শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২১ অপরাহ্ন

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের চার সুবিধা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

  • সময়: বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১২.০০ পিএম
  • ৮০ জন

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতা ব্যবসায়ীদের চার ধরনের নীতি সুবিধা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সহায়তার আওতায় রয়েছে ঋণ পুনঃতফসিল, পুনর্গঠন, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারজনিত ক্ষতি এবং এককালীন ঋণ পরিশোধে এক্সিট সুবিধা। এসব সুবিধা দেওয়ার ফলে মাত্র দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্টের বিপরীতে ১০ বছরের জন্য খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে। দুবছরের গ্রেস পিরিয়ড ও সংশ্লিষ্ট খাতের সর্বনিম্ন সুদহারের চেয়েও এক শতাংশ কম সুদ নির্ধারণ করা যাবে। এখন থেকে ব্যাংকগুলো নিজেরাই এ সুবিধা দিতে পারবে। ৫০ কোটি টাকার কম ঋণের ক্ষেত্রেও বিশেষ এ সুবিধা কার্যকর করা যাবে।

মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রচলিত নিয়মে কোনো ঋণ খেলাপি হলে গড়ে সর্বনিম্ন আড়াই থেকে সাড়ে চার শতাংশ এককালীন জমা দিয়ে ওই ঋণ নবায়ন করা যায়। নবায়ন করা ঋণ পরিশোধে এক বছর পর্যন্ত বিরতি (গ্রেস পিরিয়ড) ও আট বছর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সুবিধা পাওয়া যায়।

নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৩০ জুন বিরূপ মানে শ্রেণিকৃত ঋণ দুবছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ সর্বোচ্চ ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিল করা যাবে। এক্ষেত্রে দুই শতাংশ নগদ ডাউন্ট পেমেন্ট দিতে হবে। ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে পুনঃতফসিল করা যাবে। এ জন্য আগামী ৩১ ডিসেম্বর মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। আবেদনের ছয় মাসের মধ্যে ব্যাংক থেকে তা নিষ্পত্তি করতে হবে। নীতিসহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় ডাউন পেমেন্ট চেক বা অন্য কোনো ইনস্ট্রুমেন্টের মাধ্যমে দিলে তা নগদায়নের পর হতে ছয় মাস গণনা করতে হবে। ডাউন পেমেন্টের অর্থ ব্যাংকের অনুকূলে নগদায়নের আগে নীতিসহায়তার আবেদন কার্যকর করা যাবে না। ইতঃপূর্বে তিন বা তার বেশি পুনঃতফসিল করা ঋণে অতিরিক্ত এক শতাংশ ডাউন পেমেন্ট আদায় করতে হবে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নীতিসহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তি নিতে হবে না। তবে এ বিষয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ হতে অনুমোদন নিতে হবে। একাধিক ব্যাংক হতে ঋণের বিপরীতে নীতিসহায়তার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ঋণ প্রদানকারী ব্যাংক বা সবার সম্মতিতে নীতিসহায়তার উদ্যোগ ও সভার আয়োজন করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ৩০০ কোটি টাকা বা তার বেশি ঋণ স্থিতির ঋণগ্রহীতাকে নীতিসহায়তার বিষয়ে ব্যাংক থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না হলে আন্তঃব্যাংক সভার কার্যবিবরণী বা পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ‘ব্যবসা ও আর্থিক ব্যবস্থাদি পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গঠিত নীতি সহায়তা-সংক্রান্ত বাছাই কমিটি’ বরাবর আবেদন পাঠাতে হবে।

বিশেষ সুবিধা দেওয়া ঋণের বিপরীতে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে সাধারণ প্রভিশন রাখতে হবে। বিশেষ সুবিধা পাওয়া ঋণ এসএমএ মানে শ্রেণিকরণ করে সাধারণ প্রভিশন রাখতে হবে। প্রকৃত আদায় ছাড়া ব্যাংকের আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। তবে সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য স্থানান্তর করা যাবে। এ ধরনের সুবিধা দেওয়া ঋণে নতুন সুবিধা দেওয়া যাবে। এক্ষেত্রে অতীত লেনদেনসহ সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করতে হবে। আর ২০২২ সালে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আমদানির জন্য বাকিতে খোলা এলসির ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার অপ্রত্যাশিত বিনিময় হারজনিত ক্ষতির মোট পরিমাণ গত বছর জারি করা সার্কুলারের নির্দেশনা অনুযায়ী হিসাবায়ন করতে হবে। কোনো গ্রাহক চাইলে পুনর্গঠন বা এককালীন এক্সিট সুবিধা নিতে পারবে। এক্ষেত্রে এক্সিট সুবিধা পাওয়া যাবে চার বছর, যা আগে ছিল তিন বছর। এছাড়া নিয়মিত ঋণ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এক বছর সময় দেওয়া যাবে। আগে একটি ঋণ পুনর্গঠন করলে মেয়াদের ৫০ শতাংশ সময় বৃদ্ধি করতে পারত ব্যাংকগুলো। এখন ৫০ শতাংশের পাশাপাশি আরো এক বছর সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

জাল-জালিয়াতি বা অন্য কোনো ধরনের প্রতারণা বা অনিয়মের মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণের ক্ষেত্রে এই সার্কুলারে বর্ণিত সুবিধা দেওয়া যাবে না। ব্যাংক থেকে চূড়ান্তভাবে ঘোষিত ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা এই সার্কুলারে বর্ণিত সুবিধাদি পাবে না। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতার ক্ষতির পরিমাণ এবং প্রতিষ্ঠানের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে বিবেচনায় নিয়ে পুনঃতফসিল, পুনর্গঠন বা এক্সিটের মেয়াদকাল নির্ধারণ করতে হবে। মেয়াদকাল নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় উপস্থাপিত স্মারকে এবং সভার কার্যবিবরণীতে সুস্পষ্ট কারণ সুনির্দিষ্টভাবে লিখতে হবে। সুবিধা দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে ব্যাংক ও গ্রাহক সোলেনামার মাধ্যমে চলমান মামলার স্থগিতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পরবর্তীতে কোনো গ্রাহকের দেওয়া সুবিধার কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে তার অনুকূলে প্রদত্ত সব ধরনের সুবিধা বাতিল বলে গণ্য হবে এবং ব্যাংক ঋণ আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিওয়া যাবে।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com