রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন

নুরের ওপর হামলার নিন্দা বিভিন্ন দলের

  • সময়: শনিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৫, ১০.২৪ এএম
  • ৯০ জন

রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিত্ব। এর মধ্যে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অন্যতম। তাদের কেউ কেউ এই আক্রমণকে আওয়ামী ষড়যন্ত্রের অংশ বলেও উল্লেখ করেছেন।

শুক্রবার সন্ধ্যায় কাকরাইলে গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাত ৯ টার দিকে বিজয়নগরে গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ের সামনে ব্রিফিং করছিলেন দলটির সভাপতি নুরুল হক নুর। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে অতর্কিত হামলা চালান বলে নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন। এতে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে নুরের অবস্থা মুমূর্ষু বলে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান জানিয়েছেন।

ভিপি নূরের উপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই প্রতিবাদ জানান।

বিএনপির প্রতিক্রিয়া

গণঅধিকার পরিষদের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে দলটির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করায় গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি।

শুক্রবার গভীর রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সকল শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চাকে ব্যাহত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ডকে বিএনপি সমর্থন করে না এবং সুস্থ ধারার রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হামলাকে আমরা নিন্দা জানাই।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল খান গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠান।

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও রাশেদ খানসহ দলটির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান ফখরুল। তিনি আহত নেতাদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বলেন, তাঁদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

এ ছাড়াও এ হামলায় নিন্দা জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী যুবদল ও ছাত্রদল। শুক্রবার রাতে যুবদল সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না ফেসবুক পোস্টে নিন্দা জানাই। নিন্দা জানানো হয়েছে ছাত্রদলের পক্ষ থেকেও।

ফেইসবুক পোস্টে যুবদল সভাপতি জানান, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ গণঅধিকার পরিষদ নেতৃবৃন্দের উপর জাতীয় পার্টির বর্বরোচিত হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

ছাত্রদল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় জাতীয় পার্টি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানসহ অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের সম্মুখসারির নেতৃবৃন্দ ও গণঅভ্যুত্থানের পক্ষশক্তির ওপর এধরণের নৃশংস হামলা অভাবিত! গণঅভ্যুত্থানোত্তোর সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এধরণের অনিয়ন্ত্রিত আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এধরণের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং অবিলম্বে দায়ীদের তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।

জামায়াতের প্রতিক্রিয়া

গণঅধিকার পরিষদের কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে দলটির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করায় গভীর উদ্বেগ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াত। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণঅধিকারের সভাপতি ও অন্যতম জুলাই যোদ্ধা নুরুল হক নুরসহ দলটির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করেছে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টির সন্ত্রাসী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

গোলাম পরওয়ার বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পর এই হামলার ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক, অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত। আমরা একটি গণতান্ত্রিক, শন্তিপূর্ণ ও সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ প্রত্যাশা করি। জাতি যখন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এ ধরনের হামলা ফ্যাসিবাদের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনানুগ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নিশ্চিত করা দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমরা আহতদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি এবং তাদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল তিনি তার ফেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে লেখেন, ‘কন্ঠে আবার লাগা জোর, ফ্যাসিবাদের কবর খোড়। জুলাই যোদ্ধাদের উপর হামলা, মানিনা মানবো না।’

এনসিপির প্রতিক্রিয়া

এনসিপি উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘প্ল্যান-বি হলো জাতীয় পার্টির উপর ভর করে আওয়ামী লীগকে ফেরানো। সেজন্য জাতীয় পার্টির বিষয়ে জিরো টলারেন্সে উত্তরপাড়া-দক্ষিণপাড়া মিলে-মিশে একাকার। নুর ভাইদের উপর বর্বরতম হামলার মূল কারণও এটা। অর্থাৎ জাতীয় পার্টির বিষয়ে স্ট্রং মেসেজ দেওয়া হলো সব দলকে! এমন ঘৃণ্যতর হামলার নিন্দা জানাচ্ছি।’

তিনি আরো লেখেন, ‘আওয়ামী লীগ যেভাবে অপরাধী, তার দোসর, বি টিম এবং বৈধতা দানকারী জাতীয় পার্টিও একইভাবে অপরাধী। জাতীয় পার্টিকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি একই পথের পথিক। তাদের পরিণতিও একই হবে।’

শুরুটা হয়েছিল রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা দিয়ে,যে পরিকল্পনা আমি ১১ মার্চ প্রকাশ করে দিই। সেই প্ল্যান ভেস্তে গেলেও ওরা থামেনি। সেই একই গ্রুপ এবার আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের জন্য বেছে নিয়েছে জাতীয় পার্টিকে।ভারতের প্রত্যক্ষ মদদে জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ব্যাক করানোর এই খেলায় প্রথম রক্ত দিলেন আমাদের নূর ভাই। এখন যদি আমরা নুরুল হক নূরের উপর এই ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদ না করতে পারি, জাতীয় পার্টিকে দিয়ে ফ্যাসিবাদ ফেরানোর এই চেষ্টা প্রতিহত না করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশটাই আবার নূর ভাইয়ের মত রক্তাক্ত হয়ে যাবে।নুরুল হক নূরের রক্ত বৃথা যেতে দেব না।ভারতের প্রেসক্রিপশনে বিপ্লবীদের রক্তাক্ত করে আওয়ামী লীগ ফেরানোর এই চেষ্টা আমরা সফল হতে দেব না।

ইসলামী আন্দোলনের প্রতিবাদ

ইসলামী আন্দোলনের যুগ্মমহাসচিব ও দলীয় মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান শুক্রবার রাতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের সাহসী ও নির্যাতিত নেতা নুরুল হক নুরের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ফ্যাসিবাদ উত্তর এই সময়ে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরের ওপরে এ ধরনের হামলা কোনো যুক্তিতেই মেনে নেওয়া যায় না, সহ্য করা যায় না।

তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর জাতীয় পার্টির বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিলো। সেটা করা হয়নি। এখন জাতীয় পার্টির ইস্যুতে নুরের মতো একজন ফ্যাসিবাদ বিরোধী নেতাকে রাস্তায় লাঠিপেটা করা স্পষ্টত জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নিন্দা

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ভিপি নুরের ওপর এ কাপুরুষোচিত হামলা দেশের স্বাধীনতাকামী ও বাংলাদেশপন্থী জনতার কণ্ঠরোধের নোংরা প্রয়াস। বিশেষত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতায় একটি দলের প্রধানের ওপর এমন হামলা জাতির জন্য গভীরভাবে উদ্বেগজনক এবং ভয়াবহ অশনি সংকেত বহন করছে।

এনসিপির বিক্ষোভ

দলীয়ভাবে তাৎক্ষণিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল করেছে এনসিপি। ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সহযোদ্ধা ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরসহ তার দলের উপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির বর্বর হামলার প্রতিবাদে তারা রাত সাড়ে ১১টায় বাংলামোটর রুপায়ন টাওয়ারের সামনে এ কর্মসূচি পালন করে।

এদিকে রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিত্বের বাইরে ফ্রান্স প্রবাসী সামাজিক ইনফ্লুয়েন্সার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকি ভট্টাচার্যও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান স্ট্যাব্লিশমেন্টের গুরুত্বপূর্ণ এলিমেন্ট জাতীয় পার্টি প্রশ্নে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে নুরুল হক নূরকে রক্তাক্ত করা হয়েছে।’

তিনি আরো লেখেন, ‘আমরা নুরকে নানাভাবে ক্রিটিক করতে পারি। কিন্তু জাপা ও জিএম কাদেরকে বাঁচাতে একজন জুলাইপন্থি রাজনৈতিক নেতার ওপর উত্তর পাড়ার এমন বর্বর হামলা গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা মেনে নিব না। পলাতক লীগকে প্রক্সি দিচ্ছে তাদের দোসর জাতীয় পার্টি। এটি শয়তানের এলিমেন্ট।’

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com