রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৫১ পূর্বাহ্ন

দুই মাসে বাংলাদেশি পোশাকের ক্রয়াদেশ বেড়েছে ৩২ শতাংশ

  • সময়: শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫, ৯.৩৯ এএম
  • ১৯৮ জন

চীনে শ্রমিক সংকট এবং যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কের খড়গ স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলাদেশকে। নয়াদিল্লি, ইসলামাবাদ ও বেইজিং থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন বিদেশি ক্রেতারা। তাদের গন্তব্য এখন লাল-সবুজের পতাকা। এশিয়ার এই তিন দেশসহ বিশ্বের কয়েকটি ভূখণ্ড থেকে তৈরি পোশাকের ক্রেতারা আসছেন ঢাকায়, বাড়ছে ক্রয়াদেশ। ইতোমধ্যে এ পণ্যের রপ্তানি বাজারে আস্থায় ফিরেছেন দেশের রপ্তানিকারকরা। সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে রপ্তানি আয়ে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) ও সরাসরি পোশাক রপ্তানির সঙ্গে জড়িত বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ খাতের নতুন সম্ভাবনার নানা তথ্য। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে নতুন রপ্তানি আদেশ দিতে ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে পোশাকের বিশ্ববাজারের ক্রেতাদের। তাদের এই আগ্রহ অব্যাহত থাকলে সেপ্টেম্বর থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ দ্বিগুণ হবে।

পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, গত দুই মাসে আগের একই সময়ের তুলনায় পোশাকের ক্রয়াদেশ প্রায় ৩২ শতাংশ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই মোট রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধিও ২৫ শতাংশ ছিল। ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, এ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পোশাক রপ্তানি খাতে আয় হয়েছে ৩৯৬ কোটি ডলার, যা মোট রপ্তানির প্রায় ৮৩ শতাংশ।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন রপ্তানি খাতের গতি প্রকৃতি পর্যালোচনা করে আমার দেশকে বলেন, ক্রেতাদের আগ্রহ অনুযায়ী রপ্তানি আদেশ গ্রহণ ও সময়মতো শিপমেন্ট হলে, অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরে মোট রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বা তার চেয়েও বেশি হতে পারে। সেক্ষেত্রে আট মাসেই হয়তো আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা সম্ভব হবে।

তিনি জানান, শুধু তৈরি পোশাকই নয়—চীন ও ভারত থেকে আগে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হতো এমন সব ধরনের পণ্যের ক্রেতারা এখন বাংলাদেশে আসছেন। উদ্যোক্তারা তাদের প্রতিশ্রুতি ঠিক রাখলে এসব ক্রেতা স্থায়ীভাবেই বাংলাদেশে শিফট হতে পারেন। তবে এজন্য দ্রুত বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকট ও বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আমার দেশকে বলেন, ছয় থেকে সাত মাস ধরে চীনের উৎস থেকে পোশাকের ক্রেতারা তাদের আমদানি আদেশ ভারতে সরিয়ে নিচ্ছিলেন। তারা আঁচ করতে পারছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে চীনের বিক্রেতাদের কঠিন সময় পার করতে হবে। কিন্তু হঠাৎ করেই ভারতের ওপর মার্কিন শুল্কহার এই গতিপথ বদলে দিয়েছে। সেই সঙ্গে চীনে পোশাক কারখানায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ সেই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারে।

তিনি আশা করছেন, বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী রপ্তানির সব আদেশ ধরতে পারলে চলতি অর্থবছরেই রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি ৪০-৪৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। তবে ব্যাংকিং খাতসহ কয়েকটি জায়গায় শিল্প বিনিয়োগ ও উৎপাদন প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ব্যাংক এখন পুরোপুরি রিকভারি মোডে আছে, তারা টাকা নেওয়ার জন্য পাগল। কিন্তু যে সমস্যা বছরের পর বছর ধরে ছিল এবং লুটপাট হয়েছে, তা রাতারাতি সমাধান সম্ভব না। ঋণের সুদহার বাড়িয়ে আর ঋণ প্রবাহ কমিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ হবে না। এখনো সেই সঠিক সময় হয়নি যে, একদিনে সব ঠিক করে ফেলা যাবে। সহনীয় নীতির উল্টোপথে চলে যেমন রাজস্ব আদায় সম্ভব না, তেমনি উদ্যোক্তাদের ভয় দেখিয়ে ঋণ আদায় সম্ভব না।

সরকারকে নীতি সহায়তা ও জ্বালানির নিশ্চয়তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিকেএমইএ নেতারা জানান, রপ্তানি খাতের জন্য দ্রুত একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। বিকেএমইএ সভাপতি বলেন, আগামী বছর আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু রপ্তানি আয়ে এখন আমাদের সামনে অপার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে যদি এলডিসি থেকে আমরা বেরিয়ে যাই তবে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে বাড়তি সুবিধা হাতছাড়া হবে। এ নিয়ে আরো বিশ্লেষণ দরকার।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল আমার দেশকে বলেন, সাধারণত জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে তুলনামূলক কম পণ্য রপ্তানি হয়। কিন্তু এবার চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। রপ্তানি আয় যেমন বাড়ছে তেমনি নতুন নতুন রপ্তানি আদেশ আসছে। আগে শুধু বড় বড় ক্রেতা রপ্তানি আদেশ দিলেও, গত এক মাসে পোশাকের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারের জন্য ছোট ছোট ক্রেতা প্রতিষ্ঠানও আদেশ নিয়ে আসছেন। এতে গত মাসে বেশ ভালো রপ্তানি হয়েছে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর মার্কিন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে আমরা দারুণ ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। পাল্টা শুল্কে প্রতিযোগী দেশগুলোর কাছাকাছি থাকার পাশাপাশি চীন ও ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থায় থাকায় আমাদের পণ্যের চাহিদা বাড়ছে।

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাড়তি ক্রয়াদেশ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা দরকার। কোনো অবস্থাতেই মূল্য ছাড়ে পণ্য বিক্রি করলে ক্রেতারা আর সঠিক দাম দিতে চাইবে না। ফলে এখন রপ্তানি আয় ও পরিমাণ বাড়লেও, কয়েক মাসে বা বছর ঘুরতেই এসব প্রতিষ্ঠান উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে ব্যাংক দেনায় জড়িয়ে পড়বে। এজন্যই সরকারকে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা উচিত।

নোমান গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক সিফাত হোসেন ফাহিম বলেন, গত এক মাসে তাদের কারখানাগুলোর রপ্তানি আদেশ বাড়ছে। এটি যে শুধু ভারত থেকে ক্রেতাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া সেটি নাও হতে পারে। এর পেছনে হয়তো বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ সম্ভাবনা এবং শ্রম মানের উন্নয়নের বড় ধরনের উন্নয়ন ইঙ্গিত থেকেই হতে পারে। তবে এটা ঠিক আগে যেসব বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ভারতে কাজ করেছে তারা যোগাযোগ বাড়িয়েছে বেশি।

তিনি আশা করছেন, চলতি অর্থবছর শেষে রপ্তানি আয় ইপিবির নেওয়া টার্গেটও ছাড়িয়ে যাবে। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাড়তি ক্রয়াদেশ নেওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি। তার কারণ, অনেক কারখানাই নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী ব্যাংকে ব্যাক টু ব্যাক ঋণপত্র খুলতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট খাতে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম চালু করেছে। এ ধরনের সহায়তা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রপ্তানিতে নগদ সহায়তা দেওয়ার বিষয়েও সরকারকে পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে। একটি ক্রয়াদেশ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েক মাসের ব্যাপার। হঠাৎ করে নীতি পরিবর্তন হলে উদ্যোক্তারা বিপদে পড়ে।

বড় বাজারে বড় সুযোগ বাংলাদেশের

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে প্রস্তুত পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশ হলোÑ ভিয়েতনাম, চীন, বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, কম্বোডিয়া, পাকিস্তান ও কোরিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কাঠামোর পরিবর্তনের কারণে চীনের হারানো বাজারের অংশ দখল করছে বাংলাদেশ। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত চীনের পোশাক রপ্তানি ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার কমেছে, যা বাংলাদেশের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। একই সময় ভিয়েতনামের রপ্তানি ১ দশমিক ১৯ বিলিয়ন এবং বাংলাদেশের ৮৫০ মিলিয়ন ডলার বেড়েছে।

শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতিমালা বাংলাদেশের পণ্যের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান বাড়িয়েছে। এ বছরের জুনে বাংলাদেশের মার্কেট শেয়ার যুক্তরাষ্ট্রে ১০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ ছিল।

স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম জানান, বসন্ত মৌসুমে আমাদের ৫-১০ শতাংশ অতিরিক্ত অর্ডার এসেছে, আর গ্রীষ্মে ১০-১৫ শতাংশ। ভারত ও চীন থেকে শিফট হওয়া অর্ডার ধরে রাখতে আমরা অতিরিক্ত ওভারটাইমের অনুমতি নিয়েছি।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছে, যা মোট রপ্তানির প্রায় ১৮ শতাংশ। এর মধ্যে ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার এসেছে প্রস্তুত পোশাক খাত থেকে। এতে এটি স্পষ্ট যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি গন্তব্য।

কর্মসংস্থান ও নতুন শিল্প উদ্যোগ

বিভিন্ন কারণে বিগত প্রায় এক দশক অনেক কারখানা বন্ধ ছিল, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও নতুন রপ্তানি আদেশ এসব কারখানা আবার উৎপাদনে ফিরছে। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু জানান, বন্ধ কারখানা চালুর জন্য তারা সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। এছাড়া বড় শিল্প গ্রুপগুলো তাদের বিদ্যমান ইউনিটগুলোর উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি ও তুসুকা গ্রুপের চেয়ারম্যান আমার দেশকে জানান, ‘আমার নিজের পরিচিত কয়েকটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান এতদিন পাকিস্তান ও ভারতের উৎস থেকে পোশাক ক্রয় করতেন। তারা এখন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি কারখানার সঙ্গে কাজও করছে এসব ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এতে আমরা ধরে নিচ্ছি আগামী কয়েক মাসে পোশাক খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থান তৈরি হবে, নতুন অনেক শিল্প উৎপাদন শুরু করবে।’

তিনি জোর দিয়ে বলেন, রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খরচ নিয়ন্ত্রণ, কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন, আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণ ও কাঁচামাল আমদানি সহজতর করা অন্তর্ভুক্ত।

বেশি সাড়া টি-শার্ট রপ্তানিতে

২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে, যুক্তরাষ্ট্রের টি-শার্ট রপ্তানিতে নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস, চীনসহ পরিচিত রপ্তানিকারক দেশগুলোকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। এটি ঐতিহাসিক অর্জন।

যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশনের (ইউএসআইটিসি) তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্র ১১৭টি দেশ থেকে মোট ৩ দশমিক ৫২ বিলিয়নের টি-শার্ট আমদানি করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ৩৭৩ দশমিক ২ মিলিয়ন রপ্তানি করেছে, যা নিকারাগুয়ার ৩৬১ দশমিক ২ মিলিয়নের চেয়ে বেশি।

১৯৮৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৩৬ বছর ধরে, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, হংকং, জামাইকা, মেক্সিকো ও চীন এই বাজার শাসন করছিল। চীন ও হংকং ছাড়া অন্য দেশগুলো আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির কারণে শুল্ক সুবিধা পেয়েছিল। কিন্তু ২০২৫ সালের শুরুতে এই চিত্র পরিবর্তন হয়। এপ্রিলের ২ তারিখ থেকে ট্রাম্প প্রশাসন সব দেশ থেকে আমদানি পণ্যের ওপর কমপক্ষে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে। ফলে আগে শুল্ক সুবিধা পেত নিকারাগুয়া ও হন্ডুরাসকেও যুক্তরাষ্ট্রে টি-শার্ট রপ্তানির জন্য অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হয়।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, শুল্কের চাপ অন্যান্য দেশের রপ্তানি ব্যাহত করেছে, যা বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য স্বর্ণসন্ধানের সুযোগ তৈরি করেছে।

শিল্পে চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি

ইতিবাচক সংকেত থাকা সত্ত্বেও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। মধ্যম ও নিম্নস্তরের অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ঘাটতি—বিশেষ করে গ্যাস নির্ভর পশ্চাৎপদ শিল্পে—প্রধান বাধা। গত বছর ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ হয়েছে—সাভারে ২১৪, গাজীপুরে ৭২, চট্টগ্রামে ২১, নারায়ণগঞ্জে ২৬। এতে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৪২ শ্রমিক বেকার। অর্ডার হ্রাস, ঋণ চুকানোর সমস্যা, কাঁচামাল আমদানি, ব্যাংক লেটার অব ক্রেডিট জটিলতা, উচ্চ সুদের হার ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিই বন্ধের মূল কারণ।

নিটওয়্যার রপ্তানির নতুন বাজার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি এসএম ফজলুল হক। তিনি আমার দেশকে বলেন, ‘পোশাকের ক্রেতাদের সস্তা ও প্রতিযোগিতামূলক দামের সঙ্গে আধুনিক ডিজাইন সব সময় প্রাধান্য থাকে। বিশেষ করে এইচ অ্যান্ড এম, জারা, ইন্ডিটেক্স গ্রুপ, ওয়ালমার্ট, সি অ্যান্ড এ’র মতো প্রতিষ্ঠানগুলো কম দামে আধুনিক মানের পোশাক বাছাই করে। এ ক্ষেত্রে আমাদের অনেক বড় ঘাটতি আছে। এই ঘাটতি নিয়ে কাজ করা দরকার। তা করতে না পারলে এখন যেমন মনে হচ্ছে আমরা রেকর্ডের পর রেকর্ড ছাড়িয়ে যাব, বছর ঘুরতেই দেখা যাবে সেটি হয়তো আর হচ্ছে না। সেই সঙ্গে বর্তমান জ্বালানি সংকট বড় হুমকি হতে পারে নতুন আদেশের জন্য। বহু রপ্তানি আদেশ ধরতে কেউ কেউ আত্মঘাতী হয়ে কম মূল্যের অর্ডার নিতে পারেন। এগুলো সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com