শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৩ অপরাহ্ন

হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দিতে কনটেন্ট বানাতেন তৌহিদ আফ্রিদি

  • সময়: মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫, ১০.৩৬ এএম
  • ১৫৫ জন

জুলাই আন্দোলনে বিতর্কিত ভূমিকায় ছিলেন ইউটিউবার ও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি। আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডাররা। আর সেই উত্তাল সময়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক কন্টেন্ট ক্রিয়েট করে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক ও ব্লগে প্রচার করেছেন তৌহিদ আফ্রিদি। এসবের মূল লক্ষ্য ছিল হাসিনার হত্যাকাণ্ডের বৈধ্যতা দেওয়া।

আফ্রিদি শুধু নিজে নয়, অন্য অনেক কন্টেন্ট ক্রিয়েটরকে হাসিনার পক্ষে কাজ করতে চাপও দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আফ্রিদির কথায় ভিডিও বানাতে রাজি না হয়ে অনেকে নির্যাতনেরও শিকার হয়েছেন।

শুধু জুলাই আন্দোলনই নয়, অতীতেও বিভিন্ন সময় ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সমর্থন জুগিয়ে কনটেন্ট ক্রিয়েট করেছেন তৌহিদ আফ্রিদি। অভিযোগ রয়েছে, সমালোচিত পুলিশ কর্মকর্তা ডিবির সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে কামিয়েছেন বিপুল অঙ্কের টাকা। এর বেশির ভাগই বিদেশে পাচার করেছেন। এছাড়া আফ্রিদির সঙ্গে যাদের বিরোধ ছিল তাদের ডিবি কার্যালয়ে ডেকে এনে নির্যাতন করাতেন।

জুলাই আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন এই কন্টেন্ট ক্রিয়েটর। তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা অভিযোগও উঠেছে। অনেকেই তৌহিদ আফ্রিদির নির্যাতনের বর্ণনাও দিয়েছেন।

ডেইলি শো উইথ ফকরুল নামে একটি ফেসবুক পেজে অভিযোগ করা হয়েছে, জুলাই আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষে ভিডিও বানাতে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের হুমকি-ধমকি দিয়েছে আফ্রিদি। এক কন্টেন্ট ক্রিয়েটরকে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ভিডিও বানাতে চাপ দেওয়ায় রাজি না হলে তার ওপর নির্যাতন চালানোর অভিযোগও করা হয়েছে।

অবশেষে রোববার রাতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) একটি দল বরিশাল থেকে গ্রেফতার করে তৌহিদ আফ্রিদিকে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যাত্রাবাড়ী থানায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় গ্রেফতার তৌহিদ আফ্রিদিকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ১৭ আগস্ট একই মামলায় রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেফতার হন আফ্রিদির বাবা বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী।

সোমবার আফ্রিদিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলার তদন্তকালে জানা গেছে, এজাহারনামীয় আসামি তৌহিদ আফ্রিদি ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশ ও বিদেশে একজন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তিনি বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাইটিভির পরিচালক হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিগত পতিত সরকারের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ও আজ্ঞাবহ হয়ে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। জুলাই আন্দোলনে স্বৈরাচারীর পক্ষ নিয়ে তিনি সেলিব্রিটি ও অন্যান্য কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের দিয়ে আন্দোলন বন্ধের জন্য প্ররোচিত করেন। যারা তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে তাদের বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন বলে জানা যায়।

রিমান্ড আবেদনে আরও বলা হয়েছে, সরাসরি একজন মিডিয়া সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হিসাবে এবং মাইটিভি চ্যানেলের পরিচালক হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে লাইভ প্রচার করেছেন। তিনি উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে ছাত্র-জনতার দাবিকে উপেক্ষা করে আন্দোলন বিরোধীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ জোগান। তার এমন উসকানিমূলক কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণে ভুক্তভোগী আসাদুল হক বাবু মৃত্যুবরণ করে বলে তদন্তে প্রকাশ পায়।

জানা গেছে, সোমবার দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে আফ্রিদিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়। এ সময় তাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বেলা ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে তাকে নিয়ে এজলাসে পৌঁছায় পুলিশ। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ তার সর্বোচ্চ সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর চেয়ে শুনানি করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। এ সময় তৌহিদ আফ্রিদিকে মিডিয়া সন্ত্রাসী দাবি করে বলেন, এই আসামি লাইভে এসে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের নারকীয় হত্যা করতে উৎসাহিত করেন। তাকে রিমান্ডে নিলে জানা যাবে কারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত, কার কী নির্দেশনা ছিল। তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি। এ সময় মাথা নেড়ে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন আফ্রিদি। মনোযোগসহকারে শুনানি শোনেন।

তৌহিদ আফ্রিদির পক্ষে তার আইনজীবী মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশ, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে মারা যান আসাদুল হক বাবু। তৌহিদ আফ্রিদি আওয়ামী লীগের কেউ নন।

মামলার বাদী এফিডেভিট দিয়ে বলেছেন, ভুল তথ্যে মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে। আসামি জামিন, অব্যাহতি বা খালাস পেলে তার আপত্তি নেই। ঘটনার সঙ্গে তৌহিদ আফ্রিদির সম্পৃক্ততা নেই। রিমান্ডের যৌক্তিকতা নেই। তার রিমান্ড নামঞ্জুর করে জামিনের প্রার্থনা করছি।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলনের সময় ছাত্রদের পক্ষে আফ্রিদির একাধিক পোস্ট আছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে আফ্রিদির বাবা নাসির উদ্দিন সাথীর একটি ছবি দেখিয়ে বলেন, আসামির আলাদা রাজনৈতিক কোনো পরিচয় নেই। তার বাবা ব্যবসায়ী। কোনো রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি নেই। আফ্রিদির কিডনিতে জটিলতা আছে জানিয়ে তাকে আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে আদালতের কাছে অ্যাম্বুলেন্সের সুবিধা চান।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com