি মেটানো দুটি কার্যকরী ইনিংসে ভর করে ১৯.৫ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান তুলে জয়ে বন্দরে নোঙ্গর করে বাংলাদেশ।
রান তাড়ায় নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। ওপেনার তানজিদ ফিরেন ১ রান করে। এরপর অধিনায়ক লিটন দাসকে নিয়ে ৫৯ রানের জুটি গড়ে জয়ের ভীতটা তৈরী করে সাইফ হাসান। লিটন সাকিব আল হাসানকে পেছনে ফেলে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড গড়ে ফিরে যান ২৩ রান করে।
এরপর চারে নামা তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে আরেকটি দুর্দান্ত জুটি গড়েন সাইফ। এই জুটিতে আসে ৫৪ রান। টি–টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় ফিফটি করে সাইফ ফিরেছেন ৪৫ বলে ৬১ রান করে। এরপর শামীম হোসেনকে নিয়ে ২৭ বলে ৪৫ রানের ঝড়ো জুটি গড়েন হৃদয়। এখানেই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় শ্রীলঙ্কা। ১৯তম ওভারে জয়ের ১০ রান আগে ফিরেছেন ৩৭ বলে ৫৮ রান করা হৃদয়। এরপর শেষের ওভারের নাটকে জিতে যায় টাইগাররা।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লেতে ৫৩ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। তবে সেটা টেনে নিতে পারেনি। পরের ৬ ওভারে বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে তারা তুলতে পেরেছিল মোটে ৩০ রান। এরপর বাংলাদেশ যখন চেপে বসার নিয়ত করছিল। ঠিক তখনি শানাকার ঝড়ো ব্যাটিং। তাতে শেষ ৫ ওভারে লঙ্কানরা তুলেছে ৫৩ রান।
শ্রীলঙ্কার লড়াকু সংগ্রহের পেছনের কারিগর শানাকা। ৩৮ রানে একবার জীবন পাওয়া শানাকা শেষ পর্যন্ত ৩ চার ও ৬ ছক্কায় ৩৭ বলে ৬৪ রান করে অপরাজিত থাকেন। তাসকিন আহমেদকে শেষ বলে ছক্কা মেরে ইনিংসের ইতি টানলেন শানাকা। এছাড়া কুশল মেন্ডিস করেন ৩৪ রান।
এই ম্যাচে সাকিবের রেকর্ড ছুঁয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ডে সাকিব আল হাসানের পাশে বসলেন এই পেসার। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার উইকেটটি নিয়েই সাকিবের পাশে বসেছেন ম্যাচে ৩ উইকেট নেওয়া মোস্তাফিজ। দুজনেরই উইকেট ১৪৯।
১২ ম্যাচ ও ১০ ইনিংস কম খেলেই সাকিবকে ছুঁয়েছেন মোস্তাফিজ। ১২৯ ম্যাচে ১২৬ ইনিংসে বোলিং করে সাকিব পেয়েছেন ১৪৯ উইকেট। মোস্তাফিজের ১৪৯ উইকেট পেলেন ১১৭ ম্যাচে ১১৬ ইনিংসে। সামনে ছাড়িয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার।
২৪ সেপ্টেম্বর সুপার ফোরে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামবে বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৬৮/৭ (শানাকা ৬৪*, কুশল মেন্ডিস ৩৪, নিশাঙ্কা ২২, আসালাঙ্কা ২১, কুশল পেরেরা ১৬; মোস্তাফিজ ৩/২০, মেহেদী ২/২৫)।
বাংলাদেশ: ১৯.৫ ওভারে ১৬৯/৬ (সাইফ ৬১, হৃদয় ৫৮, লিটন ২৩, শামীম ১৪*; শানাকা ২/২১, হাসারাঙ্গা ২/২২)। ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাইফ হাসান।