দিন কয়েক ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছিল কালো উইকেটের ছবি। প্রথম দিকে ‘ভুয়া’ বলে মনে হলেও ওই ভুল ভাঙতে দেরি হয়নি। গতকাল গ্যালারি থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল, মিরপুরের উইকেট আসলেই কালো। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট সাধারণত কালো বর্ণের। তবে গতকাল যে রূপ দেখা গেছে, তেমনটা আর কখনই দেখা গেছে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিপক্ষ ড্যারেন স্যামি উইকেট দেখে জানান, এমন উইকেট আগে কখনই দেখেননি তিনি। রহস্যময় এই উইকেটে আজ দুপুর দেড়টায় তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে সমালোচনায় বিদ্ধ হয়ে আছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটারদের নিয়ে নানারকম ব্যঙ্গাত্মক কথাও চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই ফের মাঠে নামতে হচ্ছে মেহেদি হাসান মিরাজের দলকে। ঘরের মাঠে এবার তাদের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর তিন ম্যাচ সিরিজের সবগুলো ওয়ানডেই হবে মিরপুরে। দলের বিপর্যস্ত অবস্থার সঙ্গে মিরপুরে খেলাÑসব মিলিয়ে উইকেট নিয়ে আছে আলোচনা। এর মধ্যেই দেখা মেলে এমন রহস্যময় উইকেটের।
এই উইকেট নিয়ে একটু খোঁজ নিতেই জানা গেছে, উইকেট বানানোর ধরনে পরিবর্তন আনায় বর্ণে এত বদল এসেছে। পাশাপাশি উইকেটের চরিত্র দ্রুতই বদলে যাবেÑএমন সম্ভাবনাও নেই। তবে উইকেট ভালো হবেÑএমনটাও শোনা গেছে মাঠকর্মীদের কাছ থেকে। ২৪ মাস ২২ দিন পর মিরপুরে ওয়ানডে ফেরার ম্যাচের আগে বাংলাদেশ কোচ ফিল সিমন্সের কাছে উইকেট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বলেন, ‘আমার চেয়ে আপনারা উইকেট সম্পর্কে ভালো জানেন। মিরপুরের উইকেট আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়েছে। এখানে কিছু টার্ন থাকে, এটা ভালো উইকেট।’ অন্যদিকে স্যামি বলেন, ‘এমন উইকেট আর কখনই দেখিনি। আমি জানি না কীভাবে ব্যাখ্যা করব।’
উইকেট নিয়ে বিভিন্ন আলোচনার মধ্যে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার মন্ত্র শিষ্যদের মধ্যে বুনে দিতে চান কোচ সিমন্স। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, এর চেয়ে ভালো খেলতে পারি। এভাবে অনুশীলন করেছি যাতে আগামীকাল (আজ) সেরাটা দিতে পারি। আমরা আগামীকালের (আজ) লক্ষ্য ঠিক রাখার চেষ্টা করছি।’ পাশাপাশি ব্যাটিং লাইনআপের ব্যর্থতা নিয়ে বলেন, ‘ব্যাটারদের নিয়ে কাজ করছি কীভাবে (ব্যাটিং বিপর্যয়ে) এ মুহূর্তে তারা খেলতে পারে। তারা জানে এ সময় তাদের কী করতে হবে।’ তবে বোলারদের নিয়ে তার কণ্ঠে ছিল গুণগান। এ নিয়ে সিমন্সের ভাষ্য, ‘আমার কাছে বোলাররা অসাধারণ। শুধু স্পিনার নয়, পেসাররাও।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে হওয়া ব্যর্থতাকে মানসিক আখ্যা দিয়ে অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজের ওপর ভরসা রাখছেন তিনি। তার মতে, দল হারলেও মাঠে ভালো অধিনায়কত্ব করেছেন।
নেপালের কাছে টি-টোয়েন্টি ও ভারতের কাছে টেস্ট সিরিজ হেরে বাংলাদেশে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে সবশেষ ওয়ানডে সিরিজে ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে একদম উড়িয়ে দিয়েছে দলটি। এমনকি বাংলাদেশের মাটিতে সব শেষ সিরিজে তারাই পেয়েছিল জয়ের স্বাদ। অন্যদিকে বাংলাদেশ নিজেদের সব শেষ ওয়ানডে সিরিজে আফগানিস্তানের কাছে হেরে দেশে ফিরেছে। তাতে স্বাগতিকরা মানসিকভাবে খানিকটা পিছিয়ে থাকলেও হালকা করে দেখতে চান না ড্যারেন স্যামি। তার কথায়, ‘স্বাগতিকরা সব সময় ঘরের মাঠে চ্যালেঞ্জ জানায়। আমি নিশ্চিত, অধিনায়কও (শাই হোপ) ব্যাপারটির সঙ্গে একমত। এখানে আমাদের জিততে হলে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে।’
তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের প্রস্তুতি লম্বা সময়ের জন্যই নিচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এরই অংশ হিসেবে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সেটআপের বাইরে থাকা ক্রিকেটাররা নিজেদের প্রস্তুত করেছেন ভারতের চেন্নাইয়ে। অর্থাৎ, স্পিনসহায়ক উইকেটে খেলার প্রস্তুতিটা বেশ ভালোভাবেই নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কোচ ড্যারেন স্যামির দেওয়া এ তথ্যে স্পষ্ট বাংলাদেশকে সহজ প্রতিপক্ষ হিসেবে নেয়নি তারা। বরং চ্যালেঞ্জ উতরে যাওয়ার জন্য নিজেদের সেরাটা দিতে প্রস্তুত হয়েই মাঠে নামবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এখন সেই চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ দল কীভাবে উতরে যেতে পারেÑসেটাই দেখার অপেক্ষা।