চলতি এশিয়া কাপ শুরুর আগে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ভারত ও পাকিস্তান। রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক দ্বন্দ্বে বছরজুড়ে মুখর থাকা দুই দেশের বৈরিতায় হুমকির মুখে পড়ে যায় এশিয়া কাপও। শেষমেশ এশিয়া কাপ মাঠে গড়ালেও পুরো আসরজুড়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। মাঠের লড়াইয়ে টসকাণ্ড, হ্যান্ডশেক বিতর্ক, ম্যাচ রেফারিকাণ্ডে পাকিস্তানের ম্যাচ বয়কটের হুমকিতে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সঙ্গে দর্শকদেরও ব্যতিব্যস্ত অবস্থা। গ্রুপ পর্ব, সুপার ফোর পেরিয়ে আরো একবার দুদলের মহাদ্বৈরথের সাক্ষী হতে যাচ্ছেন দর্শক। এশিয়া কাপের ৪১ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান। বাংলাদেশ সময় আজ রাত সাড়ে ৮টায় দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লড়াইয়ে নামবে সূর্যকুমার যাদব ও সালমান আলী আগার দল।
এবারের এশিয়া কাপের হট ফেভারিট দল হিসেবেই ফাইনালে পা রেখেছে ভারত। ‘এ’ গ্রুপ থেকে পাকিস্তান, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সুপার ফোরে পা রাখে সূর্যকুমারের দল। একই গ্রুপ থেকে ওমান ও আরব আমিরাতকে হারিয়ে সেরা চারে নাম লেখায় পাকিস্তান। দুবাইয়ে হওয়া গ্রুপ পর্বের ম্যাচে পাকিস্তানকে সাত উইকেটে হারায় ভারত। সুপার ফোরের দেখাতেও অভিষেক শর্মার ৩৯ বলে ৭৪ রানের ঝড়ো ইনিংসে সাত বল হাতে রেখে জয়ের স্বাদ পায় ভারত। গ্রুপ ও সুপার ফোর মিলিয়ে পাকিস্তান পেয়েছে চার জয় ও দুই হার। সুপার ফোরে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থেকে ফাইনালে ওঠে পাকিস্তান। সর্বশেষ ২০২২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলে পাকিস্তান। ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে ২৩ রানে হেরেছিল তারা।
ফাইনালের মঞ্চে নিশ্চিতভাবেই যোজন যোজন এগিয়ে ভারত। পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের যে দ্বৈরথের হিসাব ছিল, তা অনেকটাই আকাশ-পাতাল ব্যবধানে নামিয়ে এনেছেন সূর্যকুমারের দল। ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার তো পরিসংখ্যান টেনে সাফ খারিজ করে দিয়েছেন দুই দেশের দ্বৈরথ। তবুও আনুষ্ঠানিকতা বলে কথা। ম্যাচের আগে তাই বাগ্যুদ্ধও জমে উঠেছে। সূর্যর কথায় যতই যুক্তি থাকুক, সেটা পাকিস্তানের ভালো লাগার কথা নয়। দেশটির সাবেকরা তো ইতোমধ্যেই ইউটিউবে তাতিয়ে দিতে শুরু করেছেন সালমান আগাদের। কিন্তু খেলাটা তো হবে মাঠে। যেখানে ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ চারটি টি–টোয়েন্টিতেই পাকিস্তান হেরেছে।
গ্রুপ পর্ব ও সুপার ফোরের লড়াইয়ে ভারতের কাছে হারলেও অতীত ভুলে ফাইনালের দিকে মনোযোগ দিতে চান পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আলী আগা। ভারতকে হারিয়ে দিতে দারুণ আত্মবিশ্বাসী সালমান, ‘খুবই রোমাঞ্চিত (ফাইনাল নিয়ে)। ২০১২ সালের পর পাকিস্তান এশিয়া কাপের শিরোপা জিততে পারেনি। মাঝে দুবার শিরোপা জয়ের সুযোগ এলেও সেগুলো কাজে লাগাতে পারেনি। আবারও শিরোপা জয়ের সুযোগ। এবার আমরা শিরোপা জিতেই দেশে ফিরতে চাই।’
এদিকে টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত করা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স ফাইনালের মঞ্চেও অব্যাহত রাখতে চায় ভারত। দলের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব বলেন, ‘এবার টুর্নামেন্টের ছয় ম্যাচ খেলে সবগুলোই জিতেছি আমরা। পারফরম্যান্সে এই ধারাটা ফাইনালেও অব্যাহত রাখতে চাই। আমাদের মূল লক্ষ্য শিরোপা জয়। দলের সবাই ফাইনাল জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। আমরা রেকর্ড নবম শিরোপা জয়ের জন্যই মাঠে নামব।’
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৮৬, ২০০০, ২০১২ ও ২০১৪ সালে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছিল পাকিস্তান। এর মধ্যে ২০০০ ও ২০১২ সালে শিরোপা জিতেছিল তারা। আর এশিয়া কাপে সবচেয়ে বেশি আটবার শিরোপা জয়ের রেকর্ড ভারতের দখলে। ১৯৮৪, ১৯৮৮, ১৯৯০-৯১, ১৯৯৫, ২০১০, ২০১৬, ২০১৮ ও ২০২৩ সালে শিরোপা জিতেছে টিম ইন্ডিয়া। মোট ১১ বার ফাইনাল খেলে হেরেছে তিনবার। টি-টোয়েন্টিতে সব মিলিয়ে ১৫ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। এর মধ্যে ভারত ১১ বার ও পাকিস্তান তিনবার জিতেছে। একটি ম্যাচ টাই হয়। টাই হওয়া ম্যাচে বল আউটে জয় পায় ভারত। এশিয়া কাপে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সংস্করণ মিলিয়ে ২১ বার দেখা হয়েছে ভারত-পাকিস্তানের। এর মধ্যে ভারত জিতেছে ১২ বার আর পাকিস্তান ছয়বার। তিনটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়।
ক্রিকেটে অতীত, বর্তমান কিংবা ভবিষ্যৎ বলতে কিছু নেই। মাঠের লড়াই চলে ঘটমান বর্তমানে। তাতে ম্যাচের রঙ পাল্টায় প্রতি মুহূর্তে, প্রতি বলের বাঁকে বাঁকে অপেক্ষমাণ উত্তাপ। সেটা যদি হয় ভারত-পাকিস্তান, তাহলে উত্তাপ বেড়ে যায় দ্বিগুণ। এবারের ফাইনালে সেটা কতগুণ হয়, তা-ই দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেট দুনিয়া।