ভোটার তালিকা থেকে ২২ রোহিঙ্গার নাম বাদ দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের অধিকাংশই দিনাজপুর ও নীলফামারীতে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। তারা ভুয়া জন্মদাতা বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রীর নাম ব্যবহার করে জালিয়াতির আশ্রয় এবং শনাক্তকারী কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করেছিলেন বলে প্রমাণ পেয়ে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠান। এ অভিযোগে ইতোমধ্যে তাদের ভোটারদের এনআইডি লকড আছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসির কয়েকটি সূত্র।
ইসি ও এনআইডির কর্মকর্তারা জানান, ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে নীলফামারীতে ১৯ এবং দিনাজপুরে তিনজনসহ মোট ২২ রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছিলেন। গত ১৯ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দিয়েছেন রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভোটার তালিকায় ভুয়া রোহিঙ্গা থাকার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ওয়ার্ড সদস্যদের লিখিত বক্তব্য নেওয়া হয়। এগুলো স্থানীয়ভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। কিন্তু শুনানিতে আসেনি ১৯ ভোটার। এমনকি তাদের দেওয়া ঠিকানায় তদন্ত কমিটি গিয়ে ওই নামে কোনো ব্যক্তির পরিচয় খুঁজে পায়নি।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বাবা-মা হিসেবে যাদের নাম লিখেছিলেন তারাও সংশ্লিষ্টদের চেনেন না। ওই নামে তাদের কোনো সন্তানও নেই। ভোটার তালিকায় ব্যবহৃত পরস্পরের স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ও ভুয়া। এ ছাড়া অভিযুক্ত ১৯ জনের ভোটার নিবন্ধন ফরম-২-এ ব্যবহৃত স্বাক্ষর জাল। আর ভোটার হিসেবে উল্লেখিত ঠিকানাও ভুয়া।
ঠিকানা অনুযায়ী অভিযুক্ত ২২ রোহিঙ্গা হলেন- দিনাজপুরের খোসালপুর গ্রামের মোহাম্মদ জুবায়ের, দরবাজপুরের পারভীন আক্তার, কর্নায় গ্রামের মোহাম্মদ রেজুয়ান, নীলফামারীর পঞ্চপুকুরের আবদুর রহমান, নূর মোহাম্মদ, আবদুর রহিম, মোহাম্মদ শাহ্, মো. এমরান, বেবি আকতার, মো. শরিফ ও শারমিন আকতার, দিগলটারী গ্রামের মো. এরশাদ, জুম্মাপাড়া গ্রামের সহিদুল আমিন, নদীরপাড়ের মো. মোজাফফর হোসেন, মো. রফিক ও নবী হোসাইন, ধড়বাড়ী গ্রামের রাশেদা বেগম, বেড়ারডাঙ্গা গ্রামের ইহসান উল্লাহ, মোহাম্মদ শাকের, মো. কামাল ও সুফাইরা আক্তার এবং গোবিন্দপুর গ্রামের মোহাম্মদ সোহেল।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ আমার দেশকে বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই।’ আর এনআইডির ডিজি ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব এ এস এম হুমায়ুন কবীর আমার দেশকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্পর্কিত তদন্ত প্রতিবেদন আজও আমার দেখা হয়নি। তবে কেউ ভুয়া নাম, পরিচয় ও ঠিকানা ব্যবহার করে ভোটার হয়ে থাকলেও তদন্তে প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়।’
রোহিঙ্গা সংক্রান্ত ডাটাবেজ পাচ্ছে না নির্বাচন কমিশন। এ কারণে এনআইডির সার্ভার ও রোহিঙ্গা ডাটা সার্ভার সমন্বিত করে তথ্য যাচাই করতে পারছে না ইসি। এ কারণে ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো কঠিন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে।