আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলীয় রোডম্যাপ এবং কর্মপন্থা ঠিক করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এক্ষেত্রে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের চলমান দাবি আরো জোরদারের পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি। দাবি আদায়ে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে সমন্বিতভাবে ধাপে ধাপে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে এগোবে তারা।
গতকাল সোমবার দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের জরুরি এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয় জামায়াতে ইসলামী। হার্টের চিকিৎসাজনিত কারণে দীর্ঘ এক মাস বিরতির পর প্রথমবারের মতো দলীয় এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। সকালে রাজধানীর বসুন্ধরায় জামায়াত আমিরের বাসায় এ বৈঠক হয়।
পরে দলের কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। জামায়াত নেতারা জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-কে আইনি ভিত্তি প্রদান এবং তার আলোকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ এবং পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের অন্যতম সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আমার দেশকে বলেন, আমিরে জামায়াত দীর্ঘদিন পর বৈঠক করলেন। অনেক কিছুই তার নলেজে ছিল না। আমরা সবকিছু আলোচনা করেছি। তিনি সবকিছু শুনে দলীয় কর্মপন্থা নিয়ে গাইডলাইন দিয়েছেন।
তিনি বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। একইসঙ্গে আমাদের দলের আমির ও মজলিসে শূরাসহ কেন্দ্রীয় সংগঠনেরও তিন বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ডিসেম্বরে। নির্বাচন নিয়েও আলোচনা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে দলীয় রোডম্যাপ ঠিক করা হয়েছে। অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে দলীয় আমিরসহ জামায়াতের কেন্দ্রীয় সংগঠন নির্বাচনের কার্যক্রমও শেষ করার টার্গেট রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবিতে আমরা শক্ত অবস্থানে আছি। এ বিষয়ে আমরা সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং, সেমিনার প্রভৃতি কর্মসূচি পালন করছি। সামনে পিআরের পক্ষে থাকা সমমনা দলগুলোকে নিয়ে সমন্বিতভাবে আরো শক্তভাবে এগোব। পিআরের পক্ষে আমাদের শক্ত অবস্থান থাকবে।
তিনি জানান, এ বিষয়ে রোববার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি।
এ দিকে ইসলামি ও সমমনা বিভিন্ন দল নিয়ে জোট গঠনের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে জানিয়ে এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময় অব্যাহত আছে। এসব বিষয় নিয়েও নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ডিসেম্বরের আগেই এ বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলে তিনি আভাস দেন। একই সময়ের মধ্যে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।
দলীয় নেতাদের বাইরে কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে জামায়াতের প্রার্থী করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশ ও জাতির কল্যাণে দেশপ্রেমিক ও সক্ষম ব্যক্তিকে প্রার্থী করা হবে। দলের নির্বাচনি ইশতেহার প্রণয়নের কাজও এগোচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
গতকালের নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে জামায়াতের নায়েবে আমির, সেক্রেটারি জেনারেল, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলরাসহ নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।